চট্টগ্রামে ১২ দিনের ব্যবধানে শনাক্ত বেড়ে ২৯ গুণ

ফের করোনার আগ্রাসী থাবা মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্ব বিশেষজ্ঞদের

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৪ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:১৯ পূর্বাহ্ণ

ফের করোনার আগ্রাসী থাবায় চট্টগ্রাম। মহানগরসহ জেলায় মাত্র ১২ দিনের ব্যবধানে সংক্রমণ বেড়েছে ২৯ গুণ! সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতিকে উদ্বেগজনক বলছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিভাগ সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, নতুন বছরের প্রথম দিনে (১ জানুয়ারি) ৯ জনের করোনা শনাক্ত হয় চট্টগ্রামে। আর সর্বশেষ ১৩ জানুয়ারি করোনা শনাক্ত হয়েছে ২৬০ জনের। হিসেবে ১২ দিনের ব্যবধানে শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ গুণ বেশি। শুধু শনাক্তের সংখ্যা নয়, সংক্রমণ বৃদ্ধির হারও উদ্বেগজনক। ১ জানুয়ারি ১ হাজার ৪৮৯ টি নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয় ৯ জনের। শনাক্তের হার ছিল ০.৬০ শতাংশ। ১১ দিনের ব্যবধানে (১২ জানুয়ারি) শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ১২ শতাংশ। ১২ জানুয়ারি ১ হাজার ৭৯০ জনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয় ২২২ জনের। শনাক্তের হার ১২.৪০ শতাংশ। পরদিন (১৩ জানুয়ারি) শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৬০ জনে। শনাক্তের হারও ১০ শতাংশের বেশি।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ডিসেম্বরের শেষ দিকে এসে করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে চট্টগ্রামে। আর জানুয়ারির প্রথম দিকে এসে সংক্রমণ ও শনাক্তের হার লাফিয়ে বাড়ছে। যেন ফের করোনার আগ্রাসী থাবায় চট্টগ্রাম। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এই সময়ে করোনার উপসর্গ হিসেবে সামান্য জ্বর-সর্দি দেখা দিচ্ছে। যা ৩/৪ দিনের ব্যবধানে আবার সেরেও যাচ্ছে। এ ধরনের মৃদু উপসর্গ থাকলেও অনেকেই নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। তারা এটিকে স্বাভাবিক সর্দি-জ্বর ধরে নিয়ে করোনা পরীক্ষা করানোর প্রয়োজন মনে করছেন না। তবে যারা করছেন তাদের বেশির ভাগেরই করোনা পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে। নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়লে সংক্রমণ-শনাক্তের সংখ্যাও আরো বাড়বে বলে মনে করেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ চৌধুরী। অবশ্য আক্রান্ত হলেও অধিকাংশেরই হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হচ্ছে না জানিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের বেশির ভাগই বাসায় বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বিশেষ করে যারা টিকা নিয়েছেন, তাদের শরীরে তেমন জটিলতা দেখা যাচ্ছে না। ফলে এদের অধিকাংশেরই হাসপাতালে যেতে হচ্ছে না। তবে খুব বেশি সংখ্যায় আক্রান্ত হলে সার্বিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় বড় ধরনের চাপ পড়তে পারে বলে মনে করছেন সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ চৌধুরী। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা বলছেন, টিকাদান শুরুর পর করোনা নিয়ে মানুষের উদাসীনতা আরো বেড়েছে। যেন এক ধরণের অবহেলা কাজ করছে মানুষের মাঝে। যার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মানা তো দূরের কথা, অধিকাংশের মুখে মাস্কটিও দেখা যাচ্ছে না। তাছাড়া বিয়ে-গায়ে হলুদ, উৎসব, সংবর্ধনা-সম্মাননাসহ সব ধরণের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান হচ্ছে হরহামেশাই। এসব অনুষ্ঠানে শারীরিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি মানছে না কেউ। এতে করে সংক্রমণ আবারো বাড়ছে হুহু করে। যদিও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে পুনরায় ১১ দফা বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার। যা গতকাল (১৩ জানুয়ারি) থেকে কার্যকর করা হয়েছে। তবে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সকলকে এখনই সচেতন ও সতর্ক হওয়ার বিকল্প জানিয়ে চিকিৎসকরা বলছেন, জনসাধারণের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিধি প্রতিপালনে সরকারকে এখন থেকেই কঠোর অবস্থান নিতে হবে। কেবল কাগজে-কলমে নির্দেশনা জারির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না।
মানুষের উদাসীনতা ও অবহেলার কারণেই করোনার সংক্রমণ আবারো বাড়ছে বলে মনে করেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা টিমের ফোকাল পারসন ডা. আব্দুর রব মাসুম। আর মুখে মাস্ক পরার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে সংক্রমণ পরিস্থিতি ফের আশংকাজনক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
করোনার টিকা নিলেও মুখে মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মেনে চলার বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের উদ্যোক্তা ও প্রধান নির্বাহী ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া। করোনাকালীন বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে অল্প সমেয়র মধ্যে চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতাল গড়ে তুলে সেখানে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেন বিদ্যুৎ বড়ুয়া। তিনি বলেন, করোনা নিয়ে মানুষের মাঝে এক ধরণের উদাসীনতা ও অবহেলা দৃশ্যমান। বিশেষ করে করোনার টিকা নেয়ার পর মানুষের মাঝে এক ধরণের অতি আত্ম-বিশ্বাস ভর করেছে। যার কারণে তারা স্বাস্থ্যবিধি মানা তো দূরের কথা, মুখে মাস্কটিও রাখছে না। এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি আবারো আগের মতো হয়ে যেতে পারে। তাই সকলকে সতর্ক হয়ে করোনা নিয়ে অবহেলা না করার পরামর্শ দিয়ে ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, নিজের ও পরিবারের সুরক্ষার জন্য অবশ্যই অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। পাশাপাশি করোনার টিকা নিতে বিলম্ব করা যাবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধওমিক্রন দ্রুত ছড়াচ্ছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন : প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধপটিয়ায় খামারের কর্মচারীদের বেঁধে ৭টি গরু লুটের অভিযোগ