চিনির বিকল্প সুইটেনারে ওজন নিয়ন্ত্রণ হয় না : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

| বুধবার , ১৭ মে, ২০২৩ at ৬:০৫ পূর্বাহ্ণ

খাবারে চিনির বিকল্প হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে সুইটেনার গ্রহণ শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য তো করেই না, বরং একটি সময় পর তা অন্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাডব্লিউএইচও। জাতিসংঘের এই সংস্থার বরাতে গার্ডিয়ান জানিয়েছে, চিনির বদলে যারা ‘ননসুগার সুইটেনার’ (এনএসএস) গ্রহণ করেন, দীর্ঘ মেয়াদে সেটি তাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে না। উল্টো বেশিদিন এই কৃত্রিম সুইটেনার গ্রহণ টাইপ ২ ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের মত বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

ডব্লিউএইচও বলছে, চিনির বিকল্প হিসেবে মানুষের কৃত্রিম সুইটেনার গ্রহণের ভাবনা তাদের খুব বেশি সুবিধা দেয় না। ডব্লিউএইচওর পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা পরিচালক ডা. ফ্রান্সেস্কো ব্রাঙ্কা বলেন, ফ্রি সুগার বা মুক্ত শর্করার পরিবর্তে এনএসএস দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার মানুষের ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে না। এই ধরনের শর্করা গ্রহণ কমাতে মানুষকে অন্য উপায় গ্রহণ করতে হবে। প্রাকৃতিকভাবেই শর্করা রয়েছে এমন খাবার যেমন, ফল অথবা মিষ্টিহীন খাবার ও বেভারেজ গ্রহণ করতে হবে। খবর বিডিনিউজের।

ফ্রান্সেস্কো ব্রাঙ্কা বলেন, এনএসএস বা ননসুগার সুইটেনার ডায়েটের কোনো অপরিহার্য উপাদান নয়, এতে কোনো পুষ্টিগুণও নেই। স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য মানুষের ডায়েটের প্রথমদিকেই এই ধরনের মিষ্টি জাতীয় উপাদানের ব্যবহার কমানো উচিত। তবে পুষ্টি গবেষক ও ব্রিটিশ কোয়াড্রাম ইনস্টিটিউটের ইমেরিটাস ফেলো ডা. ইয়ান জনসন বলেন, ডব্লিউএইচও’র এই সুপারিশকে এইভাবে ব্যাখ্যা করা উচিত নয় যে ‘ওজন নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে চিনি খাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই’। তার মতে, কৃত্রিম সুইটেনার ব্যবহারের একটি ভালো উপায় হল ফ্রিসুগার সমৃদ্ধ প্রক্রিয়াজাত খাদ্য গ্রহণ কমানো। যেমন, চিনির মিষ্টি জাতীয় বেভারেজ ও মিষ্টির উৎস হিসেবে হালকা প্রক্রিয়াজাত ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকা। এরপর একটা সময় পর মিষ্টি জাতীয় খাবারের প্রতি সামগ্রিক চাহিদাকেই কমিয়ে আনার চেষ্টা করা।

ব্রিটিশ অলাভজনক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘কোচরান’ এর ২০১৯ সালের একটি গবেষণা পর্যালোচনা করে এই নতুন পরামর্শ দিচ্ছে ডব্লিউএইচও। ওই গবেষণার উপসংহারে বলা হয়েছে, এনএসএস গ্রহণের কোনো স্বাস্থ্য উপকারিতা নেই, বরং সম্ভাব্য ক্ষতিকর দিকগুলো বাদ দেওয়া যায় না। তবে এই গবেষণার বক্তব্যের পক্ষে প্রমাণের দুর্বলতার কথাও রয়েছে বলে জানিয়েছে গার্ডিয়ান। গবেষণা পর্যালোচনার সঙ্গে জড়িত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে প্রমাণ বিশ্লেষণ করা হয়েছে, সেগুলো খুব বেশি শক্তিশালী নয়। ফলে ডব্লিউএইচও’র কাজ নিয়ে আপত্তিও রয়েছে।

জাতিসংঘের সংস্থাটির সুপারিশ হল, ওজন নিয়ন্ত্রণ বা দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধের উপায় হিসেবে এনএসএস কাজে আসবে না। এই বক্তব্য এমন লোকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যাদের আগে থেকেই ডায়েবেটিস নেই। আর এনএসএস এবং এর ব্যবহারে রোগ সংক্রান্ত প্রমাণ ঘিরে নিশ্চয়তার অভাবে এই সুপারিশও শর্তসাপেক্ষ বিষয়।

এর আগে সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, চিনি খাওয়া বারণ বলে যারা বিকল্প হিসেবে চায়ের সঙ্গে জিরো ক্যালোরি সুইটেনার গ্রহণ করেন তাদের জন্য দুঃসংবাদ রয়েছে। নেচার মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনের বরাতে সংবাদমাধ্যমটি জানায়, চিনির বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত জিরো ক্যালোরি পণ্য এরিথ্রিটল গ্রহণে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। বহুল ব্যবহৃত এ খাদ্যপণ্যের সঙ্গে রক্ত জমাট বাঁধা, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক এমনকি মৃত্যুঝুঁকিরও যোগাযোগ দেখা গেছে।

এতে আরও বলা হয়, হৃদরোগের সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের মধ্যে যারা ডায়াবেটিসের মত ঝুঁকিপূর্ণ সমস্যায় ভুগছেন, তাদের রক্তে সর্বোচ্চ মাত্রায় এরিথ্রিটল থাকলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ হয়ে যায়। এই এরিথ্রিটল হল সরবিটল ও জাইলিটলের মত এক ধরনের কার্বোহাইড্রেট। এগুলোকে বলা হয় সুগার অ্যালকোহল। প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন ফল ও সবজিতে এরিথ্রিটল পাওয়া যায়। এতে চিনির মিষ্টির প্রায় ৭০ শতাংশ রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা একে জিরো ক্যালরি হিসেবে মনে করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধট্রাকের নিচে বাইক, প্রাণে বাঁচলেন দুই আরোহী
পরবর্তী নিবন্ধঝড়ো হাওয়ায় টাইগারপাসে পড়ে গেল বড় গাছ