জনস্বাস্থ্যের হুমকির জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন

| বৃহস্পতিবার , ১৯ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৫:২৭ পূর্বাহ্ণ

আমাদের দেশে প্রায় ৯৮ শতাংশ ওষুধ তৈরি হয় এবং প্রায় ৬৩টি দেশে তা রপ্তানি করা হচ্ছে। তবু ভেজাল, নকল ও মানহীন ওষুধে বাজার সয়লাব। আবার অবৈধ ও মেয়াদউত্তীর্ণ ওষুধ সমানে বিক্রি হচ্ছে বাজারে। ফলে রোগ নিরাময়ের আশায় ওষুধ কিনতে গিয়েও মানুষের মনে নানা সংশয় কাজ করে। ওষুধ ভালো না মন্দ, নকল না আসল, তা যাচাই করার ক্ষমতা সাধারণ মানুষের নেই।

গতকাল দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত হয়েছে ‘হাজারী গলিতে ৪০ লাখ টাকার ওষুধ জব্দ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন। এতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামে পাইকারি ওষুধের সবচেয়ে বড় বাজার নগরীর হাজারী গলিতে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ ওষুধ জব্দ করা হয়েছে। এসব ওষুধের দাম প্রায় ৪০ লাখ টাকা। ছবিলা কমপ্লেক্স নামে একটি ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলার দুটি গুদাম থেকে ওষুধগুলো জব্দ করা হয়। এছাড়া ফিজিশিয়ানস স্যাম্পল রাখার দায়ে তিন ফার্মেসিকে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে অভিযান পরিচালনাকারী টিম। ফার্মেসি তিনটি হচ্ছে সততা ফার্মেসি, নিয়ামত শাহ ফার্মেসি ও ক্যাল ফার্মা। গত মঙ্গলবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত ও আব্দুল্লাহ আল মামুন এই অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক শাখাওয়াত হোসেন আকন্দ রাজু এবং কোতোয়ালী থানা পুলিশের একটি টিম উপস্থিত ছিল। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত বলেন, অভিযান পরিচালনার সময় অবৈধ ওষুধের গোডাউনগুলোর মালিককে পাওয়া যায়নি। তাদের সম্পর্কে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। পরে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। থানা পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভবনের মালিক গোডাউন দুটি তালাবদ্ধ করে রেখেছেন।

ওষুধের সঠিক মানের সঙ্গে মানুষের জীবন মরণের প্রশ্ন জড়িত। যারা ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ সরবরাহ ও বিক্রি করে তারা কোনভাবেই ওই ওষুধ খেয়ে কোন রোগীর মৃত্যুর দায় এড়াতে পারে না। ভেজালমুক্ত ও মান সম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে সরকার সব সময় কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে আমরা জানি।

ওষুধ (নকল বা ভেজাল ওষুধ) যদি জীবন রক্ষার পরিবর্তে জীবন হরণের কারণ হয়, তাহলে তা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। তাই নকল বা ভেজাল ওষুধের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর বিকল্প নেই। যারা মানহীন ও ভেজাল ওষুধ তৈরি করে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধের বিষয়ে কোনো ধরনের আপস করা যাবে না। এ রকম অভিযান যে মাঝে মধ্যে চালানো হয় না, তা নয়। অভিযানকালে কিছু নকল বা ভেজাল ওষুধ জব্দ করা হয়, আটক করা হয় এর সঙ্গে জড়িতদের। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ওরা আবার বের হয়ে পুরনো কাজই করতে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। উল্লেখ করতে পারি, ভেজাল ওষুধ নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করে থাকে ওষুধ প্রশাসন। ওষুধ প্রশাসনের অনেক ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে, যাতে কেউ নকল ওষুধ তৈরি ও বাজারজাত করতে না পারে। ওষুধ ভেজালকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, দ্বিতীয়তযাবজ্জীবন কারাদণ্ড, তৃতীয়ত১৪ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট ১৯৭২এ এ ধরনের শাস্তি রয়েছে।

দেশে বিভিন্ন সময় পরিচালিত অভিযানে নকল ও ভেজাল ওষুধ উৎপাদনকারীদের গ্রেফতার করলেও বন্ধ হচ্ছে না এর উৎপাদন ও বিক্রি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘ওষুধ হচ্ছে জীবন রক্ষাকারী দ্রব্য। মেয়াদ শেষ হলে তা বিষ হিসেবে গণ্য হবে। অন্যদিকে অবৈধ ওষুধ মানেই অবৈধ। মেয়াদ আছে কি নেই তা দেখার আর প্রয়োজন নেই। জেলা প্রশাসনের অভিযানে আসলে তেমন একটা কাজ হয় না। কাজ করতে হবে ওষুধ প্রশাসনকে। দুঃখের বিষয়, তাদের তেমন তৎপরতা দেখা যায় না। ওষুধের দোকানগুলোকে লাইসেন্স দেয় এই প্রতিষ্ঠান। তাদের তৎপরতা থাকে না বলে এমন নৈরাজ্য চলছে।’ তাঁরা বলছেন, দুর্বল আইনের কারণে নকল ওষুধ তৈরিতে ভয় পায় না তারা। নকল ও ভেজাল ওষুধ উৎপাদন ও বিপণনে জড়িতরা গণহত্যার মতো অপরাধ করছে। এ গণহত্যা এখনই থামাতে হবে। জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক হুমকির জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি বদলাবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে