জনদুর্ভোগ লাঘবে নিবিড় মনোযোগ আবশ্যক

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী | শনিবার , ৯ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:৪৮ পূর্বাহ্ণ

এটি সকলের জানা দেশের জনসংখ্যার প্রায় নব্বই শতাংশের অধিক ইসলাম ধর্মাবলম্বী। পবিত্র ইসলামে পাঁচটি মৌলিক স্তম্ভের তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে রমজান। এই রমজান মাসে মহান স্রষ্টার পক্ষ থেকে নাজিল হয়েছে সামগ্রিক জীবন বিধানের প্রকৃষ্ট নির্যাস পবিত্র কুরআন মাজিদ। মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে বিশালতা ও গুরুত্বের দিক থেকে এই মাসের তাৎপর্য ব্যাপক। পুরো মাস মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ধার্মিক মুসলমান সংযম সাধন-শুদ্ধাচার সমৃদ্ধিকরণ এবং পরিশুদ্ধ জীবনযাপনের নবতর ব্রত গ্রহণ করে থাকেন। দরিদ্র-হতদরিদ্র, নিম্ন-মধ্য-উচ্চবিত্তসহ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল মুসলিমদের কাছে এই রমজান মাস ব্যতিক্রম বৈশিষ্ট্যে গ্রহণযোগ্য। পাঁচওয়াক্ত নামাজ আদায়-তারাবি-ইফতার-সেহরি ইত্যকার কর্মযজ্ঞগুলো পুরো মাসটিকে অতিশয় প্রভাবিত করে। ত্যাগ-তিতিক্ষা-আত্মসংযম ও বিভিন্ন ইবাদত বন্দেগির উপহারস্বরূপ প্রদত্ত হয়েছে ঈদ-উল-ফিতর। অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্যের উন্মেষে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এই উৎসব হয়ে উঠে সর্বজনীন-সৌহার্দ-সম্প্রীতি-আনন্দ-উল্লাসের অনবদ্য দৃষ্টান্ত।
যথার্থ মূল্যায়নে রমজান শুরুর দীর্ঘ সময় পূর্বেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বিশেষ করে রমজান মাসে প্রচলিত অতি প্রিয় দ্রব্য সামগ্রীর ক্রয়-বিক্রয়-সরবরাহ-বিতরণ অবাধ ও সহনীয় মূল্য নির্ধারণে সরকার সকল সময় সক্রিয়-সজাগ থাকে। বিভিন্ন তদারকি-বাজার-দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ-অস্বাভাবিক বিপর্যস্ততা সৃষ্টির উৎসমূহকে কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়। এত কিছুর মধ্যেও দুর্বৃত্তায়নের নির্মম-নিষ্ঠুর দানবরূপী হিংস্র অর্থ-মুনাফালোভী মানুষগুলোর অরাজক পরিস্থিতি তৈরি পরিপূর্ণভাবে দমন অপরিমেয় দুরূহ রূপ পরিগ্রহ করে। সার্বিক বিবেচনায় চলমান সময়েও কোন বিপরীত চিত্র বা অধিক অর্থ উপার্জনের কদর্য চরিত্রগুলোর মানবিক রূপান্তর নজরে আসছে না। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ন্যূনতম খাদ্য-পানীয় গ্রহণ না করে মানুষ ইফতারের সময় রোজা ভঙ্গ করে সুপেয় পানি বা শরবত জাতীয় কিছু পান করে। ইফতার সমাগ্রী, খাবার দাবার, সেহরি তৈরি, ব্যবসা বাণিজ্য প্রভৃতি কাজে গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ অপরিহার্য অনুষঙ্গ। বর্তমানে এসবের অপ্রতুলতা ও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের কষ্ট-যন্ত্রণা-ক্ষোভ-অভিমান নাভিশ্বাসে পরিগণিত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে বিশ্বে বাড়ছে পানির চাহিদা। পাশাপাশি নানামুখী অপচয় ও হস্তক্ষেপের কারণে অনেক স্থানে সুপেয় পানির উৎস সংকুচিত-দূষিত-ধ্বংস হচ্ছে। ফলে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিচ্ছে। