চট্টগ্রাম-ইতালি রুট গতিশীল হচ্ছে

৫ ফেব্রুয়ারি আসছে দ্বিতীয় জাহাজ

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম-ইতালি রুট গতিশীল হচ্ছে। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি ইতালি থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের মধ্যে চলাচলকারী দ্বিতীয় জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছবে। সাত কন্টেনার আমদানিকৃত পণ্য ও ৯৪৫ টিইইউএস খালি কন্টেনার নিয়ে আসা জাহাজটি তিন দিনের মাথায় রপ্তানি পণ্য বোঝাই ১১শ টিইইউএস কন্টেনার নিয়ে ইতালির পথ ধরবে।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সমুদ্রপথে ইউরোপের ইতালিতে সরাসরি কন্টেনার জাহাজ চলাচল গতিশীল করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষামূলক ভয়েজের পর এই রুটের দ্বিতীয় জাহাজটি চট্টগ্রাম আসার মাধ্যমে প্রতি ২৫ দিনের মাথায় একটি করে জাহাজের আসা-যাওয়ার ব্যাপারটি নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রামের সাথে ইতালির সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু হলে প্রতি ভয়েজে অন্তত ২৪ দিন সময় সাশ্রয় হবে। এতে তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি ব্যয় বহুলাংশে কমে যাবে। এই রুট কার্যকর হলে তৈরি পোশাক খাতে বিপ্লব ঘটবে। সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম থেকে প্রতি বছর লাখ লাখ কন্টেনার পণ্য বিশ্বের নানা দেশে রপ্তানি হয়। ইউরোপের দেশগুলোতে বিপুল পরিমাণ তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। কিন্তু চট্টগ্রাম থেকে আমদানিকারক দেশগুলোর সাথে সরাসরি কন্টেনার সার্ভিস নেই। চট্টগ্রাম থেকে ফিডার ভ্যাসেলের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া বা শ্রীলংকার ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরগুলোতে কন্টেনার পাঠানো হয়। ওখান থেকে মাদার ভ্যাসেলের মাধ্যমে ইউরোপ আমেরিকার দেশগুলোতে পণ্যবাহী কন্টেনারগুলো পাঠানো হয়। চট্টগ্রাম থেকে নানা বন্দর ঘুরে ইউরোপে পণ্যবাহী একটি কন্টেনার পৌঁছতে সময় লাগে ৪০ দিন। পথে কোনো বন্দরে জট লেগে গেলে সময় অনেক বেশি লাগে। কন্টেনার ঠিকভাবে গন্তব্যে না পৌঁছার খেসারত দিতে হয় রপ্তানিকারকদের। আবার অনেক সময় আমদানিকারকদেরও কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এই অবস্থায় একেকটি দিন অনেক দামি।
ইউরোপের ক্রেতারা দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি পণ্য নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছিলেন। অবশেষে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বড় বড় ক্রেতারা এক জোট হয়ে চট্টগ্রাম থেকে ইতালি রুটে সরাসরি পণ্য পরিবহনের ব্যবস্থা করেন। এর মধ্যে ২৩ ডিসেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে একটি জাহাজ পাঠানো হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। ওই জাহাজটি ৯৭৫ টিইইউএস খালি কন্টেনার চট্টগ্রাম বন্দরে নামিয়ে দিয়ে গেছে।
সূত্র বলেছে, মূলত ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার প্রতিষ্ঠান আরআইএফ লাইন ও এটির সহযোগী প্রতিষ্ঠান ক্যালিপসো কোম্পানিয়া ডি নেভিগেশন চট্টগ্রাম-ইতালি রুটে জাহাজ চলাচলের ব্যবস্থা করেছে। ইউরোপের বায়ারদের সহায়তা নিয়ে ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার প্রতিষ্ঠানটি এই সেবা চালু করে। নতুন এই সেবার আওতায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কন্টেনার নিয়ে সরাসরি ইতালির সমুদ্রবন্দর সিভিটাভিসিয়ায় চলাচল করবে। প্রয়োজনে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে জাহাজ ইউরোপের অন্যান্য বন্দরেও চলাচল করবে। প্রাথমিকভাবে দুটি কন্টেনার জাহাজ দিয়ে রুটটি চালু করা হচ্ছে। ইতালিয়ান শিপিং কোম্পানি ক্যালিপসো কোম্পানিয়া কন্টেনার জাহাজ সোঙ্গা চিতা ও কেপ ফ্লোরেসের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য পরিবহন করবে। এর মধ্যে এমভি কেপ ফ্লোরেস মার্শাল আইল্যান্ডের ও এমভি সোঙ্গা চিতা লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী। জাহাজ দুটির স্থানীয় এজেন্ট চট্টগ্রামের রিলায়েন্স শিপিং অ্যান্ড লজিস্টিকস।
প্রাথমিকভাবে ২৫ দিন পরপর এই দুটি জাহাজ চট্টগ্রাম-ইতালি রুটে চলাচল করবে। প্রথম জাহাজ হিসেবে এমভি কেপ ফ্লোরেস ২৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে এসে ৯৭৫ টিইইউএস খালি কন্টেনার নামিয়ে দিয়ে গেছে। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি এমভি সোঙ্গা চিতা ৭ টিইইউএস পণ্য বোঝাই কন্টেনার ও ৯৪৫ টিইইউএস খালি কন্টেনার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসছে। ওইদিন জেটি খালি থাকলে জাহাজটি সরাসরি বন্দরের জেটিতে ভিড়বে এবং কন্টেনার খালাস করে তিন দিনের মাথায় ১১শ টিইইউএস পণ্য বোঝাই কন্টেনার নিয়ে ইউরোপের পথ ধরবে। জাহাজটি ১৬ দিনে ইতালির বন্দরে পৌঁছবে। ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট হয়ে যেতে হলে এই কন্টেনার ইতালি পৌঁছতে ৪০ দিন সময় লাগত। চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি ইউরোপে কন্টেনার জাহাজ চলাচল রপ্তানি বাণিজ্যের খরচ অন্তত ৪০ শতাংশ সাশ্রয় করবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
জাহাজটির স্থানীয় এজেন্ট রিলায়েন্স শিপিং অ্যান্ড লজিস্টিকস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রাশেদ গতকাল আজাদীকে বলেন, ৫ তারিখ চট্টগ্রাম-ইতালি রুটের দ্বিতীয় জাহাজটি চট্টগ্রাম পৌঁছবে। নতুন এই রুট দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। ইতালির সিভিটাভিসিয়া বন্দর থেকে সুয়েজ খাল হয়ে এই জাহাজটির চট্টগ্রাম বন্দরে আসতে সময় লাগবে ১৬ দিন। ফিরতি পথেও একই সময় লাগবে। রপ্তানি বাণিজ্যে ২৪ দিন সময় সাশ্রয় হওয়া বিশাল ব্যাপার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইউনিট কমিটিতে মারা যাওয়া দুই নেতার নামও
পরবর্তী নিবন্ধহজের নিবন্ধন শুরু হয়নি