জিএসপি প্লাস পেতে ‘মানবাধিকার সুরক্ষাকে মুখ্য’ বলছে ইইউ

| বুধবার , ২০ জুলাই, ২০২২ at ৬:০১ পূর্বাহ্ণ

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর ইউরোপে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা জিএসপি প্লাস পেতে বাংলাদেশকে শ্রমিক অধিকারের পাশাপাশি অন্যান্য মানবাধিকার সুরক্ষার শর্তকে কেন্দ্রে রাখার কথা বলেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার নিয়ে উদ্বেগের কথাও বলেছে বাংলাদেশ সফরে আসা ইউরোপীয় পার্লামেন্টের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিটির এ প্রতিনিধিদল। খবর বিডিনিউজের।

গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রতিনিধিদলের প্রধান ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট হেইডি হাউটালা বলেন, মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের গুরুতর উদ্বেগ রয়েছে এবং আমরা দেখতে চাইব মানবাধিকারের মৌলক আন্তর্জাতিক রীতিগুলোর সঙ্গে হাতে হাত ধরে যাচ্ছে জিএসপি প্লাস সুবিধায় উত্তরণ। ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত ‘ডিক্যাব টকে’ বক্তব্য দেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দুই সদস্য হাউটালা ও মাক্সিমিলিয়ান ক্রাহ। সংলাপে তাদের উদ্বেগের কথা পৃথকভাবে উল্লেখ করেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য হাউটালা। বাংলাদেশের শ্রম অধিকার ও মানবাধিকার পরিস্থিতি মূল্যায়নে সোমবার ঢাকায় এসেছে ছয় সদস্যের এ প্রতিনিধিদল।

মঙ্গলবার দলটি এসব বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ানের সঙ্গে বৈঠক করে। তারা সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। ডিক্যাব টকে হাউটালা বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম শূন্যের কোটায় নামানো, গতবছর সরকারের ঘোষিত শ্রম অধিকার রোডম্যাপ বাস্তবায়ন, শ্রম আইনের সংশোধনী পাস এবং রপ্তানি প্রক্রিয়াজাত এলাকাগুলোতে (ইপিজেড) ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দেওয়ার আইন পাস করতে হবে।
আমরা বিশ্বাস করি, শুধু মৌলিক মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেখানোর মাধ্যমেই শ্রমিকদের অধিকারের পর্যাপ্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব। সুতরাং শ্রম অধিকার হচ্ছে মৌলিক মানবাধিকার, দুটোকে আলাদা করা যায় না। বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে নিজের মত তুলে ধরে হাউটালা বলেন, আমি নাগরিক সমাজের স্বাধীন মতপ্রকাশের পর্যাপ্ত জায়গা তৈরির উপর জোর দিতে চাই এবং বিচারবহির্ভূত আটক ও গুমের মত উদ্বেগজনক পরিস্থিতির প্রতি আমরা গভীর মনোযোগ দিই।

এই মুহূর্তের পরিস্থিতি জিএসপি প্লাসের অধীনে থাকা মানবাধিকারের মৌলিক ভিত্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ কারণে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছু অংশ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর এর ভীতিকর প্রভাব নিয়ে নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে এটা প্রয়োগের বিষয়ে। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নে অস্ত্র ছাড়া সবকিছু (এবিএ) রপ্তানি স্কিমের আওতায় বর্তমানে ইউরোপের বাজারে শুল্কমুক্ত সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশ, যা জিএসপি নামে পরিচিত। ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ হলে এ সুবিধা পাবে না বাংলাদেশ। তখন জিএসপি প্লাসের আওতায় শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় যাবে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে ২০২৪ সাল থেকে নতুন জিএসপি প্লাস স্কিম চালু নিয়ে কাজ করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

বাংলাদেশের রপ্তানি গন্তব্যের মধ্যে অঞ্চল হিসেবে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়ে থাকে ইইউতে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে সংশোধনের আশ্বাস আইনমন্ত্রী প্রতিনিধিদলকে দিয়েছেন জানিয়ে হাউটালা সংলাপে বলেন, এতে আমরা খুশী। আমরা চাই এটার বাস্তবায়ন হোক। অনুষ্ঠানে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য ও বাণিজ্য বিষয়ক র‌্যাপোর্টিয়ার মাক্সিমিলিয়ান ক্রাহও সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডিক্যাব সভাপতি রেজাউল করিম লোটাস।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআরাকান সড়ক থেকে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ
পরবর্তী নিবন্ধবাঁশখালীতে জোড়া খুন মামলার প্রধান আসামি বাকলিয়া থেকে গ্রেপ্তার