চট্টগ্রামে আবার সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে জামায়াত–শিবির। এ লক্ষ্যে তারা জনশক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। জামায়াত–শিবিরের এমন একটি পরিকল্পনা গত সোমবার রাতে কোতোয়ালী থানা পুলিশ ভেস্তে দিয়েছে। বৈঠকস্থল বঙিরহাটের আল বয়ান রেস্তোরাঁ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ৪৯ নেতাকর্মীকে। তাদেরকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। সিএমপির সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালী জোন) মুজাহিদুল ইসলাম গতকাল আজাদীকে জানান, কোতোয়ালী থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা মামলায় ৪৯ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে।
পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকার পর নানা কৌশলে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে জামায়াত। শীর্ষ নেতারা প্রকাশ্যে না এসে সংগঠনের কর্মী–সমর্থকদের দিয়ে ঘর গোছানোর কাজ করছেন। প্রকাশ্যে মিছিল–মিটিং না করলেও ধর্মীয় অনুষ্ঠান, হোটেল রেস্তোরাঁয় গোপন বৈঠক করে কর্মী–সমর্থকদের উজ্জীবিত করার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে তাদের রোল বা নীতি কী হবে সে বিষয়ে তালিম দিচ্ছেন। নগরীর ওই রেস্তোরাঁয় অভিযানে গ্রেপ্তার ৪৯ জনের মধ্যে ৯ জন জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন পদে থাকা সক্রিয় নেতা বলে জানিয়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তার বাকি ৪০ জনের মধ্যে অর্থ যোগানদাতা এবং সক্রিয় কর্মী–সমর্থক রয়েছেন।
হঠাৎ কেন এ গোপন বৈঠক? জানতে চাইলে কোতোয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবীর আজাদীকে বলেন, কয়েক বছর ধরে আড়ালে থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করলেও সম্প্রতি দুটো ইস্যু নিয়ে তারা আজ (মঙ্গলবার) সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৫টার যেকোনো সময়ে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টকে টার্গেট করে নাশকতামূলক হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল। ইস্যু দুটোর একটি হলো জঙ্গি অর্থায়ন এবং দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টে কাজ করছে এমন ১১৬ ধর্মীয় বক্তার একটি তালিকা দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জমা দিয়েছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। এটার পাশাপাশি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকেও তারা ইস্যু বানিয়ে রাস্তায় নামার চেষ্টা করেছিল।
গোপন বৈঠকের কথা পুলিশ কীভাবে জেনেছে জানতে চাইলে কোতোয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার মুজাহিদুল ইসলাম জানান, বৈঠক চলাকালে একটি ভিডিও ফুটেজ পুলিশের কাছে চলে আসে। সেই ভিডিও ফুটেজ দেখে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই হোটেল ঘিরে ফেলে। এ সময় ৪৯ জনকে আটক করা হয়। সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় আরো অন্তত ১৫ জন। এদের মধ্যে আছেন টেরীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল মনছুর (জামায়াত–শিবিরকে নিয়মিত অর্থ সাহায্য করেন), জামায়াতের কোতোয়ালী থানা শাখার আমির ফরিদুল আলম (৪৭), বায়তুল মাল সম্পাদক মো. নুরুল কবির (৬৫), কোতোয়ালী থানা দক্ষিণের দপ্তর সম্পাদক এমদাদ উল্লাহ (৩৪), সদস্য ফরিদ উদ্দিন (৪৪), কোতোয়ালী থানার অন্তর্গত বঙিরহাট ইউনিটের সম্পাদক সাইফুদ্দীন খালেদ (৩৫), টেরীবাজার ইউনিটের সভাপতি হুমায়ুন কবির (৫০), টেরীবাজার ইউনিট কাটা পাহাড় শাখার সভাপতি রাশেদুল করিম রাশেদ (৩৪), সহসভাপতি হাফেজ মো. তাজুল ইসলাম (৩৮) এবং টেরীবাজার ইউনিট ইমাম ম্যানসন শাখার সভাপতি মো. ইসরাফিল (৫০)।