চ্যালেঞ্জিং হলেও সাইবার অপরাধ দমন করতে হবে

| বৃহস্পতিবার , ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

দেশে তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার যেমন চলছে, তেমনি তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাইবার অপরাধ। ‘উগ্র সামপ্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, গুজব, মিথ্যা খবর, কিশোর অপরাধ, আত্মহত্যা, পর্নোগ্রাফি, সাইবার বুলিং, জালিয়াতি, ব্যাংক ডাকাতি, চাঁদাবাজি, পাইরেসি, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা’ সবই হচ্ছে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে। তা মোকাবেলা করা প্রশাসনের পক্ষে জটিল হয়ে পড়েছে। অতি সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে যোগাযোগ ও প্রযুক্তির বিকাশে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি তা মোকাবিলা করা পুলিশের জন্যও চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, বিশ্বায়নের এই যুগে সহিংস চরমপন্থা ও আন্তর্জাতিকভাবে সংঘটিত অপরাধগুলো জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য একটি বিশাল হুমকি। সামপ্রতিক বছরগুলোতে উন্নত প্রযুক্তি ও নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থা এ ধরনের অপরাধী নেটওয়ার্কগুলোকে শক্তিশালী করেছে। সাইবার ক্রাইম, মানি লন্ডারিং, মুদ্রা জালিয়াতি ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের মত নতুন চ্যালেঞ্জের উদ্ভব হচ্ছে। তাদের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ গোটা বিশ্বে সুদূরপ্রসারী অস্থিতিশীল প্রভাব ফেলে। এই প্রেক্ষাপটে পুলিশিং কার্যক্রম চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে। দৈনিক আজাদীতে গত ১৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, প্রযুক্তির বিকাশে যে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে তা এককভাবে কোনো জাতি সমাধান করতে পারে না মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এসব বিপদ মোকাবেলায় বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা সুসংহত করার বিকল্প নেই।
বিশ্লেষকদের মতে, তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনের ফলে আমাদের জীবনে শ্রম লাঘব হয়েছে, দূরত্ব ঘুচেছে, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হয়েছে। নিঃসন্দেহে তথ্যপ্রযুক্তি আমাদের জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। তবে এই তথ্যপ্রযুক্তির বৈপ্লবিক পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে সংগঠিত হচ্ছে এক নতুন ধরনের অপরাধ যার নাম ‘সাইবার অপরাধ’। তথ্যপ্রযুক্তির এই বৈপ্লবিক পরিবর্তনকে উপজীব্য করে অসাধু মহল সমাজে সাইবার অপরাধ নামে প্রযুক্তি নির্ভর অপরাধের বিস্তার ঘটিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদও বলেছেন, সাইবার জগতের সম্ভাব্য হুমকি ও ঝুঁকি সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে না পারলে পুলিশের সক্ষমতা ও উদ্যোগগুলো বিফলে যাবে। অপরাধীরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এখন শারীরিক পুলিশিংয়ের পাশাপাশি সাইবার জগতের দিকে মনোনিবেশ করছে। পুলিশপ্রধান আরও বলেন, প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতির ফলে কয়েক দশক ধরে অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে অপরাধ এবং অপরাধীদের ধরন পরিবর্তন হচ্ছে। অপরাধীরা নতুন নতুন পন্থায় অপরাধ করছে। তারা বিশ্বের অন্য দেশে বসেও সাইবার হামলা চালিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করতে পারে। অপরাধীরা এক দেশ থেকে অন্য দেশে সাইবার হামলা করে ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পারে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১১.৮৭৫ মিলিয়ন। যার মধ্যে মোবাইলের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন ১০২.৩৫৩ মিলিয়ন ব্যবহারকারী, আইএসপি এবং ব্রডব্যান্ডের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন ৯.৫২২ মিলিয়ন ব্যবহারকারী। উপরোক্ত তথ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিরেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) পরিসংখ্যান থেকে প্রাপ্ত। এই তথ্যে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর একটা বিশাল অংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এবং এই ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তবে ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা যেভাবে বেড়ে যাচ্ছে সেই অনুপাতে সচেতন গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ছে না। যার কারণে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় অনেক ব্যবহারকারী জড়িয়ে পড়ছে সাইবার অপরাধের জালে।
এ কথা ঠিক যে, জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ডিজিটাল বাংলাদেশের সঙ্গে মিল রেখে প্রযুক্তিগত সেবা বাড়ানো হয়েছে। সাধারণ মানুষকে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯, অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন, অনলাইন ইমিগ্রেশন, ক্রাইম ডেটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ও ই-ট্রাফিক সিকিউরিটি সিস্টেমে সেবা দেওয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী দিনে সব ধরনের সাইবার হুমকি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা জোরদার করার সময় এসেছে।
এ বিষয়ে অপরাধ বিজ্ঞানীরা বলেন, ‘সাইবার অপরাধের বিচারহীনতার জেরে অপরাধ বাড়ছে। বিচার না পেয়ে কেউ কেউ সরাসরি প্রতিরোধে নেমে নিজেই হত্যা, সংঘর্ষের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। একটি মেয়েকে সাইবার জগতে চরম হয়রানি করা হয়। বিচার পায় না। শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করে।’ এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চায় সমাজ। চ্যালেঞ্জিং হলেও পুলিশকেই তার মোকাবেলা করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে