জঁ ফ্রেদেরিক জোলিও-ক্যুরি : নোবেল বিজয়ী পদার্থবিদ

| রবিবার , ১৪ আগস্ট, ২০২২ at ৬:০১ পূর্বাহ্ণ

জঁ ফ্রেদেরিক জোলিও-ক্যুরি ফরাসী পদার্থবিদ। তিনি এবং তার স্ত্রী ইরেন জোলিও-ক্যুরি যৌথভাবে কৃত্রিম তেজস্ক্রিয় পদার্থ আবিষ্কারের ফলে রসায়নশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ১৯০০ সালের ১৯ মার্চ তিনি জন্মগ্রহণ করেন। জন্মকালীন সময়ে তার নাম ছিল জঁ ফ্রেদেরিক জোলিও। ফ্রান্সের প্যারিসে জন্মগ্রহণকারী জোলিও ‘একোলে সুপারিয়ার দ্য ফিজিক এট দ্য চিমি ইন্ডাস্ট্রিলেজ দ্য লা ভিলে দ্য প্যারিস’ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ১৯২৫ সালে রেডিয়াম ইনস্টিটিউটে বিখ্যাত মহিলা বিজ্ঞানী মেরি ক্যুরি’র সহকারী হিসেবে কাজ করেন। একপর্যায়ে জোলিও তার কন্যা ইরেন ক্যুরিকে ভালবেসে ফেলেন।

১৯২৬ সালের ৪ অক্টোবর প্যারিসে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। উভয়েই তাদের গোত্র নাম পরিবর্তন করে জোলিও-ক্যুরি রাখেন। তিনি দ্বিতীয় ব্যাকালরেট ডিপ্লোমাধারী জোলিও তেজস্ক্রিয় উপাদানের উপর অভিসন্দর্ভ রচনা করে ডি.এসসি লাভ করেন। জোলিও তার জীবনের শেষদিকে অরসেতে পরমাণু পদার্থবিদ্যা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় মনোনিবেশ করেন। সেখানেই তার সন্তনেরা উচ্চ শিক্ষালাভ করেন। প্যারিস বিজ্ঞান অনুষদে প্রভাষক থাকাকালীন তিনি স্ত্রীর সাথে পরমাণুর গঠন সম্পর্কীয় গবেষণায় মনোনিবেশ করেন। গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার ফলাফলস্বরূপ ১৯৩২ সালে জেমস চ্যাডউইক কর্তৃক নিউট্রন আবিস্কৃত হয়।

১৯৩৫ সালে জোলিও-ক্যুরি দম্পতি রসায়নশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কারের দরুন তাদের এ মূল্যায়ন করা হয়। এর ফলে স্বল্পকালীন সময়ের জন্যে বোরন, ম্যাগনেসিয়াম এবং অ্যালুমিনিয়াম সহযোগে আলফা উপাদান থেকে রেডিওআইসোটোপ তৈরী করা সম্ভবপর হয়। ১৯৪০ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতেই নাজি আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে জোলিও-ক্যুরি নিজস্ব নথিপত্র সংরক্ষণ করতে সমর্থ হন। ঐ নথিপত্রগুলো পরবর্তীকালে হ্যান্স ভন হেলবেন এবং লিউ কোয়ারস্কি’র মাধ্যমে ইংল্যান্ডে প্রেরণ করেন। ফ্রান্স দখলের ফলে তিনি ফরাসী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্রিয় সদস্যরূপে ন্যাশনাল ফ্রন্টে যোগ দেন।

কলিন্স এবং লাপিঁয়েরে তাদের ইজ প্যারিস বার্নিং? গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, আগস্ট, ১৯৪৪ সালে ফরাসী উত্থানের সময় তিনি পুলিশের পুনর্গঠন ও অধিকারিত্ব অর্জনে ভিয়াচেস্লাভ মলোতভের সম্মানে ককটেল পার্টির আয়োজন করেছেন যা জার্মান ট্যাঙ্ক মোকাবেলায় অধিকতর উপযোগী ও সক্ষমতা প্রদর্শন করবে। ঐ সময়ে যুদ্ধের অনেকগুলো কীর্তির মধ্যে এটি ছিল একটি। ফরাসী বিজ্ঞান একাডেমিসহ চিকিৎসা একাডেমির সদস্য ছিলেন তিনি। নেপোলিয়ন বোনাপার্ট কর্তৃক প্রবর্তিত লেজিওঁ দনর এর কমান্ডার শ্রেণীতে সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। এছাড়াও, বিশ্ব শান্তি পরিষদের সভাপতি থাকা অবস্থায় ১৯৫১ সালে স্ট্যালিন শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন। জোলিও ১৯৫৮ সালের ১৪ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। জোলিও মৃত্যুর পর তাঁর সম্মানার্থে বিশ্ব শান্তি পরিষদ তাদের প্রবর্তিত শান্তি পদকের নাম পরিবর্তিত করে ১৯৫৯ সালে জোলিও-ক্যুরি পুরস্কার রাখা হয়। এ পদকটি বিশ্ব শান্তি পরিষদের সর্বোচ্চ সম্মাননা স্বর্ণপদক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপঁচাত্তরের মতো আর কোনো ষড়যন্ত্র হতে দেয়া হবে না
পরবর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধু