চার হাজার কোটি টাকায় প্রশস্ত হবে নগরীর ৬ রাস্তা

প্রতিটি সড়ক উন্নীত হবে ৬০ ফুট পর্যন্ত অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়ক হবে ১২০ ফুট ।। সিডিএর নতুন প্রকল্প

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৭ মে, ২০২১ at ৫:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রশস্ত করতে প্রকল্প গ্রহণ করেছে। বর্তমানে ২০-২৫ ফুটে থাকা রাস্তাগুলো বাড়িয়ে প্রশস্ত করা হবে ৬০ ফুট পর্যন্ত। নগরীর কাজীর দেউরী থেকে গণি বেকারি, কাজীর দেউড়ি থেকে গোলপাহাড় মোড়, লাভলেইন থেকে চেরাগী পাহাড় মোড় এবং নন্দনকানন, ফিরিঙ্গীবাজার থেকে সদরঘাট মোড়, কমার্স কলেজ মোড় থেকে মাদারবাড়ি-বারিক বিল্ডিং রোড এবং অক্সিজেন-কুয়াইশ রোড এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম মহানগরীতে প্রয়োজনের তুলনায় রাস্তার পরিমাণ কম। স্বাভাবিকভাবে বিশ্বমানের একটি নগরীতে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত রাস্তা থাকে। সেখানে চট্টগ্রাম মহানগরীতে রাস্তার পরিমাণ ১২ থেকে ১৫ শতাংশ। যা শুধু বিশ্বমানই নয়, প্রয়োজনের তুলনায়ও কম। বিষয়টি মাথায় রেখে সিডিএ অনেকগুলো রাস্তা করেছে। রাস্তার উন্নয়ন করেছে। কিন্তু নগরীর অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং অতিমাত্রায় ব্যবহৃত কিছু সড়ক সরু থাকায় যান চলাচলে প্রত্যাশিত গতি আনা সম্ভব হয়নি। বহু সড়ক উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণ করা হলেও সুফল মিলছে না। এই অবস্থার অবসান ঘটাতে সিডিএ ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা সম্প্রসারণের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। নগরীর কাজীর দেউড়ি থেকে আসকারদীঘির পাড় হয়ে জামালখান মোড় ছুঁয়ে গণি বেকারি পর্যন্ত রাস্তাটি নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে রাস্তাটির কোথাও ২০ ফুট কোথাও ২৫ ফুট বা কোথাও ৩০ ফুট প্রশস্ত। কিন্তু অতি ব্যস্ত রাস্তাটিতে প্রতিদিন শত শত গাড়ি চলাচল করে। প্রয়োজনের তুলনায় সরু হওয়ায় রাস্তটিতে প্রায়শ যানজট লেগে থাকে। এই অবস্থায় কাজীর দেউড়ি থেকে গণি বেকারি পর্যন্ত রাস্তাটির পুরোটাই ৬০ ফুট প্রশস্ত করা হবে।
কাজীর দেউড়ি থেকে চট্টেশ্বরী মোড় হয়ে গোলপাহাড় পর্যন্ত রাস্তাটির অবস্থাও একই। প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এই রাস্তাটি ব্যস্ততম একটি সড়ক। কিন্তু সরু রাস্তাটির বিভিন্ন অংশ ২০ থেকে ৩০ ফুট চওড়া। এই রাস্তারও পুরো অংশ ৬০ ফুট প্রশস্ত করা হবে।
লাভলেইন মোড় থেকে চেরাগী পাহাড় মোড় এবং ডিসি হিল মোড় থেকে নন্দনকানন পর্যন্ত সড়কটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ একটি রাস্তা। এই রাস্তার অবস্থাও বেহাল। কোথাও ২০ ফুট, কোথাও ২৫ ফুট, কোথাওবা ৩০ ফুট চওড়া। এতে রাস্তাটিতে যান চলাচলে প্রত্যাশিত গতি নেই। যানযট লেগে থাকে প্রায়শঃ। এই রাস্তারও পুরোপুরি ৬০ ফুট চওড়া করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রকল্পটিতে ফিরিঙ্গীবাজার থেকে সদরঘাট মোড় পর্যন্ত কাজী নজরুল ইসলাম সড়ক ৬০ ফুট চওড়া করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সিডিএর ছয় রাস্তা সম্প্রসারণ প্রকল্পের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ দাবি করা হচ্ছে কমার্স কলেজের পাশ দিয়ে মাদারবাড়ী- বারিকবিল্ডিং সড়কে এসে যুক্ত হওয়া অতি সরু একটি সড়ক। প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটি বর্তমানে কোথাও ১২ ফুট, কোথাও ১৫/২০ ফুট চওড়া। শহরের যানচলাচলে অতি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটির অবস্থাও অতি নাজুক। এই রাস্তাকে সিডিএ ৬০ ফুট প্রশস্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। রাস্তাটি ৬০ ফুট প্রশস্ত হলে আগ্রাবাদ রোড থেকে মাত্র কয়েকমিনিটে যে কোনো গাড়ি মাদারবাড়ী কদমতলী কিংবা নিউমার্কেট মোড়ে পৌঁছাতে পারবে। তাছাড়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‌্যাম্প এবং লুপ বাদামতলী মোড় এবং কমার্স কলেজ রোডে যুক্ত হবে। কমার্স কলেজের পাশের সড়কটি ৬০ ফুট চওড়া হলে শহরের একটি বড় অংশের মানুষ অতি সহজে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারের সুযোগ পাবে।
এছাড়া অনন্যা আবাসিক এলাকার ভেতর দিয়ে যাওয়া অক্সিজেন থেকে কুয়াইশ পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার সড়কটি দিন দিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। ৬০ ফুট প্রস্থ এই রাস্তাটিকেও ১২০ ফুট প্রস্থ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
উপরোক্ত ছয়টি সড়ক প্রশস্ত করে উন্নয়ন করতে চার হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ ব্যয় হবে। সরকারি তহবিল থেকে এই অর্থের যোগান দেয়া হবে বলে সিডিএ সূত্র জানিয়েছে। সূত্র জানায়, ছয়টি রাস্তা সম্প্রসারণে প্রচুর ব্যক্তিগত সম্পত্তি হুকুম দখল করতে হবে। যাতে প্রকল্পের প্রায় ৮০ শতাংশ অর্থ ব্যয় হবে। বাকি অর্থ সড়ক উন্নয়নে খরচ হবে।
প্রকল্পের ব্যাপারে গতকাল সিডিএর চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ছয়টি রাস্তা সম্প্রসারণের কথা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, রাস্তাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোর প্রশস্তকরণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পুরো শহরের যানচলাচলে গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভরা গাড়িতে ‘ভাড়াও দ্বিগুণ’
পরবর্তী নিবন্ধঅনিয়ন্ত্রিত চীনা রকেটের সম্ভাব্য গন্তব্য সমুদ্র