চট্টগ্রাম কাস্টমসের ল্যাবে পণ্যের নমুনা জট

একবছর ধরে নেই একজন পূর্ণাঙ্গ রাসায়নিক পরীক্ষকও দুই দিনের পরীক্ষায় সময় লাগছে পুরো এক সপ্তাহ

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১৮ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ

প্রায় এক বছর ধরে একজন সহকারী কেমিক্যাল এসিস্ট্যান্ট দিয়েই চলছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাসায়নিক পরীক্ষাগারের (ল্যাব) কাজ। অর্থাৎ বর্তমানে ল্যাবে একজন পূর্ণাঙ্গ রাসায়নিক পরীক্ষকও নাই। ল্যাবের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষক মো. আবদুল হান্নান অবসরে যান গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে। বর্তমানে সহকারী কেমিক্যাল এসিস্ট্যান্ট মো. হেলাল হাসান ল্যাবের কয়েকজন অফিস সহকারী নিয়ে কোনোভাবে জোড়াতালি দিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন। ল্যাবের পরীক্ষক সংকটের কারণে দেখা দিয়েছে পণ্যের নমুনা জট।

আমদানি রপ্তানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছরের পর বছর কাস্টমসের ল্যাবের নানাবিধ সমস্যা চলতে থাকলেও অজানা কারণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজর নেই। বন্দর থেকে ক্ষেত্র বিশেষে পণ্য খালাসে রাসায়নিক পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। বিশেষ করে, ফলমূল ফরমালিন পরীক্ষা ছাড়া খালাস করা যায় না। ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় জটের কারণে বন্দর থেকে নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য খালাস করতে পারছে না আমদানিকারকরা। এতে আমদানিকারকদের পোর্ট ডেমারেজ গুণতে হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ল্যাবটি স্বয়ংসম্পূর্ণ করার দাবি জানিয়ে আসছিলাম। কিন্তু কে শোনে কার কথা। এখন দিন দিন আমদানিরপ্তানি বাড়ছে। পর্যাপ্ত রাসায়নিক পরীক্ষকের অভাবে যে পরীক্ষা দুইদিনে শেষ হওয়ার কথা সেটি শেষ হতে এক সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এতে বিলম্বিত হচ্ছে পণ্য খালাস কার্যক্রম। কাস্টমসের কর্মকর্তারা প্রায় প্রতিটি পণ্যই কিন্তু রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য পাঠান। অথচ তারা পরীক্ষকের সংকটের বিষয়টি নিয়েই তাদের যেন কোনো মাথা ব্যথাই নেই।

রাসায়নিক ল্যাবের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ল্যাবে প্রতিদিন গড়ে বিভিন্ন পণ্যের শতাধিক নমুনা আসে। এই বিশাল পরিমাণ নমুনা পরীক্ষা করতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এছাড়া অনেক নমুনার পরীক্ষা আবার দ্রুত করে দিতে হয়। বর্তমানে যে অবস্থা এতে অন্তত ১০ জন রাসায়নিক পরীক্ষক দরকার। চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম রাব্বানি রিগ্যান দৈনিক আজাদীকে বলেন, কাস্টমসের ল্যাব নিয়ে আসলে আমাদের আর কিছু বলার নাই। চট্টগ্রাম কাস্টমস থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরিত হয়। অথচ এই ল্যাবে একজন পূর্ণাঙ্গ রাসায়নিক পরীক্ষকও নেই। ফলে পণ্যের পরীক্ষার জন্য আমদানিকারকদের সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

এছাড়া অনেক পরীক্ষা বাধ্য হয়ে ঢাকায় পাঠাতে হয়। ঢাকা থেকে রিপোর্ট আসা পর্যন্ত প্রায় দুই সপ্তাহও লেগে যায়। আমরা তাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে আবেদন জানাব, যেন চট্টগ্রামের কাস্টমসের এই ল্যাবটি আধুনিকায়ন করে পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা হয়। এতে ব্যবসায়ীদের সময় ও অর্থ দুটোই বাঁচবে।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. ফাইজুর রহমান জানান, রাসায়নিক পরীক্ষক ও জনবল সংকটের বিষয়টি এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবগত আছেন। বিষয়টি আমরা আবারও নজরে আনব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশ্রীমাই খালে নির্মিত হচ্ছে হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের নতুন বিভাগীয় কমিশনার আমিনুর রহমান