জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি : চাপে পড়বে জনজীবন

| শনিবার , ৬ নভেম্বর, ২০২১ at ৯:০৩ পূর্বাহ্ণ

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির মধ্যে বাড়ানো হলো জ্বালানি তেলের দাম। বুধবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলা হয়, রাত ১২টার পর থেকেই বাড়তি দাম কার্যকর হবে। এই সিদ্ধান্তের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিকে কারণ দেখানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার শুধু ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য প্রতি লিটার ভোক্তা পর্যায়ে ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা পুনর্নির্ধারণ করেছে।
৪ নভেম্বর দৈনিক আজাদীতে ‘ডিজেল-কেরোসিনের দাম বাড়ল লিটারে ১৫ টাকা’ শীর্ষক সংবাদে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য ক্রমবর্ধমান। বিশ্ববাজারে ঊর্ধ্বগতির কারণে পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ জ্বালানি তেলের মূল্য নিয়মিত সমন্বয় করছে। ভারতে গত ১ নভেম্বর তারিখে ডিজেলের বাজার মূল্য প্রতি লিটার ১২৪.৪১ টাকা বা ১০১.৫৬ রুপি ছিল, অথচ বাংলাদেশে ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটার ৬৫ টাকা অর্থাৎ লিটার প্রতি ৫৯.৪১ টাকা কম।
পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন বর্তমানে ক্রয়মূল্যের চেয়ে ডিজেল লিটার প্রতি ১৩ টাকা এবং ফার্নেস অয়েল লিটার প্রতি ৬ টাকা কমে বিক্রি করায় প্রতিদিন প্রায় ২০ কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে বলে দাবি করছে সরকার। অক্টোবর ২০২১ মাসে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন বিভিন্ন গ্রেডের পেট্রোলিয়াম পণ্য বর্তমান মূল্যে সরবরাহ করায় মোট ৭২৬.৭১ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।
করোনাভাইরাসের কারণে সমগ্র বিশ্ব যখন বিপর্যস্ত, অর্থনীতি যখন থমকে গিয়েছিল, তখন তার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছিল বাংলাদেশেও। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের আয়ের ওপরও এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন, অনেকের ব্যবসাও বন্ধ হয়েছে। ফলে আয় কমে এসেছে দেশের একটি বড় অংশের মানুষের। এমন পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো অত্যন্ত অমানবিক সিদ্ধান্ত। জ্বালানি তেলের এই দামের প্রভাব সাধারণ মানুষের ওপর বিপর্যয় নেমে আসবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে করে পরিবহন ও কৃষি ব্যয় বাড়বে, প্রভাব পড়তে পারে বিদ্যুতের দামেও; সবমিলিয়ে চাপ বাড়বে সাধারণ মানুষের।
দেশে নতুন দরিদ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে কেরোসিন ও ডিজেলের দাম বাড়ানো ভোক্তাসাধারণের ওপর অমানবিক চাপ সৃষ্টি করবে বলে মনে করে ভোক্তা অধিকার সংস্থা কনশাস কনজ্যুমার্স সোসাইটি (সিসিএস)। এজন্য দাম বৃদ্ধি নয়, যথাসম্ভব কমিয়ে এনে পরিবহন ভাড়া, পণ্য ও সেবামূল্য সহনীয় পর্যায়ে আনার দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি। বিবৃতিতে বলা হয়, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে শুধু ওই পণ্যটির মূল্য ওঠা-নামা করে না, এর সঙ্গে পরিবহন ভাড়া, বিদ্যুৎ, পানি, জ্বালানি ব্যবহার করে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য এবং সেবার মূল্যও বেড়ে যায়। ফলে সরকার একটি পণ্যের মূল্য বাড়ালেও ভোক্তাকে বহু পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির ভার সইতে হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে যা ভোক্তা সাধারণের নাভিশ্বাস সৃষ্টি করবে। জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ফলে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় দেশীয় পণ্য রপ্তানি প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে।
সিসিএস মনে করে, দাম বৃদ্ধির বিজ্ঞপ্তিতে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধি এবং ভর্তুকি কমানোর যে কারণ দেখানো হয়েছে তা একেবারেই অযৌক্তিক। গত প্রায় ৮ বছর আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম ছিল। অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি মাত্র ৪০ ডলারে নেমে এসেছিল। কিন্তু তখন দেশে তেলের দাম কমানো হয়নি। প্রতিবেশী অনেক দেশেই জ্বালানি তেলের দাম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমানো হয়েছিল। কিন্তু দেশের বাজারে না কমিয়ে সরকার বিপুল অর্থ লাভ করেছে। ফলে দেশীয় তেলের বাজার আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তুলনা করা অযৌক্তিক।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার খেসারত সাধারণ মানুষ কিংবা ভোক্তাকেই দিতে হবে। তাদেরকে আনুপাতিক হারের চেয়েও বেশি দামে পণ্য কিনতে হবে এবং সেবা নিতে হবে, যা আসলে জীবনযাত্রার ব্যয় অত্যধিক বৃদ্ধি ঘটাবে।
বিশেষজ্ঞদের অনেকে এমনও মনে করছেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের যে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা, তা সাময়িক। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তেলের দাম আবার কমে আসতে পারে। তাই আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে হুট করে দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো সমীচীন নয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে