আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় জোট এবং জাতীয় পার্টি ও ছোট ছোট অনেক দল প্রস্তুতি শুরু করেছে। আওয়ামী লীগ নানানভাবে বিভিন্ন সংসদীয় আসনের এমপিসহ সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপারে খোঁজ–খবরও শুরু করে দিয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েক দফা জরিপের ফলাফল দলীয় হাই কমান্ডের টেবিলে পৌঁছেছে। দেশের অন্যান্য জেলার মতো চট্টগ্রামেও মাঠ পর্যায়ে খোঁজ–খবর নেওয়া শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকেই। জরিপে চট্টগ্রামে অনেক এমপির জনবিচ্ছিন্নতার চিত্র উঠে এসেছে। আবার অনেক এমপির জনসম্পৃক্ততার সুখবরও আছে। গত ১২ জানুয়ারি রাতে সংসদ ভবনে সরকারি দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে সরকারি দলের প্রধান ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনে বিতর্কিত এমপিদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, দলীয় প্রধান আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় এমপিদের সতর্কতামূলক বার্তা দিয়েছেন।
আগামী নির্বাচন কঠিন এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে জানিয়ে কারও নাম উল্লেখ না করে ঐদিনের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কে কী করছে তার সব তথ্য আমার কাছে আছে। যাদের বদনাম আছে, নানা অপকর্মে নাম জড়িয়েছে, তাদের আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। জনগণের সঙ্গে যাদের সুসম্পর্ক রয়েছে, জনগণের পাশে যারা দাঁড়ায় তারাই নমিনেশন পাবে। আর যারা জনবিচ্ছিন্ন, এলাকার মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক নেই তাদের দলের মনোনয়ন দেওয়া হবে না। বিভিন্ন মাধ্যমে খবর নিচ্ছি। সবার আমলনামা আমার কাছে আছে। মাঠ জরিপের ভিত্তিতেই আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হবে।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে নির্বাচন কমিশনসহ রাজনৈতিক একাধিক সূত্রে জানা গেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সবাইকে এলাকামুখী হওয়ার কঠোর বার্তা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে হলে জনগণের ঘরে ঘরে, দ্বারে দ্বারে যেতে হবে বলেও কঠোরভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে ১২ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার রাতে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে।
চট্টগ্রামের–১৬ সংসদীয় আসনের মধ্যে মীরসরাই আসনের ৬ বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন না (আর নির্বাচন করবেন না) বলে ঘোষণা দিয়েছেন। উত্তর চট্টগ্রামের ৭টি আসনের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ছাড়া অপর ৬টি আসনের মধ্যে ফটিকছড়ি আসনটি গত দুইবার শরিক দলের তরিকত ফেডারেশনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। জোট অব্যাহত থাকলে আগামী নির্বাচনেও ছেড়ে দেয়া হতে পারে। অপর ৫ আসনের মধ্যে হাটহাজারী আসনটি গত তিনবার জাতীয় পার্টির প্রার্থী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জাতীয় পার্টির সাথে সমঝোতা হলে এই আসনটি ছেড়ে দেয়া হতে পারে। অথবা এই আসনটি ওপেন করে দেয়া হলে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী দেয়া হবে বলে জানা গেছে। অপর ৪টি আসনের মধ্যে একটি আসনে নতুন প্রার্থী দেয়ার কথা শোনা যাচ্ছে নানানভাবে।
এদিকে নগরীর ডবলমুরিং–হালিশহর–খুলশী আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী ডা. আফসারুল আমীন অনেক দিন থেকে শারীরিকভাবে অসুস্থ। আগামী নির্বাচনে নগরীর তিনটি আসনের মধ্যে কোনো কোনো সূত্র দুই আসনে নতুন প্রার্থী দেয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। আবার অন্য একটি সূত্রে নিশ্চিত করেছে একটি আসনে নতুন প্রার্থী দেয়া হবে। এদিকে দক্ষিণের ৬টি আসনের মধ্যে দুটি আসনে নতুন প্রার্থী দেয়ার কথা শোনা যাচ্ছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ডামাডোল কড়া নাড়ছে। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাই প্রাথমিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সারাদেশের মতো চট্টগ্রামে সংসদীয় এলাকাগুলোতে ভোট কেন্দ্রের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে নির্বাচন কর্মকর্তারা। প্রাথমিক প্রাক–প্রস্তুতি শুরু করেছে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন অফিস। জেলা পর্যায়ে জাতীয় নির্বাচনের আগের ভোট কেন্দ্রগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করে তার একটি সঠিক তালিকা তৈরি করে জেলা অফিসে পাঠানোর জন্য উপজেলা ও থানা নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিস থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে মোট ১৬টি সংসদীয় আসন রয়েছে। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামে মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮৯৮টি। আর বুথের সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ৬৮৩টি। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামে ১৫ উপজেলায় ৫৮টি ভোট কেন্দ্র ও ৮১৬টি ভোট কক্ষ বেড়েছিল। ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধি, বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্নজনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভোট কেন্দ্র বৃদ্ধি করা হয়েছিল বলে জানান জেলা নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তারা। এবারও ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে কেন্দ্র সংখ্যা বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তা।