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে এই সমস্যা সব থেকে বেশি। ওই এলাকায় গড় হিসেবে ২৫২ জনের জন্য একটি নলকূপ থাকলেও অনেক এলাকায় নলকূপের অস্তিত্ব নেই। তাদেরকে পুকুর বা অন্য জলাশয়ের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এসব এলাকায় সিডর, আইলা ও আম্ফানের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনেক জলাশয় নষ্ট হয়ে সুপেয় পানির সংকট বৃদ্ধি পায়। একাধিক গবেষণা সূত্রমতে খুলনা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুরসহ উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ সুপেয় পানির দুঃসহ সংকটে পড়েছে। জলবায়ুর প্রভাবে সবখানেই লবণজলের আগ্রাসন। উপকূলের মানুষকে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে গিয়ে পানি কিনে আনতে হয়। বিশুদ্ধ যাচাই-বাছাই তো দূরের কথা, কোনোমতে খাওয়া যায় এমন খাবার পানি জোগাড় করতেই উপকূলের নারীদের দিন পার হয়ে যায়। এই দৃশ্য এখন আর প্রান্তিক জনপদে সীমাবদ্ধ নয়। শহর-নগর থেকে শুরু করে দেশের সমগ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ-উপরিস্থলে পানির অপ্রতুলতা নতুন এক অনভিপ্রেত বার্তা প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
গণমাধ্যম সূত্রমতে এশিয়ার বৃহত্তম গ্যাসকূপ বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ডে মেরামতের কারণে ৬টি কূপে সাময়িক গ্যাস উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। এতে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ কম হওয়ায় গ্যাস স্বল্পতা চরম প্রকরণ ধারণ করেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উর্ধ্বগতির এই সময়ে ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এই গ্যাস সংকট। সরেজমিন দেখা যায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস না থাকায় বাসিন্দারা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। অনেক এলাকায় গ্যাস থাকলেও চাপ খুবই কম। গ্যাস না থাকায় ইফতার সামগ্রীসহ অন্যান্য খাবার তৈরি করতে পারছে না সাধারণ মানুষ। বাসায় রান্না করতে না পেরে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফুটপাত-নিম্নমানের রেস্তোরা থেকে যেনতেনভাবে তৈরি খাবার খেতে হচ্ছে। অনেক এলাকার লোকজন রান্নার বিকল্প উপায় হিসেবে মাটির চুলা, স্টোভ, সিলিন্ডার গ্যাস চুলায় রান্না করছে। এছাড়াও এলপিজি সিলিন্ডারের আরেক দফা দাম বাড়ায় সাধারণ গ্রাহকরা নতুন করে ভোগান্তিতে নিপতিত। খুচরা দোকানে সংকট না থাকলেও বিক্রি হচ্ছে না সরকারের বেঁধে দেওয়া দরে। ফলে সাধারণ গ্রাহকদের নাজেহাল হতে হচ্ছে।
বর্তমান সময়ে গ্যাস ও সুপেয় পানি সমতুল্য জনদুর্ভোগের সর্বোচ্চ সংকট হচ্ছে বায়ুদূষণ। ২০১৯ সালের মার্চে প্রকাশিত পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন মতে ইটভাটা, যানবাহনের কালো ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলো হচ্ছে ঢাকার বায়ু দূষণের প্রধান ৩টি উৎস। ঢাকার বায়ু দূষণের জন্য ইটভাটার ধোঁয়া দায়ী ৫৮ শতাংশ। বাকি ৪২ শতাংশের জন্য দায়ী নির্মাণ-মেরামত কাজের ধুলা এবং মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জন দূষিত বাতাসে শ্বাস নেন এবং নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে বায়ু দূষণের কারণে প্রতি বছর আনুমানিক ৭০ লাখ লোকের অকাল মৃত্যু ঘটে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে চুলার আগুনের দহন হৃদযন্তের রোগ-স্ট্রোক-ফুসফুসের ক্যানসার ও শ্বাসতন্ত্র সংক্রমণে প্রধান কারণ।
