চট্টগ্রাম আদালতে বাড়ছে দুর্নীতির মামলা

এক বছরে যুক্ত ১২১ মামলা, নিষ্পত্তি ২৫ দীর্ঘদিন বিচারক না থাকায় মামলা জমে ছিল : দুদক আইনজীবী

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৮:২২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে এক বছর আগে (২০২০) বিচারাধীন দুর্নীতির মামলা ছিল ১০৭ টি। গত বছর (২০২১) আরো ৫৪ টি যুক্ত হলে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ১৬১ টি। এর মধ্য থেকে গত বছর অন্যত্র বদলি হয় আটটি মামলা এবং নিষ্পত্তি হয় ১০টি। উচ্চ আদালতের নির্দেশে দুটি মামলা স্থগিত হয়। বদলি আর নিষ্পত্তি বাদে বর্তমানে এ আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪৩ এ। শুধু মহানগর দায়রা জজ আদালত নয়, জেলা ও দায়রা জজ এবং বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতেও প্রতি বছর বেড়ে চলেছে বিচারাধীন দুর্নীতির মামলার সংখ্যা। বর্তমানে আদালত তিনটিতে বিচারাধীন দুর্নীতির মামলা ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে গত বছর যুক্ত হয় ১২১ টি মামলা। বিপরীতে নিষ্পত্তির হার খুবই কম। গত বছর মাত্র ২৫ টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে এ তিন আদালতে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু মামলা করেই দুর্নীতি নির্মূল করা যাবে না। মামলাগুলো সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। নিষ্পত্তির পরিমাণ বাড়াতে হবে। মামলা ঝুলে থাকলে দুর্নীতিবাজরা আরো বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এ কথা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আকতার কবিরেরও। তিনি বলেন, এক সময় দুর্নীতি বিষয়টি মানুষের মাথায় ছিল না। কেউ দুর্নীতি করলেও মানুষ জানতো না। এখন তো সেই সুযোগ নেই। সবকিছু এখন প্রকাশ্যে চলে আসে। কিছু কিছু হয়তো আড়ালে থেকে যাচ্ছে। যদিও সেটি ভিন্ন বিষয়। তিনি বলেন, যেসব দুর্নীতির খবর প্রকাশ্যে আসছে সেগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। সময় মতো বিচারকাজ শেষ করতে হবে।
আদালতসূত্র জানায়, মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাশাপাশি জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে দুর্নীতির মামলার বিচার হয়। এ তিনটি আদালতে এক বছর আগে অর্থাৎ ২০২০ সালে মামলা ছিল ৪৩৩ টি। গতবছর ১২১ টি মামলা নতুন করে যুক্ত হলে মোট মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৫৪ টি। এর মধ্যে গত বছর নিষ্পত্তি ও বদলি হয় যথাক্রমে ২৫ ও ১২ টি মামলা। বাদবাকী ৫১৭ টি মামলা বছর শেষে বিচারাধীন থেকে যায়।
আদালতসূত্র আরো জানায়, সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির মামলা রয়েছে চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে। ২০২০ এ আদালতটিতে মোট বিচারাধীন মামলা ছিল ২৯২ টি। গত বছর নতুন করে ৬২ টি মামলা যুক্ত হলে সংখ্যাটি ৩৫৪ তে গিয়ে দাঁড়ায়। এর মধ্যে গত বছর নিষ্পত্তি করা হয় মাত্র ১৩ টি মামলা। অবশিষ্ট ৩৪১ মামলা বর্তমানে উক্ত আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এ দিকে এ আদালতের ৯৭ টি মামলা উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে বলে আজাদীকে জানিয়েছেন বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের পেশকার মো. মুছা।
তিনি বলেন, গত বছর আমরা ২৫ টি মামলা নিষ্পত্তি করেছি। এখন আমাদের ৩৪১ টি দুর্নীতির মামলা রয়েছে। জেলা ও দায়রা জজ আদালতসূত্র জানায়, এক বছর আগে এ আদালতে মামলা ছিল ৩৪ টি। ২০২১ এ নতুন করে যুক্ত হয় ৫ টি। মোট মামলা দাঁড়ায় ৩৯ টি। এর মধ্যে বদলি হয় ৪ টি। নিষ্পত্তি করা হয় দুটি। বদলি ও নিষ্পত্তি বাদে বর্তমানে মামলা সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৩ টি।
দুদক পিপি মাহমুদুল হক আজাদীকে বলেন, এক সময় মানুষ দুর্নীতি বিষয়ে সতেচন ছিল না। এখন সতেচন হয়ে উঠেছে। সরকারও দুর্নীতিগ্রস্থদের ছাড় দিচ্ছে না। অভিযোগ পেলেই তদন্ত হচ্ছে। মামলা হচ্ছে। সে অনুযায়ী মামলা ট্রায়ালে (বিচারে) যাচ্ছে এবং নিষ্পত্তি হচ্ছে। আসামিদের সাজা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা রাষ্ট্রপক্ষ যথেষ্ট চেষ্টা করছি নিষ্পত্তির পরিমাণ বাড়ানোর। এখন নিয়মিত বিচারকও আছেন। কোনো সমস্যা নেই। রায়ের জন্য প্রস্তুত হলেই রায় ঘোষণা হচ্ছে। দীর্ঘদিন বিচারক না থাকায় দুর্নীতির মামলা জমে ছিল বলেও জানান মাহমুদুল হক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচলচ্চিত্র বাংলা ও অসমীয়া সংস্কৃতির যোগসূত্র গড়বে : তথ্যমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধনতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে : প্রধানমন্ত্রী