চাল আমদানিতে শুল্ক কমল ৩৭ শতাংশ

কারসাজিতে দাম বৃদ্ধি : কৃষিমন্ত্রী

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ২৮ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৮:৫৮ পূর্বাহ্ণ

বেসরকারিভাবে চাল আমদানি করে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে সরকার। এজন্য ২৫ শতাংশ শুল্কে বেসরকারিভাবে বৈধ ব্যবসায়ীদের চাল আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। একই সঙ্গে সরকারিভাবে ৪ লাখ মেট্রিক টন, জিটুজি পদ্ধতিতে দেড় লাখ মেট্রিক টন এবং বেসরকারিভাবেও চাল আমদানি করা হবে বলে জানান তিনি। গতকাল রোববার চালের বাজার স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে সরকারি পদক্ষেপসমূহ নিয়ে অনলাইনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা জানান। এদিকে গতকাল সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে আমনের ভরা মৌসুমে আড়তদার-মিলাররা কারসাজি করে চালের দাম বাড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ২৫ শতাংশ শুল্কে চাল আমদানি করতে পারবেন বেসরকারি ব্যবসায়ীরা। যারা বৈধ লাইসেন্সধারী আছেন তারা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করবেন ১০ জানুয়ারির মধ্যে। মন্ত্রণালয় কাকে কতটুকু ছাড়পত্র দেবে সেটার এলসি হবে। সেটা আমরা মনিটরিং করব। বেসরকারিভাবে এই চাল আমদানি করে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতেই আমরা বেসরকারিভাবে আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগে ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্ক ছিলো, এখন ৩৭ শতাংশ কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে কৃষক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
দাম না বাড়ালে চাল না দেয়ার বিষয়ে মিলাররা হুমকি দিচ্ছেন এমন এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সরকার কারো হুমকিতে মাথা নত করে না। আমরা মিলারদের চুক্তির জন্য পীড়াপিড়ি করিনি। তারা তাদের হুমকি নিয়ে থাকুক। প্রয়োজন আমরা কৃষকের কাছ থেকে ধান বেশি করে কিনব। যাতে করে তারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। দরকার হলে ১৫ থেকে ২০ লাখ টন চাল কিনব।
মন্ত্রী বলেন, বেসরকারিভাবে যখন যতটুকু আমদানি করা প্রয়োজন তা করব। বোরো আসার আগে যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার সেটাও করব। বোরো মৌসুমে এ অবস্থা থাকলে আবার আমদানি করব। আমরা কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা ওপেন করেছি। কিন্তু সরকার নির্ধারিত মূল্য মণ প্রতি ১০৪০ টাকা, কিন্তু বাইরে কৃষকরা ধান বিক্রি করে বেনিফিট হলে সরকারের কাছে বিক্রি করে না। কারণ আজকেও বাইরে ১২০০ টাকা মণ দাম আছে।
সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, আমাদের চালের রেট বাণিজ্য, কৃষি, অর্থ, খাদ্য মন্ত্রণালয় মিলে নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু সহনীয় রেট কি করা যায় সেটার নীতিমালা নেই। সবকিছুর একটা নীতিমালা আছে বাট এটার নাই। ধানের দাম কমলে আমরা কৃষকের জন্য হাহাকার করি। আবার চালের দাম বাড়লেও হাহাকার করি। তাই এখানে একটা স্ট্যান্ডার্ড রেট থাকতে হবে। সহনশীল একটি স্ট্যান্ডার্ড রেট তৈরি করতে হবে। এজন্য গত ২৩ তারিখ একটি মিটিং হয়েছে, সেখানে বাণিজ্য, কৃষি, অর্থ ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ছিলেন। আমরা কমিটিও করেছি। তারা নীতিমালা করতে কাজ করবেন। আর সেটা চূড়ান্ত হলে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
এসময় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, উৎপাদন মৌসুমে বিভিন্ন ঝড়-বন্যা ছিলো, সে কারণে সমস্যা হয়েছে। তবে কৃষকরা এখন পুরো দমে উৎপাদনে এসেছে। আশা করি আগামী বছর আমাদের ভালো ফসল হবে।
এদিকে আমনের ভরা মৌসুমে আড়তদার-মিলাররা কারসাজি করে চালের দাম বাড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। গতকাল রোববার সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ঘাটতি মেটানোর জন্য সরকার ৫ থেকে ৬ লাখ টন চাল বিদেশ থেকে আমদানি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারি গুদামে চাল কমে গেছে। গত বছর প্রায় ১৩ লাখ টনের মত খাদ্য ছিল, এ বছর সেটা কমে ৭ লাখ টনে নেমে এসেছে। এই যে ৫ থেকে ৬ লাখ ঘাটতি যদি না মেটাতে পারি… বাংলাদেশের মিলাররা, আড়তদাররা, জোতদাররা, যারা বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করে, তারা চালের দাম বাড়ায় এবং এবারও তারা সেই কাজ করছে। মৌসুমের সময় তারা এখনও ধান কিনছে এবং ধান ও চালের দাম দুটোই বাড়িয়ে দিয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটেকসই নির্মাণে নতুন সম্ভাবনা
পরবর্তী নিবন্ধমাঠে খেলছে আমলারা রাজনীতিকরা দেখছেন : জিএম কাদের