চলে গেলেন এইচ টি ইমাম

বনানীতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন

আজাদী ডেস্ক | শুক্রবার , ৫ মার্চ, ২০২১ at ৪:৫৬ পূর্বাহ্ণ

চলে গেলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম (৮২)। গত বুধবার দিবাগত রাত সোয়া ১টার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি কিডনি জটিলতাসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। মাসখানেক ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এই সদস্য।
গতকাল বিকালে গুলশানের আজাদ মসজিদে জানাজার পর এইচ টি ইমামের মরদেহ নেওয়া হয় বনানী কবরস্থানে। সেখানে ‘গার্ড অফ অনার’ শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সন্ধ্যায় তাকে দাফন করা হয়। এর আগে সকালে হেলিকপ্টারে উল্লাপাড়ায় গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয় এইচ টি ইমামের কফিন। সেখানে উল্লাপাড়া আকবর আলী সরকারি কলেজ মাঠে তার জানাজা হয়। সেখান থেকে বেলা দেড়টার দিকে মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আনা হয়। সেখানে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যবস্থাপনায় বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সর্বস্তরের মানুষ তার কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। খবর বিডিনিউজের।
এইচ টি ইমামের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমপি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দীন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব পালন করা এইচ টি ইমাম ২০১৪ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সরকারের চাকরিতে থাকা অবস্থায় পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন এইচ টি ইমাম। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মন্ত্রিপরিষদ সচিবও হন তিনি।
হোসেন তৌফিক ইমামের জন্ম ১৯৩৯ সালে, পরে তিনি এইচ টি ইমাম নামেই পরিচিত হয়ে ওঠেন। বাবার চাকরি সূত্রে তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে বিভিন্ন জেলায়। ম্যাট্রিক পাস করেন ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে। আবা ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে। রাজশাহী কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি নিয়ে তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, অর্থনীতিতে এমএ ডিগ্রি নেন। তখন তিনি বাম ছাত্র সংগঠনে যুক্ত ছিলেন। পড়াশোনা শেষে শিক্ষকতায় যোগ দিয়েছিলেন এইচ টি ইমাম রাজশাহী সরকারি কলেজে অর্থনীতির প্রভাষক হিসেবে যোগ দিয়ে। এরপর পাকিস্তানে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। তখন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা করে লন্ডনের স্কুল অব ইকোনমিকস থেকে।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের ২৬ আগস্ট পর্যন্ত তিনি মন্ত্রিপরিষদের সচিবের দায়িত্বে ছিলেন। এরপর ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত সাভারের লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি যোগাযোগ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালযয়ের সচিবও হন। অবসর নেওয়ার পর আওয়ামী লীগে সক্রিয় হন এইচ টি ইমাম। দলের নির্বাচন পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ছিলেন, যে কমিটির চেয়ারম্যান শেখ হাসিনা।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে উপদেষ্টার দায়িত্ব দেন। প্রথমে তিনি জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। ২০১৪ সালে তাকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়। এইচ টি ইমাম নিজে কখনও নির্বাচনে না দাঁড়ালেও তার ছেলে তানভীর ইমাম সিরাজগঞ্জের একটি আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমামলা গ্রহণ করেছে আদালত পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ
পরবর্তী নিবন্ধ১৮ কেজি স্বর্ণ চোরাচালানে ‘জড়িত’ হেলাল