ছাত্রলীগের সংঘাতে বন্ধ চমেক

দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, হল ছেড়েছে শিক্ষার্থীরা তদন্ত কমিটি, থানায় এক পক্ষের মামলা

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৩১ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:১৪ পূর্বাহ্ণ

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দু গ্রুপের মারামারির ঘটনায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সংঘর্ষে জড়ানো দুই গ্রুপের এক পক্ষ সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও অপর পক্ষ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। ঘটনার পরপর গতকাল শনিবার সন্ধ্যার মধ্যেই শিক্ষার্থীদের হল (হোস্টেল) ছাড়ার নির্দেশ দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা হল ছাড়লে সন্ধ্যা ৭টার দিকে সবকয়টি হল তালাবদ্ধ করে দেয়া হয়। মারামারির ঘটনায় দু গ্রুপের তিনজন শিক্ষার্থী আহত হয়। এর মাঝে মাহাদী জে আকিব (২১) নামে এক শিক্ষার্থীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। এমবিবিএস ২য় বর্ষের ওই শিক্ষার্থী শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। আর মাহফুজুল হক (২৩) ও নাইমুল ইসলাম (২০) নামে আহত অপর দুই শিক্ষার্থী সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী। এ ঘটনায় ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে চমেক কর্তৃপক্ষ। এ তথ্য নিশ্চিত করে চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সাহেনা আক্তার আজাদীকে বলেন, সার্জারি বিভাগের প্রফেসর ডা. মতিউর রহমানকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেব। তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মুখেশ কুমার দত্ত, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আরিফুর রহমান, হোস্টেল কমিটির চেয়ারম্যান ডা. মিজানুর রহমান চৌধুরী ও ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রিজোয়ান রেহান।
এদিকে, এ ঘটনায় নওফেল অনুসারী হিসেবে পরিচিত তৌফিকুর রহমান নামের এক শিক্ষার্থী বাদি হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি লিখিত এজাহার দিয়েছেন। তাতে ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ১০/১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। এজাহারের সত্যতা নিশ্চিত করে সেটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানান পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির। তদন্তের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান ওসি।
ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে : সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার রাত ১১টার দিকে মেডিকেল কলেজের প্রধান ছাত্রাবাসে ঘটনার সূত্রপাত। সেখানে আ জ ম নাছির উদ্দীন ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারীদের মাঝে কথা কাটাকাটির জের ধরে মারামারির ঘটনা ঘটে। এসময় আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী দুজন কর্মীকে শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেলের অনুসারীরা মারধর করে বলে অভিযোগ ওঠে। পরে পুলিশ ও শিক্ষকরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। বিষয়টি সমাধানে দুগ্রুপের ৫ জন করে প্রতিনিধি নিয়ে শনিবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে বৈঠকে বসেন চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সাহেনা আক্তার। অধ্যক্ষের কক্ষে ডাকা বৈঠকে সিনিয়র শিক্ষকরাও উপস্থিত ছিলেন। পরে বেলা ১০টার পর ওই বৈঠকের মাঝেই দ্বিতীয় দফা মারামারির খবর আসে। মেডিকেল কলেজের মূল গেট সংলগ্ন এলাকায় নওফেল অনুসারী হিসেবে পরিচিত মাহাদি জে আকিবকে আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীরা মারধর করে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। খবর শুনে দুই গ্রুপই বৈঠক থেকে বের হয়ে যায়। এসময় ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। ক্যাম্পাস জুড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ ঘটনার পরপরই একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভা আহ্বান করে চমেক কর্তৃপক্ষ। চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সাহেনা আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাউন্সিলে অনির্দিষ্ট কালের জন্য কলেজ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একই সাথে হল (হোস্টেল) বন্ধেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে শনিবার (গতকাল) সন্ধ্যার মধ্যেই শিক্ষার্থীদের হোস্টেল ছাড়ার নির্দেশনা দেয় চমেক প্রশাসন।
সিদ্ধান্তের তথ্য নিশ্চিত করে চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সাহেনা আক্তার বলেন, শুক্রবার রাতের ঘটনাটি সমাধানের লক্ষ্যে দুগ্রুপের ৫ জন করে প্রতিনিধি নিয়ে আমরা বসেছিলাম। কিন্তু ওই বৈঠকের মাঝেই আবারো মারামারির খবর আসে। পরে একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় জরুরিভাবে কলেজ ও হোস্টেল বন্ধের এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব শিক্ষার্থী হল ছেড়ে গেছে এবং সবকয়টি হল তালাবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে বলেও জানান চমেক অধ্যক্ষ।
উল্লেখ্য, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এর আগেও কয়েক দফায় সংঘর্ষে জড়ায় সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী ছাত্রলীগের বিবদমান দুগ্রুপ। সংঘর্ষের জের ধরে এর আগেও কলেজ এবং হোস্টেল বন্ধ ঘোষণা করতে হয়। এছাড়াও সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচলাইশ থানায় পাল্টাপাল্টি বেশ কয়েকটি মামলাও হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআইসিইউতে সংকটাপন্ন আহত মাহাদি আকিব
পরবর্তী নিবন্ধকিশোর গ্যাং একটি দুষ্টচক্র ভাঙতে পদক্ষেপ জরুরি