জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে চট্টগ্রাম দল যেন ছিল এতিমের মত

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শনিবার , ১৮ মার্চ, ২০২৩ at ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের ক্রিকেট কিংবা অণ্য কোন ইভেন্ট, একটি শব্দ বেশ প্রচলিত। তা হচ্ছে কন্ট্রাক্টর। অর্থাঃ বেশিরভাগ ক্লাবের কর্মকর্তারা দল পরিচালনা করেনা। দল পরিচালনা করে এমন একজন যাকে তাদের ভাষায় বলা হয় কন্ট্রাক্টর। খেলোয়াড় যোগাড় করা থেকে শুরু করে দল পরিচালনা সব কিছুই ঐ কন্ট্রাক্টর করে। ক্লাবের কর্মকর্তারা কেবল কিছু টাকা ঐ কন্ট্রাক্টরের হাতে দিয়ে দায় সারেন। অবশ্য সব ক্লাব যে এই কাজ করে তা কিন্তু না। তবে বেশিরভাগ ক্লাবই এই কাজটি করে। আর কন্ট্রাক্টর শব্দটা সেই ক্লাব কর্তারাই আবিষ্কার করেছে। এবারের জাতীয় ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপে চট্টগ্রাম জেলা দল ও যে সে কন্ট্রাক্টরের হাতে ছিল। দলের সাথে ছিলনা কোন ম্যানেজার। জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্রিকেট কমিটি বিশাল। প্রিমিয়ার, প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বিভাগ মিলে অনেক ক্লাব। কিন্তু জেলা দলের সাথে যাওয়ার মত একজন ম্যানেজার পেলনা দেশের সেরা এই ক্রীড়া সংস্থা। ফলে কোচ মাসুম উদ দৌলাকে কোচ কাম ম্যানেজার করেই নাকি পাঠানো হয়। এরকম অভিভাবকহীন একটি দলের ফল যেমন হওয়া উচিত তাই হয়েছে।

সিজেকেএস ক্রিকেট কমিটির সম্পাদক আবদুল হান্নান আকবর জানিয়েছেন, অনেককেই নাকি বলা হয়েছে। কিন্তু কেউই যেতে চায়নি। এরকম একটি জাতীয় পর্যায়ের ক্রিকেটে দলের কোচ কারো সাথে কথা বলে একটি সিদ্ধান্ত নেবে সে সুযোগও ছিলনা চট্টগ্রাম দলে। তার উপর চট্টগ্রাম লিগের দল গুলো ক্রিকেটার ছাড়েনি, কিংবা ঢাকায় খেলা ক্রিকেটাররা খেলতে চায়নি এমন অজুহাততো রয়েছেই। তবে একাধিক সিনিয়র ক্রিকেটার এবং ক্রিকেট কর্মকর্তা জানিয়েছেন জেলার কাছে ক্রিকেটারদের কোন দামই নেই। তাদের সাথে ভাল একটু আচরণও করা হয়না। পত্রকার মাধ্যমে একটি দল ডেকে দিল। একদিনের মধ্যে বলা হয় তোমরা চলে যাও। কিছু টাকা ধরিয়ে দেওয়া হয় হাতে। আর এমনটাই চলে আসছে জেলা দলের ক্ষেত্রে। দলের কর্মকর্তারা ক্রিকেটারদের সাথে বসা , একটা পরিকল্পনা করা কিংবা প্রতিপক্ষ কেমন সে সব নিয়ে আলোচনা কখনোই করনা হয়নি। ভাবখানা এমন কোনভাবে চলে যেতে পারলেই হলো। ফল দিয়ে আর কি হবে।

এদিকে ক্রিকেটাররা অভিযোগ করেছে জেলা ক্রীড়া সংস্থা নিজেরাতো ক্রিকেটারদের একটা টাকা দেয়না উল্টো ক্রিকেট বোর্ড যে টাকা দেয় সেটাও কেটে নেয়। তেমন ঘটনা অবশ্য সব সময়ই ঘটে আসছে। এবারে যেমন ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি এবং ডিএ দিয়েছে ক্রিকেট বোর্ড। ম্যাচ ফি মূল একাদশ এবং একাদশের বাইরে থাকা ক্রিকেটারদের জন্য ভিন্ন। তাই ক্রিকেটাররা সব ম্যাচ ফি এক করে সবাই সমানভাগে ভাগ করে নিয়েছে। কিন্তু ডি এর বেলায় অভিযোগ করেছে যে, ক্রিকেট বোর্ড থেকে ৮০০ টাকা করে ডি এ দেওয়া হলেও জেলা ক্রিড়া সংস্থা ডি এ দিয়েছে ৬০০ টাকা করে। যা ক্রিকেটারদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করে। তবে সিজেকেএস ক্রিকেট সম্পাদক আবদুল হান্নান আকবর বলেছেন ক্রিকেটারদের ডিএ, গাড়ি ভাড়া, হোটেল ভাড়া মিলিয়ে যে টাকা দিয়েছে ক্রিকেট বোর্ড সেটা দিয়ে তাদের হয়না। তাই টাকা গুলো কোচের হাতে দিয়ে বলা হয়েছে ডি এ ৬০০ টাকা করে দিয়ে কোনমতে টুর্নামেন্টটা চালিয়ে আসতে। চট্টগ্রামে ফিরলে তাদের বাকি টাকা দিয়ে দেওয়া হবে হিসেব করে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন যেহেতু তাড়াহুড়ো করে দল পাঠাতে হয়, আর বাজেট এবং মিটিং ছাড়া টাকা তোলা যায়না তাই যা পাওয়া যায় তাই দিয়ে দল পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ম্যাচ শেষে চট্টগ্রাম জেলা দলের একজন ক্রিকেটার যখন শোনেন তার প্রতিপক্ষ ক্রিকেটার ৮০০ টাকা ডিএ পেয়েছে আর তারা পেয়েছে ৬০০ টাকা, তখন কবে বাকিটা পাবে সেটা ভাবার মানসিকতা থাকেনা তাদের।

ক্রিকেট সম্পাদক আরো বলেন ক্রিকেটারদের টিএ কিংবা ডিএ বেশি হলে নাকি তা অন্য ইভেন্টের খেলোয়াড় কর্মকর্তারা প্রশ্ন তোলেন। ক্রিকেটে বেশি কেন আর অন্য ইভেন্টে কম কেন। কিন্তু ক্রিকেটের টাকাতো দেয় বিসিবি। এসব ছোট ছোট বিষয় গুলো বুঝতে পারেননা চট্টগ্রামের কর্মকর্তারা। কিন্তু তারা অনেক বড় বড় কাজ করেন। আর সেটা মাঠের বাইরে। মাঠের খেলোয়াড়দের জন্য কিছু করতে গেলে তাদের নানা আইন কানুন দেখতে হয়। গতকাল যেমন জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়া একাধিক সাবেক ক্রিকেটার বললেন সিজেকেএস এ দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা তাদের ক্লাবের জন্য অনেক কিছু করতে পারেন। কিন্তু জেলার জন্য কিছু করতে পারেননা। দেশের অন্য জেলা গুলো বিসিবির দেওয়া টাকায় শিরোপা জেতে আর চট্টগ্রাম প্রথম রউন্ড থেকে বিদায় নেয় লজ্জার সাথে। জেলা দলের একাধিক ক্রিকেটার জানিয়েছেন তাদের প্রতিপক্ষ ছিল যেসব দল সে সব দলের ক্রিকেটারদের জেলার পক্ষ থেকে আলাদা করে ম্যাচ ফি দেওয়া হয়েছে। তাই তারা দ্বিগুন উৎসাহে খেলে। তবে সিজেকেএস ক্রিকেট সম্পাদক বললেন সে সব জেলায় লিগ হয়না। তাদের জন্য সবচাইতে বড় এই টুর্নামেন্ট। তাই তারা এখানে ভাল করে। এ কথা বলে কি বুঝাতে চাইলেন তিনি সেটা তিনিই ভাল বলতে পারবেন। তবে তাদের যে জেলার প্রতি কোন দরদ নেই সেটা পরিষ্কার হয়ে গেছে তাদের আচার আচরণে। নাহয় কেন বারবার এভাবে খালি হাতে ফিরতে হবে। এভাবে অভিভাবকহীন দল নিয়ে আর যাই হোক সফলতা আশা করা যায়না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদ্বিতীয় দিন শেষে পদক তালিকার শীর্ষে আনসার
পরবর্তী নিবন্ধশাকিবের সঙ্গে ছেলের ছবি দিয়ে যা জানালেন বুবলী