চট্টগ্রাম-ইতালি রুটে আজ থেকে সরাসরি পণ্য রপ্তানি

‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ স্টিকারযুক্ত পণ্য বোঝাই কন্টেনার নিয়ে এমভি সোঙ্গা চিতা যাত্রা করবে

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৭:৩৮ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ-ইতালি রুটে সরাসরি পণ্য রপ্তানি শুরু হচ্ছে আজ। দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য এই যাত্রা একটি বড় ধরনের মাইল ফলক উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, এমভি সোঙ্গা চিতা জাহাজটি আজ দুপুরে ইতালির উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নোঙর তুলবে। চট্টগ্রাম-ইতালি রুটে এটিই প্রথম কোনো জাহাজ যেটি কানায় কানায় পূর্ণ রয়েছে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ স্টিকার লাগানো তৈরি পোশাকসহ রপ্তানি পণ্যে। এর আগে পরীক্ষামূলকভাবে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে একটি জাহাজ ইতালির পথে যাত্রা করলেও সেটি ছিল পুরোপুরি খালি কন্টেনার বোঝাই। নতুন এই যাত্রা এখন থেকে অব্যাহত থাকবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। আজ দুপুরে বন্দর চেয়ারম্যান নিজে উপস্থিত থেকে বাংলাদেশী পণ্য বোঝাই জাহাজটিকে বিদায় জানাবেন বলেও সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে কন্টেনারে পণ্য পরিবহন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাত্র ৬ টিইইউএস কন্টেনার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে ১৯৭৭ সালে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের যে যাত্রা শুরু হয়েছিল তা আজ এক মহাযজ্ঞে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে গত বছর ৩১ লাখ টিইইউএস-এর বেশি কন্টেনার হান্ডলিং হয়েছে। প্রতিবছর গড়ে ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি রয়েছে কন্টেনার বাণিজ্যে। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের কন্টেনার হ্যান্ডলিং হলেও বাংলাদেশ থেকে কন্টেনার নিয়ে সরাসরি কোনো জাহাজই গন্তব্যে যায় না। আবার লোডিং পোর্ট থেকেও কন্টেনার নিয়ে সরাসরি কোনো জাহাজই বাংলাদেশে আসে না। ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয় বাংলাদেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের কন্টেনার পরিবহন। বাংলাদেশ থেকে কন্টেনার নিয়ে ফিডার ভ্যাসেলগুলো চারটি ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টে গিয়ে সেখানে অবস্থান করে। ওখান থেকে কন্টেনারগুলো পুনরায় বড় মাদারভ্যাসেলে তুলে দেওয়া হয় ইউরোপ আমেরিকা চীন জাপানসহ বিভিন্ন গন্তব্যে প্রেরণের জন্য। অপরদিকে আমদানি পণ্য বোঝাই কন্টেনারও সংশ্লিষ্ট রপ্তানিকারক দেশ থেকে মাদার ভ্যাসেল বোঝাই করে উক্ত চারটি ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টে আনা হয়
ওখান থেকে চট্টগ্রাম বন্দরমুখী ফিডার ভ্যাসেলে পুনরায় বোঝাই করা হয়। এতে পণ্য
পরিবহনে দীর্ঘ সময়ের পাশাপাশি বহু বেশি অর্থ ব্যয় হয়। এই প্রক্রিয়ায় কোনো কারণে সময়মতো ফিডার ভ্যাসেল ধরতে না পারলে বা চলাচল না করলে বিমানে পণ্য পাঠানোর ঘটনা ঘটে। যাতে অনেক বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় রপ্তানিকারকদের।
ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট ব্যবহার করে চট্টগ্রাম থেকে ইউরোপে পণ্য পাঠাতে ২৪ থেকে ২৮ দিন সময় লাগে। সরাসরি পাঠালে সময় লাগবে ১৪ থেকে ১৫দিন। এতে পরিবহন ব্যয় অন্তত ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমে যাবে বলেও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
এই অবস্থার অবসান ঘটিয়ে ইউরোপের বড় বড় কয়েকটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ঐক্যবদ্ধ হয়ে চট্টগ্রামের সাথে সরাসরি ইউরোপে জাহাজ চলাচলের উদ্যোগ নেয়। এরই অংশ হিসেবে ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার প্রতিষ্ঠান আরআইএফ লাইন এবং এটির সহযোগী প্রতিষ্ঠান ক্যালিপসো কোম্পানিয়া ডি নেভিগেশন চট্টগ্রাম ইতালি রুটে জাহাজ চলাচলের ব্যবস্থা করেছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কন্টেনার নিয়ে সরাসরি ইতালির সমুদ্রবন্দর সিভিটাভিসিয়ায় জাহাজ ভিড়বে। ফিরতি পথেও ইতালি থেকে পণ্য নিয়ে জাহাজ ভিড়বে চট্টগ্রামে। প্রাথমিকভাবে এমভি সোঙ্গা চিতা এবং এমভি ক্যাপ ফ্লোরেস নামের দুইটি কন্টেনার জাহাজ দিয়ে এই রুট চালু করা হয়েছে। পরবর্তীতে প্রয়োজনে এই রুটে জাহাজের সংখ্যা বাড়ানো হবে।
এই রুটে প্রথম জাহাজ হিসেবে এমভি ক্যাপ ফ্লোরেস গতমাসে চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছিল। ওই যাত্রায় জাহাজটি ৯৭৫ টিইইউএস খালি কন্টেনার চট্টগ্রাম বন্দরে নামিয়ে দিয়ে চীনের পথ ধরেছিল। প্রথম জাহাজের নামিয়ে দেয়া খালি কন্টেনারগুলো ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ লেখা তৈরি পোশাকে বোঝাই করা হয়েছে। সর্বমোট ৯৮৩ টিইইউএস কন্টেনার নিয়ে আজ দুপুরে এমভি সোঙ্গা চিতা জাহাজটি ইতালির পথ ধরবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, আজই প্রথম কোনো রপ্তানি পণ্যবাহী জাহাজ সরাসরি চট্টগ্রাম থেকে পণ্য নিয়ে ইতালি যাবে। ইতোমধ্যে ইতালি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চট্টগ্রাম বন্দরে এসে জাহাজটির কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন। তারা এই রুটে ব্যবসা বাণিজ্যের আরো প্রসার এবং অনেক বেশি জাহাজ চলাচল করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
জাহাজটির স্থানীয় এজেন্ট রিলায়েন্স শিপিং অ্যান্ড লজিস্টিকস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রাশেদ গতকাল দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে বলেন, আজ দুপুরে এমভি সোঙ্গা চিতা জাহাজটি কন্টেনার নিয়ে ইতালির পথ ধরবে। বন্দরের নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালের ৪ নম্বর বার্থ থেকে জাহাজটি যাত্রা করবে। এই সময় বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান জাহাজটিকে বিদায় জানাবেন। তিনি জাহাজটির আগমন থেকে পণ্য হ্যান্ডলিং এবং ফিরতি পথ ধরা পর্যন্ত বন্দর কর্তৃপক্ষের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ইতালির সিভিটাভিসিয়া বন্দর থেকে সুয়েজ খাল হয়ে এই জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে আসতে সময় লেগেছে ১৬ দিন। অর্থাৎ ১৬ দিনে চট্টগ্রাম থেকে ইউরোপ যাওয়া যাবে। ফলে এক মাসের মধ্যে দুই ভয়েজ সম্ভব না হলেও ৪০দিনে দুই ভয়েজ সম্পন্ন করা যাবে। এতে চট্টগ্রাম থেকে আগেকার যে কোনো সময়ের তুলনায় কম সময়ে রপ্তানি পণ্য ইউরোপ পৌঁছাবে।
বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম একটি বড় ধরনের সম্ভাবনার দুয়ার খুলে গেল বলে মন্তব্য করে বলেন, এই ধারা ধরে রাখতে হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প অনেক বেশি উপকৃত হবে। তিনি দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ৬০ শতাংশ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয় বলে উল্লেখ করে বলেন, এই রুট চালু থাকার অর্থই হচ্ছে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যের সময় এবং অর্থ সাশ্রয়। তিনি এই ধারার সমৃদ্ধি কামনা করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিপিডিএলের নতুন মহাপরিকল্পনা
পরবর্তী নিবন্ধখালেদা জিয়া সুস্থ হওয়ায় বিএনপি নেতারা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন : তথ্যমন্ত্রী