চট্টগ্রাম ২৫০ কোটি মানুষের বাজারের প্রবেশদ্বার

সেবা ও উৎপাদন খাতে পারস্পরিক সহযোগিতায় জোর চট্টগ্রাম চেম্বারে মতবিনিময়ে ভারতীয় হাইকমিশনার

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২১ ডিসেম্বর, ২০২০ at ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামকে ২৫০ কোটি মানুষের বিশাল এক বাজারের প্রবেশদ্বার বলে মন্তব্য করে ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেছেন, বাংলাদেশ বিশ্বে বৃহত্তর অর্থনীতির একটি দেশ হিসেবে উদিত হচ্ছে। প্রতিবেশীদের সাথে দৃঢ় সম্পর্কের উপর আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক উন্নয়ন নির্ভরশীল। তাই সেবা এবং উৎপাদন খাতে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে বন্ধুত্বকে টেকসই করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদির পাশাপাশি দুই থেকে তিন বছর মেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি এবং নির্দিষ্ট কয়েকটি সেক্টর যেমন লজিস্টিকস, বন্দর, অবকাঠামো, যোগাযোগ ও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে কাজ করার প্রচুর সুযোগ রয়েছে বলে জানান। গতকাল রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালকমণ্ডলী, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দোরাইস্বামী বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যসমূহ, এমনকি ভুটান, নেপাল উপকৃত হতে পারে। এতে বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ে লাভবান হতে পারে।
ব্যবসায়ী নির্বাহীদের প্রশিক্ষণ প্রদান, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি খাতে মূল্য সংযোজনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, কনস্ট্রাকশন ইকুইপমেন্ট, মেডিকেল ইকুইপমেন্ট, ফার্মাসিউটিক্যালস ও এপিআই পার্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগ কার্যকর হবে। চট্টগ্রামে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালনা, বে-টার্মিনালে অর্থায়নসহ অবকাঠামো উন্নয়নে ভারতের আগ্রহ রয়েছে। তিনি সীমান্তে আইসিডি, ওয়্যারহাউস নির্মাণ, রেললাইন উন্নয়ন ও স্থলবন্দরের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন।
ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন চেম্বার প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম। পরিচালক এস এম আবু তৈয়ব, অঞ্জন শেখর দাশ, নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন ও সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, প্রাক্তন পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, বিএসআরএমের এমডি আমীর আলীহুসেইন, উইম্যান চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র সহসভাপতি আবিদা মোস্তফা ও ডা. মুনাল মাহবুব, বেইস টেঙটাইল লি. এর ভাইস চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মনোয়ার শাহাদাত শোভন, গ্রিন গ্রেইন গ্রুপের এমডি শাকিল আহমেদ তানভীর, ক্যাপিটাল পেট্রোলিয়ামের এমডি রাশিখ মাহমুদ ও মার্কস বাংলাদেশের তানিম শাহরিয়ার বক্তব্য রাখেন।
উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামস্থ ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জী, রাষ্ট্রদূতের পত্নী সঙ্গীতা দোরাইস্বামী, দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি দীপ্তি আলংঘট, চেম্বার পরিচালকদ্বয় মো. আবদুল মান্নান সোহেল ও মো. এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, অতিরিক্ত কাস্টম কমিশনার আবু নুর রশিদ আহমেদ, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার মো. সরোয়ার হোসেন, লুব-রেফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সালাউদ্দিন ইউসুফ, বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রামের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আহমেদ আলী, রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোর পরিচালক আলতাফ হোসেন ভূঁইয়া, বিএসটিআই চট্টগ্রামের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. সেলিম রেজা প্রমুখ।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম। উভয় দেশের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে ১০ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, রাষ্ট্রদূত ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব করেন তিনি। এছাড়া সাগর ও অভ্যন্তরীণ নৌ-পথে মালামাল পরিবহন, রেলপথে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন, স্থল বন্দরসমূহে জটিলতা সহজীকরণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে পণ্য খালাসের গতি ত্বরান্বিত করা, ইলেকট্রনিক ডাটা বিনিময়ের মাধ্যমে স্থলবন্দরসমূহকে আরও বেশি ডিজিটালাইজ করা, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রাপ্তিতে সহায়তা, ভারত-বাংলাদেশ বার্ষিক বিজনেস কনফারেন্স আয়োজন, বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসে যৌথভাবে ল্যাবরেটরি বা টেস্টিং সেন্টার স্থাপনের প্রস্তাব করেন। ধর্মীয় পর্যটনের মাধ্যমে উভয় দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
বক্তারা স্থলবন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রয়োজনীয় শেড নির্মাণ, উভয় দেশের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন, সাফটা সার্টিফিকেট গ্রহণ, সার্টিফিকেট অব অরিজিন জটিলতা দূরীকরণ, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি কর্তৃক এঙপোর্ট ক্রেডিট গ্যারান্টি চালু করা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উন্নয়ন, বর্ডার ট্রেড বৃদ্ধি, এন্টি ডাম্পিং বাতিল, ট্যারিফ ও নন ট্যারিফ বাধা দূর করা, যৌথভাবে নার্সিং ইনস্টিটিউট স্থাপন, পর্যটন শিল্পের বিকাশ, মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রশিক্ষণ ও যৌথভাবে শিপ বিল্ডিং খাতের উন্নয়নে গুরুত্ব আরোপ করেন।
পরে গতকাল দুপুরে পাহাড়তলীতে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে শহীদ প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের জাদুঘর পরিদর্শন করেন ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী। পরে তিনি জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসায় যান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগৃহবধূর মৃত্যু নিয়ে রহস্য
পরবর্তী নিবন্ধকাটছাঁট হতে পারে অগ্রাধিকার তালিকা