২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর শিকাগো ইউনিভার্সিটির এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট প্রকাশিত ‘এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বায়ু দূষণের কারণে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু কমেছে প্রায় পাঁচ বছর চার মাস। শুধু ঢাকায় কমেছে প্রায় সাত বছর সাত মাস। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২ বছর ৮ মাস হলেও লাইফ ইনডেক্সের গবেষণা মতে ১৯৯৮ সালে বায়ু দূষণের কারণে গড় আয়ু কমেছিল প্রায় দুই বছর আট মাস এবং ২০১৯ সালে কমে পাঁচ বছর চার মাস। সারা দেশের ৬৪টি জেলার প্রত্যেকটিতেই বায়ু দূষণের হার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালার চেয়ে অন্তত তিন গুন বেশি বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। দেশের দূষিত শহরগুলোর মধ্যে বেশি অবস্থিত খুলনা ও রাজশাহী বিভাগে। আর পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম) ২.৫ বেশি রয়েছে যথাক্রমে নারায়ণগঞ্জ, যশোর, রাজশাহী, খুলনা, পাবনা, ঢাকা ও গাজীপুরে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বায়ু দূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি হয় শ্বাসতন্ত্রের রোগ। এর মধ্যে হাঁপানি, ফুসফুসের কাশি ছাড়াও লাং ক্যানসার ও কিডনির সমস্যা প্রকট।
সম্প্রতি বিখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট প্ল্যানেটরি হেলথ জার্নাল’ এ প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বায়ুদূষণের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে গর্ভপাতের সংখ্যা বাড়ছে। নির্দিষ্ট সময়ের আগে সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন অনেক মা। সেসব শিশুর ওজনও স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই কম। গবেষক দলের প্রতিনিধি অধ্যাপক টাও জুয়ে বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার এসব জায়গায় বায়ুদূষণের ফলে গর্ভপাতের ঘটনাও সবচেয়ে বেশি। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশের বাতাসে পিএম ২.৫ এর পরিমাণ অত্যন্ত বেশি যা নিঃশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসের একেবারে গভীরে গিয়ে খুব সহজেই রক্তে মিশে যায়। ফলে হৃদরোগ ও ফুসফুসের রোগের ঝুঁকি বাড়ে। এ ধরণের দূষিত কণা হবু মায়েদের জীবনে মারাত্মক বিপদ ডেকে আনে। পিএম ২.৫ তাদের প্লাসেন্টা ছেদ করে গর্ভপাত ঘটায়।
সামগ্রিক পেক্ষাপটে ৪ এপ্রিল ‘বিশ্বপানি দিবস-২০২২’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা পানির অপচয় বন্ধ করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিপুল পানি সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে দেশবাসী কখনোই নিরাপদ পানির সংকটে পড়বে না বরং বিশ্বে নিরাপদ পানি সরবরাহ করতে পারব।’ যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বৃষ্টি ও বন্যার পানি সংরক্ষণের পাশাপাশি জলাধার নির্মাণ- এই দুটি বিষয় বিবেচনা করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমাতে নদীর পানি বিশুদ্ধ করে জনগণের কাছে নিরাপদ পানি সরবরাহ এবং সেচকাজে ভূপৃষ্ঠের পানি ব্যবহারসহ নানা পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করছে। তিনি গৃহস্থালি, সেচসহ সব কাজে পানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার অনুরোধ জানান। তাঁর সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য নিরাপদ স্যানিটেশন ও বিশুদ্ধ পানীয় জল নিশ্চিত করে জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি-৬ বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয় সম্পর্কে অবহিত করেন।
