চট্টগ্রামে মেলার জন্য এক বছরের মধ্যে স্থায়ী ভেন্যুর ব্যবস্থা করা সম্ভব

পলোগ্রাউন্ডে ১৪তম আন্তর্জাতিক উইমেন এসএমই এক্সপোর উদ্বোধনে পররাষ্ট্রমন্ত্রীম দেশ গড়ায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারে উইমেন চেম্বার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অপরাধে গ্রেপ্তার হওয়াদেরও বিএনপি তাদের কর্মী দাবি করছে

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২১ এপ্রিল, ২০২৪ at ৬:৫২ পূর্বাহ্ণ

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে আছে, বিএনপি নেতাদের এই কথা আমরা গত ১৫ বছর ধরে শুনতে পাচ্ছি। তবে চোরাবালিটা এত শক্ত যে, তাদেরকে আরো বহু বছর অপেক্ষা করতে হবে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে চিটাগাং উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত ১৪তম আন্তর্জাতিক উইমেন এসএমই এক্সপোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপির কোনো নেতা কিংবা কর্মীর বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা দেয়া হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো হয়েছে, সেগুলো গাড়ি পোড়ানোর মামলা, পুলিশ এবং মানুষের ওপর হামলার মামলা, এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মামলা। এই সমস্ত মামলায় তারা গ্রেপ্তার হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা বিচারাধীন আছে। তবে বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ও রিজভী সাহেবরা গ্রেপ্তারের যে হিসাব দিচ্ছেন, তাতে মনে হচ্ছে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত যারা প্রতিদিন গ্রেপ্তার হচ্ছে, পুলিশের খাতায় যারা অপরাধী, তাদেরকে বিএনপির কর্মী বলে দাবি করছে। বিএনপি নেতাদের কথায় এটাই মনে হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ চুরিডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানিসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অপরাধে গ্রেপ্তার হয়।

হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি নিজের দলটাকে টিকিয়ে রাখার জন্য গতানুগতিক কিছু কর্মসূচি পালন করে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গাড়ি যখন বসে যায় তখন সেটির ব্যাটারি মাঝেমধ্যে স্টার্টে রাখতে হয়। বিএনপিও পুরনো গাড়ির মত বসে গেছে। বসে যাওয়াতে তারা গাড়ি স্টার্টে রাখার জন্য মাঝেমধ্যে দলটাকে স্টার্ট দেয়। এবং সেজন্য কিছু গতানুগতিক কর্মসূচি পালন করে।

মিয়ানমার জান্তা বাহিনীর যারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে তারা আগামী পরশুদিন যাবে, সেটি কনফার্ম কিনা সাংবাদিকদের প্রশ্নে ড. হাছান বলেন, আমাদের সাথে যেটি আলোচনা হয়েছে তাদের ২২ এপ্রিল নিয়ে যাবার কথা রয়েছে, তবে সেটা অনেক কিছুর উপর নির্ভর করবে। সেখানকার পরিস্থিতি, তাদেরকে পরিবহন করে নিয়ে যাওয়া কতটুকু নিরাপদ, একই সাথে সমুদ্র এবং আবহাওয়া পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে।

এর আগে ১৪তম আন্তর্জাতিক উইমেন এসএমই এক্সপোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. হাছান বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশে নারীর যে ক্ষমতায়ন হয়েছে গত ১৫ বছরে সেটি পৃথিবীর সামনে একটি উদাহরণ। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান সমগ্র পৃথিবীতে পঞ্চম। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আমাদের অবস্থান দ্বিতীয়, অর্থাৎ অস্ট্রেলিয়ার পরে আমাদের অবস্থান। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার নারী, রেকর্ড সংখ্যক নারী মন্ত্রীসভার সদস্য। এছাড়া আমাদের স্থানীয় সরকার পর্ষদে ত্রিশ ভাগ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত। আজ থেকে ১০ বছর আগেও কেউ ভাবেনি জেলার ডিসি, এসপি, উপজেলার বিপুল সংখ্যক ইউএনও নারী হবে। নারী মেজর জেনারেল হয়েছে, নারী হাইকোর্টের জাস্টিস, এফিলিয়েট ডিভিশনের জাজও হয়েছে।

যারা আজকে লম্বা লম্বা কথা বলেন তারা নারীদের উন্নয়নের জন্য কি করেছিল এমন প্রশ্ন রেখে ড. হাছান বলেন, বিএনপিজামাত যখন ক্ষমতায় ছিল তারা নারী উন্নয়নের জন্য কিছু করেনি, তারা নারীদেরকে পিছিয়ে রেখেছিল। আজকে নারীদের উন্নয়নের জন্য কাজ করে চলেছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। সবাই মিলে দেশটাকে গড়তে হয়। দেশ গড়ার দায়িত্ব প্রত্যেকটি নাগরিকের। শুধু সরকার করে দিবে এই মানসিকতা থাকলে দেশ কখনো এগিয়ে যায় না।

ভারতের গরু চোরাকারবারিরাও দেশপ্রেমিক উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ভারত থেকে যে এত গরু আসে কোনো সময় একটা ষাঁড় কিংবা গাভি তারা পাঠায় না, সবগুলো বলদ গরু পাঠায়, যেগুলো নির্জীব, প্রজনন করতে পারে না। কারণ সেগুলো পাঠালে এখানে প্রজন্ম তৈরি হবে, ওখান থেকে আর গরু আসবে না। আর আমরা সেটা মাথায় রাখি না। সুতরাং সবাই মিল দেশটাকে গড়ে তুলতে হবে। এবং সেই দেশ গড়ার ক্ষেত্রে উইমেন চেম্বার বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মেলা করার জন্য যেন একটি স্থায়ী ভেন্যুর ব্যবস্থা করা হয়। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের একটি স্থায়ী ভেন্যু করার বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশা করি আগামী এক বছরের মধ্যে স্থায়ী ভেন্যুর ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে। ভেন্যুর পুরো অবকাঠামো শেষ না হলেও অন্তত মাঠের ব্যবস্থা করা যাবে আশা করছি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে গত ১৫ বছর যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে তার সাক্ষী আজকে চট্টগ্রাম। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এবছর আমরা বর্ষপণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছি হস্তশিল্পকে। এসএমই এবং নারী উদ্যোক্তারা এই বর্ষপণ্যটাকে গ্রাম থেকে শহরে, শহর থেকে সারাদেশে এবং ইকমার্সের মাধ্যম বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য দিলোয়ারা ইউসুফ ও শামীমা হারুন লুবনা। আরো বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআইর সভাপতি মাহবুবুল আলম, জাতীয় মহিলা সংস্থার সভাপতি চেমন আরা তৈয়ব। স্বাগত বক্তব্য রাখেন চিটাগাং উইমেন চেম্বার অ্যান্ড কমার্সের সহসভাপতি ও এক্সপোর চেয়ারম্যান আবিদা মোস্তফা। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য রাখেন চিটাগাং উইমেন চেম্বার অ্যান্ড কমার্সের সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভদ্রতা মানে দুর্বলতা নয়, আমি পালানোর মানুষ নই
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে মেট্রোরেলের সম্ভাব্যতা যাছাই আগামী মাস থেকে