ভদ্রতা মানে দুর্বলতা নয়, আমি পালানোর মানুষ নই

আনোয়ারায় প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা

আনোয়ারা প্রতিনিধি | রবিবার , ২১ এপ্রিল, ২০২৪ at ৬:৫১ পূর্বাহ্ণ

অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেছেন, জনপ্রতিনিধিদের জনগণের কাছে থাকতে হবে। জনপ্রতিনিধিরা জমিদার নয়, শাসক নয়। তৃণমূলের কর্মীরাই আওয়ামী লীগকে বাঁচিয়ে রেখেছে। ভদ্রতা মানে দুর্বলতা নয়। আমি পালানোর মানুষ নই। শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত জনগণের সেবা করে যাব।

তৃণমূল নেতাকর্মীদের আয়োজনে গতকাল শনিবার বিকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল সংলগ্ন গোলচত্বরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কালাম চৌধুরী সভাপতিত্বে ও সাবেক ছাত্রনেতা অহিদুল আলম, জিয়া উদ্দীন ও আজিজুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ওয়াসিকা বলেন, জনগণের পাশে থাকাটাই প্রকৃত নেতার দায়িত্ব। আমার মরহুম পিতা আতাউর রহমান খান কায়সারের কাছ থেকে আমরা সেই শিক্ষাই পেয়েছি। তিনি দেশের মানুষকে ফেলে কখনো দেশ ছেড়ে যাননি। সবসময় নেত্রীর পাশে থেকে জনগণের পাশে ছিলেন। আমিও পালিয়ে যাওয়ার মানুষ নই। আমাকেও অনেক ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। কাজ করতে দেওয়া হয়নি। কাজ করতে গেলে রাস্তা কেটে দেওয়া হয়েছে। আমরা ভদ্রতা দেখাতে চাই। ভদ্রতা মানে দুর্বলতা নয়। শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও জনগণের সেবা করে যাব।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, উন্নয়ন কাজ ঠিকমতো হচ্ছে কিনা নজরে রাখবেন। মনে রাখবেন, যে টাকায় কাজ হচ্ছে সেটা আপনার, আমার টাকা, জনগণের টাকা। তাই কাজ ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা আমাদেরকে বুঝে নিতে হবে। নিজেদের মধ্যে বিবাদ করতে চাই না। এতে দুষ্টরা লাভবান হবে। কিন্তু আমরা দুর্বল নই। ভদ্রতা দেখাচ্ছি, দুর্বল ভাববেন না। তৃণমূল নেতাকর্মীরাই জননেত্রী শেখ হাসিনার বড় শক্তি। তারাই এই দলকে সমসময় পথ দেখিয়েছে, আগামীতেও এগিয়ে নেবে।

এর আগে ২৯ মার্চ একটি অনুষ্ঠানে সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেছিলেন, আনোয়ারাকর্ণফুলীতে কোনো দ্বৈত শাসন চলবে না।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজী মোজাম্মেল হক বলেন, আনোয়ারার রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে। ২০১৬ সালে ইউপি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় আমাকে খুনের আসামি করা হয়েছে। আমার সাথে যারা রাজনীতি করেছে এমন ৩২ জনকে আসামি করা হয়েছে। যুবলীগ নেতা মোজাম্মেল হকসহ অনেকে চার মাসের বেশি জেল কেটেছেন। মোজাম্মেলের শিশুপুত্র, বৃদ্ধ বাবামা দ্বারে দ্বারে কেঁদেছে। আমি নিজেও জেলে গেছি। এখনো আমাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সেই দুর্বৃত্তায়ন থেকে রাজনীতিকে মুক্ত করে সুস্থ রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

প্রধান বক্তা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাহজাদা মহিউদ্দিন বলেন, আনোয়ারাকর্ণফুলীকে সমৃদ্ধির জনপদ বলা হলেও অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে। উচ্চশিক্ষার জন্য এখানে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই। মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়, পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কথা থাকলেও অজানা কারণে তা বন্ধ হয়ে গেছে। আনোয়ারাকর্ণফুলীর উন্নয়নে সবাইকে একতাবদ্ধ থাকতে হবে। তিনি বলেন, চাপরাশি দিয়ে রাজনীতি করলে ভবিষ্যৎ ভালো হয় না। কুকুরের কাজ মানুষের করা শোভা পায় না। রাজনীতি হবে জনকল্যাণের।

সভাপতির বক্তব্যে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, আজকের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান তৃণমূল আওয়ামী লীগের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। হাইব্রিড আওয়ামী লীগের অত্যাচারে তৃণমূল আওয়ামী লীগ গত এক যুগের বেশি সময় ধরে নির্বাসিত। এ ব্যাপারে আমরা অর্থ প্রতিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করি।

বিশেষ অতিথি দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য প্রফেসর ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকলেও আনোয়ারাকর্ণফুলীর রাজনীতিতে তৃণমূল নেতারা বঞ্চিত, নিপীড়িত। অর্থ প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে আনোয়ারাকর্ণফুলীতে সুশাসন ও রাজনৈতিক অধিকার ফিতে পেতে চায়।

সমাবেশে তৃণমূল আওয়ামী লীগের ব্যানারে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের ঢল নামে। সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক খোরশেদ আলম, শ্রমিক নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমদ, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. ইদ্রীস, চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক চেয়ারম্যান মো. আলী, মাঈন উদ্দীন খান পিন্টু, নাজিম উদ্দীন সুজন, দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেহেনা ফেরদৌস চৌধুরী, আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল বশর চৌধুরী, আবুল মনছুর মাঈনুদ্দিন, আতিকুর রহমান চৌধুরী, এইচ এম নজরুল ইসলাম, দিদারুল আলম, দিদারুল আলম টিপু, আহকাম ইবনে জামিল মিশন, মেজবাহ উদ্দীন সোহেল, আজিজুল হক আজিজ প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকরোনাকালে ফিল্ড হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতারা দুঃসময়ের হিরো
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে মেলার জন্য এক বছরের মধ্যে স্থায়ী ভেন্যুর ব্যবস্থা করা সম্ভব