দেশের সর্বত্রই প্রচণ্ড যানজটে জনমানুষের শুধু অসহায়ত্ব পরিলক্ষিত হচ্ছে না, শ্রম ঘন্টা-জ্বালানি-দাহ্য শক্তির ভয়াবহ অপচয় কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। দূষিত পানির প্রবাহে-ব্যবহারে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মারাত্মক ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাবে জনমন ভীষণ আক্রান্ত-আশঙ্কিত। এছাড়াও চাঁদাবাজি, ছিনতাই, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু, খুন, দফায় দফায় মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা কঠিন পরিস্থিতিতে জনজীবন ওষ্ঠাগত। শিল্প কারখানায় বেতন পরিশোধ-চাহিদার তুলনায় আয় বৈষম্য নানা কারণে সড়ক অবরোধ-হত্যা-আত্মহত্যা-চুরি-ডাকাতি-রাহাজানির ভয়ঙ্কর দৃশ্যপট প্রতিনিয়ত জনগণ প্রত্যক্ষ করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিঘ্ন ঘটিয়ে অশুভ অন্ধকারের শক্তির অসাধু ব্যক্তিরা এ সুযোগে হরেক রকম অপরাধ সংঘটনে ব্যতিব্যস্ত। পরাজিত অপশক্তি দেশের উন্নয়ন অগ্রগতিতে যারপরনাই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। বিভিন্ন ছদ্মবেশে-ছলচাতুরীর অপকৌশলে হিংস্র নাগ-নাগিনীর কদর্য পদচারণা সর্বত্রই দৃশ্যমান। তাদের বেপরোয়া অভিপ্রায় প্রকাশ-দুর্নীতি-জোচ্চুরি-স্বজনপ্রীতি-অনিয়ম কর্মকাণ্ডে অর্থ উপার্জন-পাচার-দেশ বিধ্বংসী কর্মকান্ড রোধ করার কোন প্রয়াসই কার্যকর হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। জনশ্রুতি মতে অনৈতিক-অবাঞ্ছিত পন্থায় মুখোশ পাল্টে তদবির-লবিং বাণিজ্যের আড়ালে পদ-পদবী-পদক দখলে নিয়ে কথিত হাইব্রীড-অনুপ্রবেশকারীদের অসংলগ্ন-অসংযত কার্যকলাপ-দুর্বৃত্তায়নের পিছনে উৎসশক্তি-পৃষ্ঠপোষকতা প্রবল পরাক্রমশীল। ম্যানেজ অপসংস্কৃতি পরিচর্যায় পারদর্শী-পারঙ্গম এসব জঘন্য প্রকৃতির অনুঘটকদের কোন অপকর্মই নীতি নির্ধারকদের দৃষ্টিগোচর হওয়ার ন্যূনতম ধারণাও অনুমেয় হচ্ছে না। বিপরীতে এসব অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের স্তব্ধ-কন্ঠরোধ করার উদ্দেশ্যে কথিত সংস্থা সমূহের অবৈধ লেনদেন-যোগসাজসে সৎ-যোগ্য ব্যক্তিদের নানাভাবে হয়রানি-ফাঁসিয়ে দেওয়ার উদাহারণও কম নয়।
স্মরণযোগ্য যে দুঃসময়ের ত্যাগী-পরীক্ষিত নেতা কর্মীদের কোণঠাসা করে অবমূল্যায়নের ধারাবাহিকতা শুধু পাপ নয়; মহাপাপও বটে। প্রকৃত আদর্শিক ব্যক্তির সততা-দক্ষতা-সত্যবাদিতা-সত্যনিষ্ঠতা অবশ্যই নৈর্ব্যক্তিক-বস্তনিষ্ঠ মানদন্ডে নির্ধারণ করতে হবে। অন্যথায় বিভ্রান্তির দোলাচলে সময়ের বিবর্তনে আবির্ভূত বিপুল সংখ্যক পাকিস্তানি হায়েনা-মোস্তাক গংদের দেশ ধ্বংসের বেড়াজাল দেশকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলতে পারে। মনে রাখতে হবে মুক্তির মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে সুদূরপ্রসারী বহু কর্মযজ্ঞ এখনও অসমাপ্ত রয়ে গেছে। প্রাসঙ্গিক পরিক্রমায় দেশপ্রেমিক শক্তির সমন্বয় এবং দেশোদ্ধারে সত্য-ন্যায়ের কাঠিন্যে আধুনিক-যুগোপযোগী উন্নয়নে দেশকে অগ্রভাগে অপরাজিত রেখে লাল-সবুজের পতাকার গৌরবকে সমুজ্জ্বল রাখতেই হবে। সকল প্রকার জনদুর্ভোগ লাঘবে সর্বোচ্চ মেধা-প্রজ্ঞা-জ্ঞান-বিজ্ঞানভিত্তিক পর্যাপ্ত মনোযোগ দেশবাসী-সময়ের যৌক্তিক দাবিকে অবশ্যই মর্যাদাসীন করতে হবে – দেশবাসীর মতো আমারও এটুকুই ক্ষুদ্র প্রত্যাশা।

লেখক: শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহল্যান্ড থেকে
পরবর্তী নিবন্ধসল্টগোলায় বাস-সিএনজি সংঘর্ষে আহত ৫