ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরানো যায়নি ১৫ বছরেও

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৯ জুন, ২০২২ at ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ

মাত্র ২০ হাজার মানুষকে পুনর্বাসন করতে পারলে পাহাড় ধসে প্রাণহানি ঠেকানো সম্ভব। কিন্তু গত ১৫ বছরে প্রায় আড়াইশ মানুষ মারা গেলেও চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরানো সম্ভব হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নগরীর পাহাড়গুলোতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী মানুষগুলোকে সরিয়ে নেয়া হলে শুধু জীবন নয়, একই সাথে পাহাড়ও রক্ষা পাবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানাভাবে উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হলেও তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বর্ষায় ভারী বর্ষণে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। পাহাড় ধসে মানুষ মারা যাওয়ার পর প্রশাসন নড়েচড়ে বসলেও শেষ পর্যন্ত পাহাড়ের পরিস্থিতি একই থাকে। কয়েক বছর আগেও চট্টগ্রামে দুই শতাধিক পাহাড় ছিল। কিন্তু নানাভাবে পাহাড় কাটা চলছে। এতে জড়িত প্রভাবশালীরা। পাহাড় কেটে প্লট বিক্রি করা হয়, বসতি গড়ে তোলা হয়। বর্তমানে নগরীতে ৬৫টির মতো পাহাড় রয়েছে জানিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর মধ্যে ২৮টি পাহাড় ঝুঁকিপূর্ণ। ২৮টির মধ্যে ১৭টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাস করে ৮৩৫ পরিবার। এই ১৭ পাহাড়ের মধ্যে ব্যক্তি মালিকানাধীন ১০ পাহাড়ে অবৈধভাবে বাস করছে ৫৩১ পরিবার। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মালিকানাধীন ৭ পাহাড়ে বাস করছে ৩০৪ পরিবার। এর বাইরে বিভিন্ন পাহাড়ের পাদদেশে এবং ঢালুতে ঘর তৈরি করে অবৈধভাবে বসবাস করে নিম্নআয়ের মানুষ। নগরীতে সব মিলিয়ে ২০ হাজার মানুষ পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করে।
সূত্রে জানা গেছে, নগরীর বাটালী হিল, মতিঝর্ণা, আকবরশাহ, হিল-১, হিল-২ ও বায়েজিদ লিংক রোড সংলগ্ন পাহাড়, ফয়’স লেক সংলগ্ন ১ নম্বর ঝিল, ২ নম্বর ঝিল, ৩ নম্বর ঝিল, আমিন জুট মিলসহ সন্নিহিত এলাকার পাহাড়গুলোতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করে মানুষ। ঘর তৈরির জন্য এমনভাবে পাহাড় কাটা হয়, তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। ভারী বর্ষণ হলেই পাহাড়গুলো ধসে পড়ে।

জানা যায়, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করা মানুষগুলো তাদের ঘরের মালিক নয়। স্বল্প ভাড়ায় তারা সেখানে বসবাসের সুযোগ পায়। পাহাড়ে অবৈধভাবে গড়ে তোলা প্রতিটি বস্তি কোনো না কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রিত। যারা নিয়মিত ভাড়া আদায় করে। এই চক্রটির কারণে প্রশাসন চেষ্টা করেও পাহাড়ের বসতি বন্ধ করতে পারছে না।

চট্টগ্রামে ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে ২০০৭ সালে। ওই বছরের ১১ জুন সাত স্থানে পাহাড় ধসে প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দেয়। প্রাণহানি ঘটে ১২৭ জনের। এরপর গত ১৫ বছরে চট্টগ্রামে প্রায় প্রতি বছরই পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছে ২৪৩ জন।

২০০৭ সালে পাহাড় ধসের ঘটনার পর তিনটি তদন্ত কমিটি ৭২টি সুপারিশ করে। গত ১৫ বছরে তার অধিকাংশই বাস্তবায়িত হয়নি। পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে নেয়া হয়নি কার্যকর পদক্ষেপ।

তাই বর্ষা শুরু হতেই পাহাড় নিয়ে মানুষের দুশ্চিন্তা বাড়ে। দুশ্চিন্তা হ্রাসে পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে গত ২৭ মার্চ পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৩তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, রেলওয়েসহ সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থাগুলো ১৫ এপ্রিলের মধ্যে পাহাড়ে থাকা অবৈধ স্থাপনাগুলোর তালিকা দেবে। এরপর রোজার ঈদের পর পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

কিন্তু সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাহাড়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়নি। তালিকা না পাওয়ায় তখন অভিযান পরিচালনা করা হয়নি বলে জানায় প্রশাসন। এর মধ্যে গত শুক্রবার পাহাড় ধসে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। সঠিক সময় ব্যবস্থা নিলে এই দুর্ঘটনা ঘটত না, বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন আজাদীকে বলেন, সেবা সংস্থাগুলো তালিকা দেয়নি। তাই এতদিন অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। সামনে মিটিং রয়েছে। সেখানে তাদের বক্তব্য জানতে চাওয়া হবে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোমিনুর রহমান বলেন, শুক্রবার থেকে আমরা মাইকিং করে সবাইকে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে আসার নির্দেশনা দিই। আমরা ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করি। কিন্তু জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সাড়া না দিয়ে কিছু মানুষ গোপনে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে থেকে যায়। রাতে পাহাড় ধসের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনিজের জীবন দিয়ে মা বাঁচিয়ে গেলেন জমজ সন্তানকে
পরবর্তী নিবন্ধআবার পাহাড় ধস, ৪ মৃত্যু