চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে দেওয়া নারাজি খারিজ, রিভিশন দায়ের

একদিনে দুইবার অপারেশনে রোগীর মৃত্যু

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৪ জুন, ২০২৩ at ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ

পেট ব্যথার রোগীকে একদিনে দুইবার অপারেশন করার পর মৃত্যু হয় পপি আক্তার নামের এক রোগীর। এই ব্যাপারে তার স্বামীর দায়েরকৃত মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত টিম। কিন্তু বাদী তাতে সন্তুষ্ট হতে না পেরে নারাজি আবেদন করলে তা খারিজ করে দেয় আদালত। এরই প্রেক্ষিতে গত ২৯ মে মহানগর দায়রা জজ আদালতে নারাজি খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন দাখিল করে বাদী। আদালত তা গ্রহণ করে আগামী ১০ জুলাই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে জানানো হয়।

এ বিষয়ে বাদীর আইনজীবী আবদুল্লাহ আল হেলাল আজাদীকে বলেন, তদন্ত টিম যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে তাতেও পপি আক্তারের মৃত্যু যে অবহেলা জনিত কারণে হয়েছে তা স্পষ্ট হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাউদার্ন হাসপাতালে দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে দক্ষ জনবল ছাড়া অপারেশন করা অবহেলা বা অপরাধ নয়? একজন রোগীকে একদিনে কিভাবে দুইবার অপারেশন করা যায়? যাইহোক তদন্ত টিমের দাখিল করা উক্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আমরা নারাজি দিয়েছিলাম। আদালতকে বলেছিলাম, সিআইডি, পিবিআই বা ডিবিকে মামলাটি তদন্তের জন্য দেওয়া হোক। কিন্তু আদালত আমাদের নারাজি আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছেন। এতে আমরা অসন্তুষ্ট হয়ে গত ২৯ মে রিভিশনটি দায়ের করেছি। এতেও সিআইডি, পিবিআই অথবা ডিবিকে মামলাটি তদন্তের জন্য দিতে বলেছি আমরা। মহানগর দায়রা জজ জেবুন্নেছা সেটি গ্রহণ করে ১০ জুলাই শুনানির জন্য রেখেছেন। আশা করছি, আদালত আমাদের আবেদন গ্রহণ করবেন।

আদালত সূত্র জানায়, পপি আক্তারের মৃত্যুর দেড় মাস পর গত বছরের ২০ ডিসেম্বর ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেন। কমিটিকে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান, মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং অ্যানেস্থেসিয়া সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ একজন চিকিৎসক।

আদালতসূত্র আরো জানায়, গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেজিস্ট্রার, অধ্যক্ষসহ তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলাটি করেন রোগীর স্বামী ও বায়েজিদের শেরশাহ এর বাসিন্দা মীর আবদুল পিরু। আসামি তিন চিকিৎসক হলেন রেজিস্ট্রার ডা. মোহাম্মদ ইমরান হোসেন, সহকারী অধ্যাপক ডা. আদনান বাচা এবং অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. জয়ব্রত দাশ।

তখন বাদীর আইনজীবী আবদুল্লাহ আল হেলাল বলেছিলেন, আমার মক্কেলের স্ত্রী পপি আক্তারের সামান্য পেট ব্যথাকে কেন্দ্র করে দুইবার অপারেশন করে সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। প্রথমবার অপারেশন করেন রেজিস্ট্রার ডা. মোহাম্মদ ইমরান হোসেন। একইদিন দ্বিতীয়বার অপারেশন করেন সহকারী অধ্যাপক ডা. আদনান বাচা। রেজিস্ট্রার হয়েও স্পর্শকাতর অপারেশন করেন ডা. মোহাম্মদ ইমরান। একপর্যায়ে পপি আক্তারের মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘটনা তদন্তের জন্য চার সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করলেও সে বিষয়ে আমার মক্কেলকে কোনো হালনাগাদ তথ্য জানায়নি। মামলা করতে গেলে থানা পুলিশ গড়িমসি করে। কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে আমার মক্কেল আদালতের আশ্রয় নিয়েছিলেন।

আদালত সূত্র জানায়, মামলার আরজিতে বাদী উল্লেখ করেন, গত বছরের ২১ অক্টোবর সকালে পেটে ব্যথা অনুভব করলে ভিকটিম পপি আক্তারকে সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করানো হয়। ডাক্তার পরীক্ষানিরীক্ষা করে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা শনাক্ত করেন এবং দ্রুত অপারেশন করার কথা বলেন। এতে বাদী রাজি হলে ২৬ অক্টোবর রোগীর অপারেশন করা হয়। অপারেশনের তিন ঘণ্টা পর রোগীকে বেডে নেওয়া হয়। কিন্তু তখনো প্রচণ্ড ব্যথার সঙ্গে ব্লিডিং হতে থাকে। একপর্যায়ে একই দিন রাত ১১টার দিকে ভিকটিমকে পুনরায় অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় অপারেশনের পরও ব্লিডিং কমেনি। বরং ভিকটিমের অবস্থা খারাপের দিকে চলে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় তড়িঘড়ি করে ২৭ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৬টায় ডিসচার্জ সার্টিফিকেট প্রদান করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

উপায়ন্তর না দেখে বাদী ভিকটিমকে নিয়ে সকাল সাড়ে ৭টায় মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক জানান, রোগীর কন্ডিশন খারাপ। এখন তো তার প্রেসার, রেসপন্স কিছুই নেই। এত দেরিতে কেন রেফার করা হয়েছে? এমন অবস্থার পরও অনুরোধ সাপেক্ষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভিকটিম পপি আক্তারকে আইসিউতে ভর্তি নেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। পরদিন ২৮ অক্টোবর সেখানে তার মৃত্যু হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউড়িষ্যায় ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ২৮৮, আহত ৮শ
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের ১৬ সংসদীয় আসনের সীমানা অপরিবর্তিত