চট্টগ্রামে এক মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত বেড়ে তিন গুণ

এ পর্যন্ত শতাধিক রোগী শনাক্ত

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৮ আগস্ট, ২০২২ at ৬:২৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মহানগরসহ জেলায় জুন মাসে সব মিলিয়ে ১৯ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। জুলাইয়ে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৪ জনে। হিসেবে এক মাসের ব্যবধানে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা তিন গুণ বেড়েছে। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল সূত্রে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে চমেক হাসপাতাল বাদ দিয়ে মহানগর ও জেলার সরকারি-বেসরকারি অন্যান্য হাসপাতালের তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে সিভিল সার্জন কার্যালয়। চমেক হাসপাতালের তথ্য সরাসরি পাঠানো হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
জানা গেছে, চমেক হাসপাতালে জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ২৭ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। চমেক হাসপাতাল বাদ দিয়ে মহানগরসহ জেলার অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৭৩ জন। হিসেবে এই সময়ে (জানুয়ারি-জুলাই) ১শ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে চট্টগ্রামে। চলতি আগস্টের ৭ দিনে এখন পর্যন্ত ১৫ জনের বেশি রোগী শনাক্তের তথ্য পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে মহানগরসহ জেলায় এ পর্যন্ত শনাক্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা শতাধিক।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৭৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মাঝে গত জানুয়ারিতে ৫ জন ও ফেব্রুয়ারিতে ১ জন রোগী শনাক্ত হয়। মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। জুনে ১৭ জন ও জুলাই মাসে ৫০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। হিসেবে মোট শনাক্ত ৭৩ জনের মধ্যে শেষ দুই মাসে (জুন-জুলাইয়ে) আক্রান্ত হয়েছে ৬৩ জন। বাকি ৬ জন শনাক্ত হয় আগের ৫ মাসে (জানুয়ারি-মে)। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা কীটতত্ত্ববিদ এন্তেজার ফেরদৌস আজাদীকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। শনাক্ত প্রায় সব রোগীই সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে গেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আক্রান্তদের মাঝে কেবল কয়েকজন রোগী বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। চলতি মৌসুমে ডেঙ্গু আক্রান্ত কোনো মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।
এদিকে, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে জুলাই পর্যন্ত ২৭ জন চিকিৎসা নিয়েছে চমেক হাসপাতালে। এর মধ্যে জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ১১ জন, জুন মাসে ২ জন এবং জুলাইয়ে ১৪ জন। চলতি মাসে এখন পর্যন্ত ৮ জন রোগী পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৩৫ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্তের তথ্য মিলেছে এই হাসপাতালে।
আক্রান্তদের মাঝে এ পর্যন্ত কারো মৃত্যু হয়নি বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে ৩ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপের শঙ্কা থাকেই। আর আক্রান্তদের চিকিৎসায় আমাদেরও সার্বিকভাবে প্রস্তুতি রয়েছে। মেডিসিনের তিনটি ওয়ার্ডে আলাদা ডেঙ্গু কর্নার স্থাপন করা আছে। সেখানে আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়া হয়। এই সময়ে এসে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা পর্যায়ক্রমে বাড়ছে বলে জানান তিনি।
ডেঙ্গুর প্রকোপ থেমে নেই উল্লেখ করে সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যায়। এবারও মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে ঠিকই, তবে বেশিরভাগই ডেঙ্গু পরীক্ষা করেনি বা করাচ্ছে না। অনেকে আবার কোনো পরীক্ষা না করে বাসায় বসেই চিকিৎসা নিচ্ছে। করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু নিয়েও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় (চমেক হাসপাতালের তথ্যসহ) ২ হাজার ৫৪৮ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। মৃত্যু হয় অন্তত ৭ জনের। চমেক হাসপাতালের তথ্য ছাড়া ২০২০ সালে ১৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়। সঠিকভাবে রিপোর্টিং না হওয়ায় ওই বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের প্রকৃত চিত্র আসেনি বলে জানান সংশ্ল্লিষ্টরা। পরের বছরের (২০২১ সাল) তথ্যেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়। গত বছর সব মিলিয়ে ৫৫০ জনের বেশি রোগী শনাক্তের তথ্য পাওয়া যায় চট্টগ্রামে। আক্রান্তদের মাঝে অন্তত ৮ জনের মৃত্যুর তথ্য জানায় সিভিল সার্জন কার্যালয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাহাড় কেটে স্থাপনা পরিবেশ অধিদপ্তরের দুটি মামলা
পরবর্তী নিবন্ধইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় বাকবিতণ্ডা, ক্ষোভ