চট্টগ্রামে নবীন-প্রবীণের সমন্বয়

পাঁচ আসনে নতুন, পাঁচ আসনে পুরনোয় আস্থা, বাদ পড়েছেন গতবারের দুই প্রার্থী, জোটের জন্য বরাদ্দ একটি, ৫ আসনে ঘোষণা হবে দ্বিতীয় ধাপে । ১৬ আসনের মধ্যে ১০টিতে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা

মোরশেদ তালুকদার  | মঙ্গলবার , ৪ নভেম্বর, ২০২৫ at ৮:১৯ পূর্বাহ্ণ

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ঘোষিত চট্টগ্রামের ১০টি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় সমন্বয় ঘটেছে নবীন ও প্রবীণের। এর মধ্যে পাঁচ আসনে প্রবীণ অর্থাৎ অতীতেও দলের প্রার্থী হয়েছেন এমন নেতৃবৃন্দের উপর আস্থা রেখেছে দলটি। বাকি পাঁচ আসনের সবাই নতুন, যাদের সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অভিজ্ঞতা নেই। নতুন মুখের নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এমন আসনগুলোর মধ্যে দুইটিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি) শরীক দলকে ছেড়ে দেয় বিএনপি। এছাড়া একাদশ সংসদ নির্বাচনের দুই প্রার্থী নতুন মুখের কারণে এবার সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে চট্টগ্রামসহ সারা দেশের ২৩৭টি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এতে চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে ১০টিতে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়। ঘোষণা করা হয়নি ৬টি আসনের প্রার্থীর নাম। এর মধ্যে একটি আসনে জোটকে ছেড়ে দেয়া হবে। একটিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে আপাতত ঘোষণা করা হয়নি। সেটিসহ ৫ আসনে পরবর্তী ধাপে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবে বিএনপি।

এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যেসব আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি সেখানে বিএনপির সাথে যুগপৎ আন্দোলন করেছে এমন দলগুলো থেকে আসতে পারে। অথবা আমরাও চেঞ্জ করতে পারি। আমরা যেটা ঘোষণা করলাম এটা সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা। স্থায়ী কমিটি যে কোনো সময় প্রয়োজনে এটা পরিবর্তন করতে পারে।

পাঁচ প্রবীণে আস্থা : যে ৫ আসনে বিএনপি প্রবীণের উপর আস্থা রেখেছে সেগুলো হচ্ছেচট্টগ্রাম১০ (ডবলমুরিংপাহাড়তলীহালিশহরখুলশী) আসনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম(মীরসরাই) আসনে উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন, চট্টগ্রাম(বোয়ালখালীচান্দগাঁওপাঁচলাইশ ও বায়েজিদ (আংশিক) আসনে নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, চট্টগ্রাম১২ (পটিয়া) আসনে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম ও চট্টগ্রাম১৩ (আনোয়ারাকর্ণফুলী) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম।

এর মধ্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম১১ আসনে দলের প্রার্থী ছিলেন। এর আগে ১৯৯১ সালে তৎকালীন নির্বাচনী এলাকা, (ডবলমুরিং, পাহাড়তলী, বন্দর) থেকে বেগম খালেদা জিয়া সংসদ সদস্য প্রার্থী হয়েছিলেন। ওইসময় আমীর খসরু বেগম জিয়ার সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীকালে একই বছরে নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম৮ এর উপনির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আমীর খসরু সংসদ সদস্য হিসেবে একই এলাকা থেকে নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমীর খসরু পরাজিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় নি বিএনপি।

এছাড়া এরশাদ উল্লাহ ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম৮ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। অবশ্য সেবার হেরে যান তিনি। এছাড়া নুরুল আমিন ও এনামুল হক এনাম ২০১৮ সালে অনুৃষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন বিএনপির।

এছড়া সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম ২০১৮ একাদশ সংসদ নির্বাচনেও বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। এছাড়া ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন (ষষ্ঠ ও সপ্তম) ও ২০০১ সালে অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন।

সরওয়ার জামাল নিজাম বলেন, আমার উপর আস্থা রাখার জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ইনশাল্লাহ ঐক্যবদ্ধভাবে দলের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে বিপুল ভোটে ধানের শীষ প্রতীককে বিজয়ী করে বিএনপিকে এই আসন উপহার দিব।

এরশাদ উল্লাহ আজাদীকে বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন এবং স্থায়ী কমিটির সকল সদস্যকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। একইসঙ্গে মহান আল্লাহপাকের দরবারে শোকরিয়া জ্ঞাপন করছি। আমি মনে করি, আমার এই মনোনয়ন আমার একার না, এটা চট্টগ্রাম৮ আসনের সকল নেতাকর্মী এবং যাদের ত্যাগ আছে তাদের সকলের মনোনয়ন। সকল নেতাকর্মীকে সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব। আসনটি আমি চেয়ারপার্সন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সনকে উপহার দিতে চাই। চট্টগ্রাম৮ আসনের সকল ভোটারকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। অতীতে তারা যেভাবে ধানের শীষকে বিজয়ী করেছেন এবারও তারা ধানের শীষকে সাপোর্ট ও ভালোবাসা দিয়ে বিজয়ী করবেন বলে আমি আশা করছি।

পাঁচ নতুন মুখ :

চট্টগ্রাম(ফটিছড়িতে) আসনে উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সরওয়ার আলমগীর, চট্টগ্রাম(সীতাকুণ্ড ও চসিকের ৯ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ড) আসনে উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী সালাউদ্দিন, চট্টগ্রাম(হাটহাজারী) আসনে বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম(রাঙ্গুনিয়া) আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম১৬ (বাঁশখালী) আসনে দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পাকে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সম্ভব্য প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরা সবাই নতুন, অর্থাৎ পূর্বে তাদের সংসদ নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা নেই। এই ৫ জনের মধ্যে তিনজন আবার সাবেক তিন মন্ত্রীর সন্তান।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম(হাটহাজারী) আসনটি একাদশ সংসদ নির্বাচনে শরীক দল কল্যাণ পার্টি ও চট্টগ্রাম৭ আসনটি শরীক দল এলডিপিকে ছেড়ে দেয় বিএনপি। এছাড়া চট্টগ্রাম২ আসনে কর্নেল আজিম উল্লাহ বাহার, চট্টগ্রাম৪ আসনে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা লায়ন আসলাম চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম১৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন প্রয়াত জাফরুল ইসলাম চৌধুরী। অর্থাৎ একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হলেও এবার বাদ পড়েছেন আজিম উল্লাহ বাহার ও আসলাম চৌধুরী।

সরওয়ার আলমগীর আজাদীকে বলেন, ফটিকছড়িতে তৃণমূলের বিজয় হয়েছে। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে ফটিকছড়ির আসনটি দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উপহার দিতে চাই।

কাজী সালাহউদ্দিন আজাদীকে বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। দলের নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আশা করছি সবাই পাশে থাকবেন, ধানের শীষের জন্য কাজ করবেন।

জোটের জন্য বরাদ্দ চট্টগ্রাম১৪ :

জোটগতভাবে নির্বাচন করলে চট্টগ্রাম১৪ আসনটি (চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া আংশিক) শরীকদল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে (এলডিপি) ছেড়ে দিবে বিএনপি। তাই গতকাল এ আসনে কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি।

যদিও এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ডা. মহসিন জিল্লুর করিম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক ও চন্দনাইশ উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক নুরুল আনোয়ার চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন চৌধুরী এবং বিএনপি নেতা শফিকুল ইসলাম রাহী।

৫ আসনে বেড়েছে অপেক্ষা :

চট্টগ্রাম(সন্দ্বীপ), চট্টগ্রাম(রাউজান), চট্টগ্রাম(কোতোয়ালী ও বাকলিয়া), চট্টগ্রাম১১ (বন্দর, পতেঙ্গা, ডবলমুরিং, ইপিজেড ও সদরঘাট), এবং চট্টগ্রাম১৫ (লোহাগড়া ও সাতকানিয়া আংশিক) আসনেও দলের কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। অর্থাৎ এই ৫ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অপেক্ষা বেড়েছে।

এ বিষয়ে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মাহবুবের রহমান শামীম আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রাম১৪ আসনটি জোটকে ছেড়ে দেয়া হবে। বাকি আসনগুলোতে দ্বিতীয় ধাপে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে।

এদিকে চট্টগ্রাম৯ আসনে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের নাম গতকাল ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরে তিনি এ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম স্থগিত রাখা হয়েছে জানিয়ে বলেন, এটা পরে ঘোষণা করা হবে। আসনটিতে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আছেন সিটি মেয়র ও নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শামসুল আলম, নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, নগর বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক এস এম সাইফুল আলম এবং নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল।

এদিকে চট্টগ্রাম১৫ আসনে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী ছিলেন জামায়াতের আ ন ম শামসুল ইসলাম। তিনি ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন। এবার জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করার সম্ভাবনা নেই বিএনপির। এবার আসনটিতে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শেখ মো. মহিউদ্দিন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক ও সাতকানিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক জামাল হোসেন, লোহাগাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক নাজমুল মোস্তফা আমিন এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক ও সাতকানিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান।

এছাড়া চট্টগ্রাম ১১ আসনে নগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান ও বিএনপির আর্ন্তজাতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জানা গেছে।

এছাড়া চট্টগ্রাম৬ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী আছেন সাবেক বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান (বর্তমানে পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখালেদা তিন আসনে, তারেক একটিতে নির্বাচন করবেন
পরবর্তী নিবন্ধ১০৮৯ এবতেদায়ী মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত