চট্টগ্রাম শহরের সৌন্দর্য ফেরাতে কাজ করুন

| রবিবার , ৩ জুলাই, ২০২২ at ৪:৫০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম শহরের সৌন্দর্য হারিয়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন তথ্য মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি শুক্রবার জঙ্গল সলিমপুর পাহাড়ি এলাকাটি পরিদর্শন শেষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ কথা বলেন। তিনি বলেছেন, ‘চট্টগ্রাম শহর পাহাড় সমুদ্র বেষ্টিত অপূর্ব একটি শহর। কিন্তু দিনে দিনে এটির সৌন্দর্য হারিয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম শহরে আমরা ছোট বেলায় যখন স্টেডিয়ামে খেলা দেখেছিলাম তখন খেলার ধারাভাষ্যকার বলতো চট্টগ্রাম স্টেডিয়াম একটি অপূর্ব সুন্দর জায়গায় অবস্থিত। স্টেডিয়াম থেকে দেখা যাচ্ছে পাহাড়ের চূড়ায় ছোট ছোট বাঙলো। পাহাড়ে অনেক বাঙলো ছিলো। কিন্তু এখন বাঙলো কমে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘এখন অনেক পাহাড় কেটে ফেলা হয়েছে। এখানে পুরো জায়গাটায় পাহাড় ছিলো। পরে বিভিন্ন সমিতির নাম ব্যবহার করে নির্বিচারে পাহাড়গুলো কাটা হয়েছে। চট্টগ্রাম শহরে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ার জন্য দেশের যে বর্ধিত চাহিদা রয়েছে সেই চাহিদা সম্পূর্ণ করতে বিভিন্ন স্থাপনা শহর থেকে সরিয়ে আনতে হবে।’
তথ্যমন্ত্রী নিজের কষ্টের কথা জানালেন এমনভাবে। একসময়ের চট্টগ্রাম আর এখনকার চট্টগ্রামের মধ্যে বিস্তর ফাঁরাক, তা বর্ণিত হয়েছে তাঁর বক্তব্যে। এ কথা সত্যি যে, ঐতিহ্যগতভাবে চট্টগ্রাম ভূ-প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর নগরী। এই নগরীকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার অনেক অবারিত সম্ভাবনা রয়েছে। এই নগরীর অভিভাবক প্রতিষ্ঠান সিটি কর্পোরেশন সত্যিকার অর্থে নানান আর্থিক সংকটসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত থাকায় এই নগরীকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যায়ে উন্নীত করার মতো দায়িত্ব পালনে সফল হতে পারছে না। তবে এটাও সত্য যে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক সক্ষমতা অর্জনের অনেক সম্ভাবনার দুয়ার খোলা রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নগরীর বেনিফিশিয়ারি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব আয় ও তহবিলের একটি অংশ বরাদ্দ নিশ্চিত হলে এই নগরীকে আন্তর্জাতিক মানের উন্নীত করার সমস্ত প্রতিবন্ধকতা দূর হবে। সর্বোপরি নাগরিক সুযোগ-সুবিধা এবং বিভিন্ন সেবাখাতগুলোর কার্যক্রম যথাযথভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়ে উঠবে।
জাতীয় অর্থনীতির ৮০ শতাংশের বেশি আয় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে অর্জিত হয়। এ কারণেই চট্টগ্রামকে বলা হয় জাতীয় অর্থনীতির হৃদপিণ্ড। আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রেও ৮০ শতাংশ কার্যক্রম পরিচালিত হয় চট্টগ্রাম থেকেই। এই চট্টগ্রাম থেকে সরকার যে ট্যাক্স নিয়ে যাচ্ছে, সেখান থেকে শতকরা ১ শতাংশ দিলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক সক্ষমতার ভিত্তি সুদৃঢ় হয় এবং চট্টগ্রামের উন্নয়নে অন্য কারোর উপর নির্ভরশীলতা আর দরকার পড়ে না।
বলা বাহুল্য, চট্টগ্রামের উন্নয়ন নিয়ে সরকারের নানা ভাবনা কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে ট্যানেল করে দিচ্ছেন। এর সাথে রেললাইন যুক্ত হচ্ছে মিয়ানমার হয়ে চীন পর্যন্ত। বে-টার্মিনাল তৈরি হচ্ছে। এটি ভারত, চীনসহ সবাই ব্যবহার করতে পারবে। মহেশখালীতে গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরি হয়ে গেলে চট্টগ্রামের গুরুত্ব সিঙ্গাপুরের মতো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত হবে। এ সমস্ত সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রগুলো থেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির বিশাল উৎস তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আমাদের ভাবতে হবে নাগরিকেরা কী চায়। তারা চায় এই নগর যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে, রাস্তার বাতি যেন ঠিকমতো জ্বলে, ফুটপাতে যেন চলাচল করতে অসুবিধা না হয় ইত্যাদি। বিশ্বের অভিজাত সুন্দর শহর যেমন সিউল, ক্যানবেরা, সিঙ্গাপুর, নিউইয়র্ক, মস্কো, টোকিও-এসব শহরে গড়ে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করে ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ। কিন্তু আমাদের নগরীতে সেই তুলনায় অনেক বেশি মানুষ বাস করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগর-পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন নেতৃত্ব। সিটি করপোরেশনের মেয়র যে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, এখন সবার কাজ হলো তাঁকে সহযোগিতা করা। বর্তমানে টাউন অ্যান্ড কান্ট্রি প্ল্যানিং অ্যাক্ট হওয়া দরকার। এর জন্য ন্যাশনাল আরবান পলিসি ছিল। নীতিটি অনুমোদন হওয়া প্রয়োজন। তাহলে প্রায় সবকিছুই এর মধ্যে চলে আসবে।
৭৫ শতাংশ জিডিপি শহর থেকে আসে। নগর-পারিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এখন যে অবস্থা তৈরি হয়েছে, তাতে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ ছাড়া কাজ হবে বলে মনে হয় না। মোট কথা, দীর্ঘমেয়াদি নগর-পরিকল্পনা প্রয়োজন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে