চসিকের দুই প্রকৌশলীর ‘নিয়মবহির্ভূত’ পদোন্নতি

তদন্তের নির্দেশ মন্ত্রণালয়ের

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৫ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:১৫ পূর্বাহ্ণ

দুই প্রকৌশলীকে ‘নিয়মবর্হিভূত’ভাবে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে, এমন অভিযোগ উঠার পর তা তদন্তে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। গত রোববার এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর আগে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি দেয়া হয়েছিল।
নিয়মবর্হিভূতভাবে পদোন্নতি পাওয়া দুই প্রকৌশলী হচ্ছেন মির্জা ফজলুল কাদের ও জয়সেন বড়ুয়া। বর্তমানে তারা চসিকের যান্ত্রিক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পদে কর্মরত আছেন। কর্মজীবনের শুরুতে ট্রান্সপোর্ট সহকারী পদে এ দুইজন চসিকে যোগ দিয়েছিলেন। এরপর সহকারী প্রকৌশলী হয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি পান তারা। মাঝখানে উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে কর্মরত ছিলেন না তারা। যা নিয়মের লঙ্ঘন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্মচারী চাকরি বিধিমালা’ অনুযায়ী, যান্ত্রিক শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতির জন্য সহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) পদে সাত বছর চাকরি করতে হবে। একই বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি পাওয়ার জন্য উপ-সহকারী পকৌশলী পদে আট বছর এবং উপ সহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) পদোন্নতির জন্য সড়ক তদারককারী বা বাতি পর্যবেক্ষক পদে ১২ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ৫ আগস্ট চসিকের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশ অনুযায়ী, জয়সেন বড়ুয়াকে পুল সহকারী-১ থেকে ডিভিশন-৬, জলাবদ্ধতা নিরসন এর পুল সহকারী এবং মীর্জা ফজলুল কাদেরকে পুল সহকারী-২ থেকে পুল সহকারী ১/২ এ বদলি করা হয়। এ অফিস আদেশের আলোকে ২০১০ সালেও দুইজন সুপারভাইজার পদ মর্যাদায় কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের সহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) পদে প্রতিস্থাপিত করে আরেকটি অফিস আদেশ জারি করেন চসিকের তৎকালীন সচিব। এ অফিস আদেশ অনুযায়ী, উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদ বাদ দিয়ে সরাসরি সহকারী প্রকৌশলী করা হয়। এক্ষেত্রে কর্মবিধির আলোকে বাধ্যবাধকতা অনুসরণ করা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৩০ মে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে দায়িত্ব দেয়া হয় তাদের।
এদিকে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ থেকে দুইজনের পদোন্নতি ‘নিয়মবর্হিভূত’ভাবে হয়েছে উল্লেখ করে একটি অভিযোগ পাঠানো হয় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে। যা তদন্তের জন্য দুদকের অভিযোগ যাচাই-বাছাই কমিটির আহ্বায়ক এ কে এম সোহেল গত ২১ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে পাঠান।
স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো দুদকের পত্রে বলা হয়, চট্টগ্রাম দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর অভিযোগটি (অভিযোগ নং ২২৮/২০২০) তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর পাঠানোর সিদ্ধান্ত কমিশন কর্তৃক গৃহীত হয়েছে। দুদকের চিঠির প্রেক্ষিতে গত রোববার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক পত্রে চসিকের প্রধান নির্বাহীকে তদন্ত করে সুস্পষ্ট মতামত প্রতিবেদনসহ পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়।
এ বিষয়ে জানার জন্য গত রাতে চসিকের প্রধান নির্বাহী’র মোহাম্মদ শহীদুল আলমের মোবাইল কল দিলে বন্ধ পাওয়া যায়।
নির্বাহী প্রকৌশলী মির্জা ফজলুল কাদের দৈনিক আজাদীকে বলেন, তদন্তের বিষয়ে আমি অবগত নই। তিনি বলেন, আমরা যখন নির্বাহী প্রকৌশলী হই তখন কম্পিটিশন করার মত কেউ ছিল না। আমাকে তো অফিস পদোন্নতি দিয়েছে। যারা পদোন্নতি দিয়েছেন সেই কর্মকর্তারা নিশ্চয়ই বেশি জানেন। তারা নিশ্চয়ই নিয়ম ছাড়া কিছু করেননি। নির্বাহী প্রকৌশলী জয় সেন বড়ুয়া আজাদীকে বলেন, অবৈভাবে কি পদোন্নতি দেয়া যায়? তদন্তে করে দেখুক, প্রমাণ পায় কীনা। অভিযোগের বিষয়টিকে নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ির কারণে হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১০ জন নিয়ে ভারতকে রুখে দিল বাংলাদেশ জামালদের সামনে ফাইনালের হাতছানি
পরবর্তী নিবন্ধবিশ্বজুড়ে ফেসবুক সেবায় বিভ্রাট