টাকা লুটের জন্য হত্যা

ঢাবির সাবেক শিক্ষক সাঈদা খুনে রাজমিস্ত্রি গ্রেপ্তার

| শনিবার , ১৫ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ

গাজীপুরের কশিমপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক সাঈদা গাফফারকে তার নির্মাণাধীন বাড়ির এক নির্মাণ শ্রমিক ‘টাকা লুটের জন্য’ হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। কাশিমপুর থানার এসআই দীপঙ্কর রায় বলেছেন, এ ঘটনায় গ্রেপ্তার রাজমিস্ত্রি মো. আনোয়ারুল ইসলাম প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাঈদাকে ‘শ্বাসরোধে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছেন’। ৭১ বছর বয়সী সাঈদা গাফফার ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। কাশিমপুর থানার দক্ষিণ পানিশাইল এলাকায় একটি তিন তলা ভবনের দোতলায় তিনি ভাড়া থাকতেন। তিনি দুদিন ধরে নিখোঁজ জানিয়ে থানায় জিডি করেছিলেন তার মেয়ে। খবর বিডিনিউজের।
বাসার কাছেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি আবাসিক প্রকল্পে একটি ফ্ল্যাট নির্মাণ করাচ্ছিলেন সাঈদা গাফফার। গ্রেপ্তার আনোয়ার সেখানে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। আনোয়ারুল ইসলাম গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর থানার বুজুর্গ জামালপুর গ্রামের আনসার আলীর ছেলে। বৃহস্পতিবার রাতে সেখান থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যেই শুক্রবার সকালে প্রকল্প এলাকার ঝোপের ভেতর থেকে পুলিশ সাঈদা গফফারের লাশ উদ্ধার করে বলে গাজীপুর মহানগর পুলিশের কোনাবাড়ি জোনের সহকারী কশিনার আবু সায়েম নয়ন জানান।
সাঈদা গাফফার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরে যান ২০১৬ সালে। তার স্বামী প্রয়াত কিবরিয়াউল খালেকও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। তাদের চার সন্তানের মধ্যে দুই মেয়ে থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়। এক মেয়ে ঢাকার উত্তরায় এবং ছেলে মতিঝিলে থাকেন। পানিশাইল এলাকার ওই বাসায় একাই থাকতেন সাঈদা। তিনিই নির্মাণাধীন ফ্ল্যাটের দেখাশোনা
করতেন। সহকারী পুলিশ কশিনার আবু সায়েম নয়ন জানান, গত ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যার পর থেকে পরিবারের লোকজন ফোন করে সাঈদার সাড়া পাচ্ছিল না। পরদিন তার মেয়ে সাহিদা আফরিন এ ব্যাপারে কাশিমপুর থানায় একটি জিডি করেন।
ওই জিডির তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, সাঈদার নির্মাণাধীন ফ্ল্যাটে কাজ শেষে ১১ জানুয়ারি আনোয়ারুলসহ শ্রমিকরা সবাই চলে যায়। পরদিন সকালে অন্যরা কাজে যোগ দিলেও আনোয়ারুল অনুপস্থিত ছিলেন। এরপর পুলিশ তার খোঁজ শুরু করে।
পুলিশ কর্মকর্তা আবু সায়েম নয়ন বলেন, ‘মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে বৃহস্পতিবার রাতে গাইবান্ধা থেকে আটক করা হয় আনোয়ারুলকে। জিজ্ঞাসাবাদে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাসা থেকে দুইশ গজ দূরে ঝোঁপের ভেতর সাঈদার লাশ পাওয়া যায়।’
কাশিমপুর থানার এসআই দীপঙ্কর রায় বলেন, ১১ জানুয়ারি বিকালে ফ্ল্যাটের কাজ শেষে নির্মাণ সামগ্রী ও মালপত্র কেনার টাকা নিয়ে প্রকল্প এলাকা থেকে ফিরছিলেন সাঈদা গাফ্‌ফার। জিজ্ঞাসাবাদে আনোয়ারুল স্বীকার করেছে, ওই সময় সে প্রকল্প এলাকার ভেতরে নির্জন জায়গায় অধ্যাপক সাঈদার সঙ্গে থাকা টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। সাঈদা চিৎকার করলে গলার ওড়না চেপে ধরে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করে সে। পরে তার সঙ্গে থাকা টাকা ছিনিয়ে নিয়ে রাতেই গাইবান্ধায় পালিয়ে যায়।
তবে সাঈদার কাছ থেকে কত টাকা আনোয়ারুল লুট করেছিলেন, সেই টাকা উদ্ধার হয়েছে কি না, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি পুলিশ।
শুক্রবার সকালে সাঈদার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে এসআই দীপঙ্কর জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআন্তর্জাতিক কিডনি ও লিভার পাচার চক্রের শেকড় চট্টগ্রামে!
পরবর্তী নিবন্ধগৃহকর্মী সেজে তথ্য সংগ্রহ এরপর সংঘবদ্ধ চুরি