চোখের জলে ভেজা লাল পতাকা

ঋত্বিক নয়ন | সোমবার , ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৭:৫০ পূর্বাহ্ণ

কমরেড উজ্জ্বল শিকদারের প্রতি

লাল পতাকা হাতে কাঁদতে নেই,
অথচ উপস্থিত সবার চোখে জল।
হাসপাতালে শুয়ে আছিস,
আর্তনাদ, চোখের জল; কিছুতেই
কিছু আসে যায় না তোর।
একবার মনে হলো হাসছিস তুই,
মিটিমিটি। হঠাৎ উঠে বলবি,
‘এটুকুতেই ভেঙে পড়লে, লাল
পতাকার সংগ্রাম এগিয়ে নেবে কে?’
লাল ঝান্ডাধারীদের কি তবে
মন বলে কিছু নেই;
আবেগ, অনুভূতি নেই!
তোর অগস্ত্য যাত্রায় তাই
কেউ দারুণ ক্ষুব্ধ, অভিমানী, বেদনাহত।

তোর সাথে এলাম পার্টি অফিসে,
করোনার ক্রান্তিকালেও যেখানে তোর
আহবানে কেউ আসতে বাধ্য হতো,
বিরক্তও হতো কেউ কেউ।
পার্টি অফিসে, টেবিলের ওপর শায়িত তুই,
লাল পতাকায় ঢাকা শরীর আর বুকের কাছে সে-ই কাস্তে হাতুড়ি।
সেখানেও কান্নার রোল; কাঁদছে
ভালোবাসার মানুষগুলো তোর; ‘মৃণাল দা’,
‘শাহআলম ভাই’,‘জাহাঙ্গীর ভাই’, ‘রেখাদি’,‘শীলা দি’, ‘রিপায়ন দাসহ অনেকেই।
হোটেল শ্রমিকদের বুকফাটা আর্তনাদে
ভর যুবতী কর্ণফুলি যেন গন্তব্য পালটে
হাজারী লেইনে বইছে।
তোকে ছুঁইয়ে লাল শপথে বলীয়ান কমরেডস; ভ্রুক্ষেপ নেই তোর,
শান্ত, ঘুমে কাতর।

আবার তুলে দিলাম হিম শীতল কক্ষে।
ফুলে ফুলে ঢাকা তোর শরীর।
বৌদির শেষ চুম্বন, কাকীমা’র তীব্র চিৎকার,
বোনদের আর্তনাদ- সবারই একটাই চাওয়া, ‘ফিরে আসো তুমি’, ‘ফিরে আয় বাপ’,
‘আমার ছেলেকে শাসন করতে ওঠো দাদা’-
না, কেউ তোর ঘুম ভাঙাতে পারে নি,
এ ঘুম যে ভাঙবার নয়।

এমন একটা সময় চলে গেলি, যখন
সমাজতন্ত্র পুঁজিবাদের হাতে জিম্মি।
লাল পতাকাটাও ঝলসানো দোজখে
নেতিয়ে পড়েছে; এসময় তোর মতো
স্বপ্নবাজ মানুষের প্রয়োজন বাড়ছেই।
সিনা টান টান করে কে আর বলবে,
‘হে রুদ্ধ মানুষ, এসো মিলি মুক্তির পতাকায়;
বুক চিরে হৃদ বৃন্তে ফুল ফোটাই।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুই চাকা বাদাবনের সমীপে
পরবর্তী নিবন্ধউত্তর নেই