চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হলো পাঁচ সরকারি কলেজ

চবি প্রতিনিধি | শুক্রবার , ৫ এপ্রিল, ২০২৪ at ৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) অধিভুক্ত হলো চট্টগ্রামের সরকারি পাঁচটি কলেজ। কলেজগুলো হলচট্টগ্রাম কলেজ, হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ, চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ, বোয়ালখালীর স্যার আশুতোষ কলেজ ও সাতকানিয়া কলেজ। গতকাল বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। একই বিজ্ঞপ্তিতে রাজশাহীর চারটি কলেজকেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনা ও অনুশাসন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চট্টগ্রামের পাঁচটি কলেজকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহীর চারটি কলেজকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার জন্য মন্ত্রণালয়ের এই বিভাগ থেকে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে একটি প্রতিবেদন আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রেরণের জন্য নির্দেশ দেয়া হলো।

এদিকে অধিভুক্তের এ আদেশে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে। স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আসায় যেমন খুশির বার্তা রয়েছে তেমনি প্রশাসনিক নানা জটিলতা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তারা। বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেশে কলেজ আছে প্রায় তিন হাজার। এর মধ্যে ৮৮১টি কলেজে স্নাতক (সম্মান) পড়ানো হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোতে প্রায় ৩০ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। এত শিক্ষার্থীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে সেশনজটের কারণে নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জীবন। সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সিন্ডিকেট চায় না কলেজগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যাক। কারণ এসব কলেজ নিয়ে সেই সিন্ডিকেট কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করছে। সে জন্য এত দিনেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজগুলো অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি। তবে, এখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও চায় কলেজগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলে যাক।

জানা যায়, ২০১৪ সালের ৩১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাপ কমাতে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সরকারি কলেজগুলোকে সংশ্লিষ্ট এলাকার সরকারি ও স্বায়ত্ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেন। পরে ওই বছরের ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের নিয়ে সভা হয়। সেখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা কলেজগুলোকে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিতে একমত হন। পরে ২০১৫ সালে একটি কমিটিও গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে তৎকালীন ঢাবি উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক ছাড়াও শিক্ষাবিদ ও চবির সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী ছিলেন।

জানা যায়, ওইসময় প্রাথমিকভাবে ঢাবির অধীনে অধিভুক্ত করার জন্য সরকারিবেসরকারি মিলে ৪৪টি কলেজকে বেছে নেওয়া হয়। আর চবির অধীনে ৩৪টি কলেজকে অধিভুক্ত করার জন্য তালিকা করা হয়। পরবর্তীতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সিন্ডিকেট সেটি বানচাল করার জন্য উঠেপড়ে লাগে। পরে ঢাবির অধীনে ২০১৭ সালে ৭টি সরকারি কলেজকে অধিভুক্ত করে। এরপর প্রায় ৭ বছর পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কোনো কলেজকে অধিভুক্ত করা যায়নি।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর মশিউর রহমান বলেন, স্বায়ত্ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সরকারি কলেজগুলো গেলে শিক্ষার মান বাড়বে। সেশনজট কমবে। শিক্ষার্থীদের মান উন্নয়নের বিপরীতে বিরোধিতা করার প্রশ্নই উঠে না। আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমরা বরং সরকারকে সহযোগিতা করব।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আবু তাহের বলেন, এ ব্যাপারে আমাদের আপত্তি নেই। এ নিয়ে আগামীকাল (শুক্রবার) দুপুর আড়াইটায় পাঁচ কলেজের অধ্যক্ষদের নিয়ে একটি মিটিং হবে। মিটিংয়ের পর বিস্তারিত বলতে পারব। এরপর ৩০ তারিখের মধ্যে প্রতিবেদন পেশ করতে হবে।

সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের অধ্যক্ষ কামরুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে গেলে কলেজেরই লাভ বেশি। শিক্ষার্থীরা বেস্ট মনিটরিং পাবে। শিক্ষকেরাও মনিটরিংয়ের আওতায় আসবে। অন্তর্ভুক্ত হতে অধীর আগ্রহে বসে আছি। তবে এ নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্যও করেছেন অনেকেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, অধিভুক্ত তো করা হলো, তবে তা দৃশ্যমান কোনো পরিকল্পনা, অবকাঠামো ও নিয়মনীতি ছাড়াই। ঢাকার সাত কলেজ যখন ঢাবি অধিভুক্ত হয় তখন শিক্ষার্থীদের মধ্যে আনন্দ লক্ষ্য করা গেছে। সাতটি কলেজের কয়েক লাখ শিক্ষার্থী একদুই বছরের মধ্যেই ভয়াবহ দুর্যোগ টের পাওয়া শুরু করল। সময়মতো পরীক্ষা না হওয়া নিয়মিত ঘটনা, এখনো সে চক্কর থেকে বের হতে পারেনি সাত কলেজ। অধিভুক্ত করা ভালো সিদ্ধান্ত বলা যায়, তবে তখনই সাধুবাদ পাবে যখন শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হবে না, একই সাথে শিক্ষার মানও বাড়বে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভোগান্তি এড়াতে আগেই ছুটছেন অনেকে
পরবর্তী নিবন্ধমাথাপিছু ঋণ এখন দেড় লাখ টাকা : সিপিডি