চট্টগ্রামের লোকনাট্য

শামসুল আরেফীন | শনিবার , ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২ at ১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ

সাধারণ লোকজনের জীবন বা গল্প অবলম্বনে যে-নাটক গড়ে উঠে, যা মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত ও প্রচারিত থাকে, তা’ই লোকনাট্য। সাধারণত এই ‘লোকনাট্য লোকসমাজে প্রচলিত ঐতিহাসিক, ধর্মীয় ও লোককাহিনী ভিত্তিক নাট্যাভিনয়’। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, বলতে গেলে প্রায় দেশে প্রাচীনকাল থেকে লোকনাট্য পরিবেশিত হয়ে আসছে। আমাদের দেশের জন্যও একই কথা প্রযোজ্য। আমাদের দেশের লোকনাট্য সম্পর্কে ওয়াকিল আহমদ লিখেছেন : ‘লোকনাট্যের উপস্থাপনায় দুটি স্তর থাকে, প্রস্তুতিপর্ব ও মূলপর্ব। প্রস্তুতিপর্বে মূল কাহিনীর পূর্বে প্রস্তাবনা, সমবেত যন্ত্রসঙ্গীত ও বন্দনা পরিবেশিত হয়; আর মূলপর্বে অভিনয়, নৃত্যগীত, কথা ও সংলাপ, বাদ্য, সঙ বা ভাঁড় ইত্যাদি সহযোগে মূল কাহিনী পরিবেশিত হয়। রাম-সীতা, অর্জুন-দ্রৌপদী, রাধা-কৃষ্ণ, নিমাই সন্ন্যাস, বেহুলা-লক্ষীন্দর, ঈসা খাঁ, দেওয়ান ফিরোজ দেওয়ান, জয়নব-হাসান, সখিনা-কাসেম, হানিফা-জয়গুন, রহিম বাদশা, রূপবান, বাইদ্যানি ইত্যাদি পৌরাণিক, ঐতিহাসিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও লৌকিক বিষয় নিয়ে লোকনাট্য রচিত ও পরিবেশিত হয়। গ্রামের সাধারণ মানুষ সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, অত্যাচার-পীড়ন, সংগ্রাম-বিরোধ, প্রেম-ভালোবাসা, লোভ-লালসা ইত্যাদি মিশ্রিত এসব কাহিনী থেকে আনন্দলাভের পাশাপাশি সৎ-অসৎ, ধর্মাধর্ম, পাপ-পুণ্য ইত্যাদি সম্পর্কেও শিক্ষালাভ করে থাকে”।

চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে লোকনাট্য পরিবেশিত হওয়ার কথা শোনা যায়। পটিয়ার সুচক্রদন্ডী গ্রামের উমাচরণ সাব জজের বাড়িতে, ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে, মহাভারত ও রামায়ণের একটি কাহিনী অবলম্বনে একটি থিয়েটার মঞ্চস্থ হয়েছিল। এটা ছিল পটিয়া অঞ্চলের প্রথম মঞ্চস্থ থিয়েটার। শ্যামাচরণ খাস্তগীরের নির্দেশনায় মঞ্চস্থ হওয়া এই থিয়েটারটি চট্টগ্রামের প্রথম মঞ্চস্থ থিয়েটার বলেও দাবি করা হয়।

চট্টগ্রাম শহরেও তৎকালে লোকনাট্য পরিবেশিত হয়েছে। ১৮৯৭ সালে প্রকাশিত হয়েছিল ‘একশৃঙ্গ নাটক বা ভগবান বুদ্ধদেবের পূর্ব্ব জীবনী’। নাটকটির রচয়িতা চট্টগ্রাম কলেজের সংস্কৃতের অধ্যাপক কৃষ্ণপদ বিদ্যারত্ন (শর্মা)। চৌধুরী জহুরুল হক এই নাটকটির সংগ্রাহক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ নাটকটি পুনর্মুদ্রণ করেছিল। আজ থেকে প্রায় একশত বছর পূর্বে এই নাটকটি মঞ্চায়ন করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। পরবর্তীকালে অর্থাৎ বিশ শতকের প্রথমার্ধে আরও নানাভাবে চট্টগ্রাম শহরে ও শহরের বাইরে বিভিন্ন অঞ্চলে লোকনাট্য পরিবেশিত হয়েছে। এক্ষেত্রে রাউজানের তেজেন্দ্র ধর ও হরেন্দ্র ধরের কথা উল্লেখনীয়। রাউজানের ধর পরিবারের এই ব্যক্তিদ্বয় বিশ শতকের প্রথম দশকে লোকনাট্য পরিবেশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। বোয়ালখালীর কদুরখীলে মিলন মন্দির নামে একটি মন্দির ছিল, যেখানে একটি মুক্ত মঞ্চ ছিল। এটি মণ্ডপ হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

এই মুক্ত মঞ্চে বা মণ্ডপে সার্বজনীন পূজা শেষে প্রতিমা বিসর্জনের পরে একে লোকনাট্য পরিবেশনের মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এছাড়াও বোয়ালখালীর কদুরখীলের বিভিন্ন স্থানে ও কানুনগো পাড়ায়; পটিয়ার ধলঘাট, কেলিশহর, খরনখাইন, হাবিলাস দ্বীপ, বাগদণ্ডী প্রভৃতি এলাকায় লোকনাট্য মঞ্চায়িত হতো। পটিয়ায় তৎকালীন লোকনাট্য মঞ্চায়নে সুবোধ রায় ও বীরেন্দ্র চৌধুরী নামে দু’ব্যক্তি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিলেন। বিশ শতকের প্রথমার্ধে যেসব নাট্য সংগঠন চট্টগ্রাম শহরে ও শহরের বাইরে বিভিন্ন অঞ্চলে লোকনাট্য পরিবেশন করেছিল, সেসব সংগঠনের মধ্যে ‘ডেঙ্গাপাড়া সুহৃদ সংগীত সম্মিলনী’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। সঙ্গীত ও নাটকের এই সংগঠনটির নেতৃত্বে ছিলেন চট্টগ্রামের ডেঙ্গাপাড়ার অশ্বিনীকুমার দাশ। এর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন যোগেশ চক্রবর্তী, সাতকড়ি দাশ, তারাকিঙ্কর ঘোষ, বিজয় দত্ত, শীতল দত্ত, সুরেন ঘোষ প্রমুখ। নাটক পরিচালক ছিলেন ডা. বিনোদ মিত্র। ‘ডেঙ্গাপাড়া সুহৃদ সংগীত সম্মিলনী’ তার প্রতিষ্ঠাকাল থেকে যাত্রা ও পৌরাণিক নাটক মঞ্চায়ন করেছিল। অশ্বিনীকুমার দাশের বাড়ির আঙিনায় নাটক মঞ্চায়নের জন্য মুক্তমঞ্চ স্থাপন করা হয়েছিল।

পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ আমলেও চট্টগ্রাম শহর ও শহরের বাইরের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেক লোকনাট্য পরিবেশিত হয়েছে। চট্টগ্রামের চন্দনাইশ অঞ্চলে এসময়ে লোকনাট্য পরিবেশিত হওয়ার তথ্য তুলে ধরা যাক।

পাকিস্তান আমলে চন্দনাইশের গাছবাড়িয়া অঞ্চলে লোকনাট্য পরিবেশন করার উদ্দেশ্যে ‘সাউথ কালচারাল এসোসিয়েশন’ গঠিত হয়। সভাপতি ছিলেন মীর আহমদ চৌধুরী। গাছবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের একটু উত্তরে ছিল এই এসোসিয়েশনের অফিস। এই সংগঠনের মাধ্যমে গাছবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে অনেক লোকনাট্য মঞ্চায়িত হয়। নাট্য নির্দেশক ও পরিচালক ছিলেন জোয়ারার ভোলা সেন। মঞ্চায়িত লোকনাট্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য : নবাব সিরাজদ্দৌলা, লায়লি-মজনু, গরিবের মেয়ে, টিপু সুলতান ও শিরি-ফরহাদ প্রভৃতি। অভিনয়ে ছিলেন ভোলা সেন, মীর আহমদ চৌধুরী, কাজী ইসলাম, ডা. আহমদ কবির চৌধুরী, সুকুমার চক্রবর্তী, মাস্টার জাকের, মাস্টার খালেক (হাইলধর), উকিল সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিমল, ফোরক চৌধুরী, সিদ্দিক আহমদ, সিরাজুল ইসলাম খুইল্যা মিয়া ও সাধন প্রমুখ। ভোলা সেন ও সাধন নারী চরিত্রেও অভিনয় করতেন। উকিল সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী শুধু নবাব সিরাজদ্দৌলা নাটকে অভিনয় করেন। লোকনাট্যসমূহে অভিনয় করার জন্য বাইরে থেকে অভিনেত্রী আসতেন মাধুরী, ছবি সরকার, শিপ্রা ও মীরা দত্ত প্রমুখ। বলা বাহুল্য, বাংলা সাহিত্যের অনন্যসাধারণ কথাসাহিত্যিক আহমদ ছফাও ‘সাউথ কালচারাল এসোসিয়েশন’-এর মাধ্যমে একটি নাটকে অভিনয় করতে গিয়েছিলেন, যদিও ব্যর্থ হয়েছিলেন। এটা ১৯৫৭ সালের আগের ঘটনা। আহমদ ছফার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম খুইল্যা মিয়া এ-ব্যাপারে বলেন :

“উচ্চ বিদ্যালয়ে থাকাকালীন …(আহমদ ছফা) আমার কাছে পুঁথি পাঠের আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। আমি পুঁথির পণ্ডিত নামে তখন পরিচিত ছিলাম, এখনও পরিচিত। তাঁর সেই আগ্রহ দেখে মাসের পর মাস ধরে তাকে আমি অনেক দুর্লভ পুঁথি পড়িয়েছি।

আমি নাটক মঞ্চায়ন করতাম। আমার কাছে পুঁথি পাঠ করতে করতে এক সময় তার শখ হয়েছিল, নাটকে অভিনয় করবে। ব্যাপারটা আমাকে সে অবগত করলে বলেছিলাম, বেশ, তা’ই হবে। কোন নাটকের যে কোন একটা চরিত্রে তাকে দিয়ে অভিনয় করাতে পারাটা আমার জন্য খুশির কথা ছিল। অভিনেতা তো তৈয়ার করতে হবে। কিন্তু সে আব্দার ধরেছিল তাকে অভিনয় করাতে হবে নায়ক-চরিত্রে। তার এ আব্দারে আমি বিপদে পড়েছিলাম। অন্য যে কোন চরিত্রে তাকে দিয়ে অভিনয় করানো গেলেও নায়ক-চরিত্রে তা করানো সম্ভব ছিল না। কেননা তার চেহারা বিশেষ ভাল ছিল না। আমি বলেছিলাম, নায়ক-চরিত্রে তোমাকে মানাবে না। সে বলেছিল, মানাবে আলবৎ। আমি তাকে অত্যন্ত স্নেহ করতাম। নায়ক-চরিত্রে অভিনয় সে করতে না পারলে মন খারাপ করবে, এটা মেনে নেয়া আমার পক্ষে অসহ্য ছিল। অতএব একটা নাটকের নায়ক-চরিত্রে তাকে অভিনয় করাতে আমি প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলাম। কিছুদিন ধরে রিহার্সেল চলেছিল। যেদিন নাটকটি মঞ্চায়িত হবে তার আগে আমি তাকে বলেছিলাম, সফল হবে তো ? সে প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেছিল, হ্যাঁ। কিন্তু সে মঞ্চে উঠেই আমাকে চরমভাবে হতাশ করেছিল। পাথরের মত স্থির হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সে অবস্থাতে আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কী হলো, ভাতিজা? সে জবাব দিয়েছিল, সংলাপ ভুলে গেছি, চাচা। …

আমার মনে হয়, জীবনের শেষ নিঃশ্বাস অব্দি আহমদ ছফার কিছু করতে না পারার মতো যদি ছিল, তা হচ্ছে, শুধুমাত্র নাটকের কোনো চরিত্রে অভিনয় করা”।
‘সাউথ কালচারাল এসোসিয়েশন’-এর মাধ্যমে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী কয়েক বছরও গাছবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে লোকনাট্য মঞ্চায়ন করা হয়। ১৯৭৫/৭৬ সালে গাছবাড়িয়ায় গঠিত হয় ‘চন্দনা সাংস্কৃতিক একাডেমি’। গাছবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক, কাঞ্চননগর নিবাসী, হোমিও ডাক্তার আবু তৈয়ব সংগঠনটি পরিচালনা করতেন। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আবু তৈয়ব, লিয়াকত আলী চৌধুরী, হারুন আল জাফর চৌধুরী ও ফরিদুল আলম প্রমুখ। হারুন আল জাফর চৌধুরী সংগঠনটির সূচনা সঙ্গীত রচয়িতা। সংগঠনটির মাধ্যমে মঞ্চায়িত উল্লেখযোগ্য লোকনাট্য : হিংসার পরিণাম, সেলিম-সেলিনা, প্রেমের মরণ ও একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার প্রভৃতি। অভিনয়ে ছিলেন আবু তৈয়ব, লিয়াকত আলী চৌধুরী, ফরিদুল আলম, মিলন শীল ও আবুল কাসেমসহ অনেকে। একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার মঞ্চায়িত হয় ১৯৯৬ সালে।

পাকিস্তান আমলের গোড়ার দিক থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত চন্দনাইশের সাতবাড়িয়ায় লোকনাট্য বিষয়ক অনেক কর্মকাণ্ড ছিল। সেখানে এসময়ের মধ্যে অনেক লোকনাট্য মঞ্চায়িত হয়। ১৯৭৬/৭৭ সালে মঞ্চায়িত হয় তিনটি নাটক-এক মুঠো অন্ন চাই, উদয় নালা এবং নবাব সিরাজদ্দৌলা। নাটকত্রয়ে অভিনয় করেন আহমদ কবির তহশিলদার, আবুল বশর ম্যানেজার, সিরাজুল ইসলাম, সাইফুল্লাহ্‌, শুভপতি বড়ুয়া, মৃদুল বড়ুয়া, তিলক চৌধুরী, দিদারুল আলম (দরফ আলী ভুঁইয়া), আবদুল মোনাফ, রোণা বড়ুয়া, সাবিনা ইয়াসমিন, মোজাম্মেল হক, হুমায়ুন কবির (পরবর্তীতে মাস্টার), নিলয় বড়ুয়া বাবু, হাবিবুল্লাহ্‌ জাহেদি ও কামাল উদ্দিন সাধু প্রমুখ। বাইরে থেকে এসে নাটকত্রয়ে অভিনয় করেন মুক্তি চক্রবর্তী, ছবি সরকার, মীরা দত্ত ও ইতি চক্রবর্তী প্রমুখ। ১৯৮১ সালে সাতবাড়িয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় বীণা শিল্পীগোষ্ঠী। প্রতিষ্ঠাতা হুমায়ুন কবির। ১৯৮৫ সালে তিনি বীণা শিল্পী গোষ্ঠীকে সাতবাড়িয়া শিল্পী ও নাট্যগোষ্ঠীতে রূপান্তরিত করেন। ১৯৮৫ সালের ডিসেম্বর মাসে এই সংগঠনের উদ্যোগে সাতবাড়িয়া হাই স্কুল মাঠে ’৭১ নামে নাটক পরিবেশিত হয়। এরপর ১৯৮৬ সালে ‘আমরা ক’জন’ এবং ১৯৯১ সালে ‘শেষ রক্ত’ নামে দু’টি নাটক মঞ্চায়ন করা হয়। নাটকত্রয়ে অভিনয় করেন হুমায়ুন কবির, চুমকি বড়ুয়া, বিপ্লব বড়ুয়া, পিকলু বড়ুয়া, আবু খালেদ, টিটু বড়ুয়া, সাথী বড়ুয়া, নুরুল আমিন, প্রকৌশলী তানভির আনসারী, লিটন বড়ুয়া, সিটু কুমার বড়ুয়া, গিয়াস উদ্দিন ভুট্টো (নায়ক চরিত্রে), অনুকর বড়ুয়া, সেলিম উদ্দিন, সৃজনী চৌধুরী, শ্রাবণী চৌধুরী ও সাথী বড়ুয়া-২ প্রমুখ। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত নাটকত্রয় আরও অনেকবার মঞ্চায়িত হয়। তখন সোহেল মো. ফখরুদ্দীন প্রমুখ সহযোগিতায় ছিলেন।

ব্রিটিশ শাসনামলের শেষদিকে দোহাজারীতে লোকনাট্য পরিবেশন করার উদ্দেশ্যে দোহাজারী-জামিজুরী নাট্যগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা স্থানীয় সূত্রে প্রকাশ রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তীকাল পর্যন্ত এই সংগঠন দোহাজারী আহমদুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়, দোহাজারী হাজারী মন্দির প্রাঙ্গণ, জামিজুরী বড়ুয়া পাড়া মন্দির প্রাঙ্গণ, জামিজুরী হিন্দু পাড়া কালীমন্দির প্রাঙ্গণ, দোহাজারী রাশিয়া ফিল্ড ইত্যাদি স্থানে অনেক নাটক মঞ্চায়ন করেছে। এসব নাটকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জ্বলন্ত বারুদ, মানুষ, উদয় নালা, নবাব সিরাজদ্দৌলা, কর্ণ-অর্জুন, চাষার ছেলে, সিঁদুর নিও না মুছে, একটি পয়সা, মায়ের চোখে জল, মা কেন কলঙ্কিনী, রক্ত দিল যারা, রাঙ্গা রাখি, শেষ আরতি, রাজা হরিশ্চন্দ্র, ভাওয়াল সন্ন্যাসী, টিপু সুলতান, মহারাজ নন্দকুমার, ভাঙছে শুধু ভাঙছে ও নটি বিনোদিনী। সংগঠনটি প্রায় ৫০টি নাটক মঞ্চায়ন করেছিল। এসব নাটকে অভিনয় করেন দোহাজারীর জেবরমুল্লুক খান, সামশুল আলম, মাস্টার আবদুল মালেক, মাহবুবুর রহমান, জামালুর রহমান খান, নজরুল ইসলাম খান, মো. রফিক, শাহ্‌ আলম মেম্বার, আবুল বশর, রশীদ মেম্বার (এম এ রশীদ), নবাব মিয়া, এস এম নাসির উদ্দিন বাবলু, কালা মালেক, মো. সোলেমান এবং জামিজুরীর ডা. সূর্যকুমার ভট্টাচার্য, ডা. বগলা প্রসাদ ভট্টাচার্য, ডা. মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, পেয়ারী মোহন দাশ, হরেন্দ্রলাল দাশ, নিকুঞ্জ ভট্টাচার্য, বাদল মল্লিক, প্রফুল্লরঞ্জন বড়ুয়া, আবদুল গফুর, সিরাজ, কেনু, মো. শফি, দেবেন্দ্র মল্লিক, মনু, প্রমথনাথ ভট্টাচার্য, বাবুল কান্তি ভট্টাচার্য, অনুপম চক্রবর্তী, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, গোপাল সরকার, হারাধন সরকার, দুলাল সরকার, বাবুল ভট্টাচার্য, ডা. সুনীল ভট্টাচার্য (পিতা-ডা. বগলা প্রসাদ ভট্টাচার্য), সুশীল ভট্টাচার্য, সুবোধ ভট্টাচার্য, সন্তোষ চক্রবর্তী, কাজল চক্রবর্তী, স্বপন মজুমদার, শিশির মজুমদার, নিখিল চক্রবর্তী, দিলিপ দাশগুপ্ত, প্রভাষ দাশগুপ্ত, বাদল দাশ, বাবুল শীল, অনিল বড়ুয়া, দিলিপ বড়ুয়া, প্রিয়তোষ বড়ুয়া প্রমুখ।

১৯৭৫ সালের ০১ জানুয়ারি গঠিত হয় দোহাজারী সৌখিন নাট্যগোষ্ঠী। একুশ শতকের শূন্য দশকের শেষকাল পর্যন্ত এই নাট্যগোষ্ঠীও প্রাগুক্ত নাটকগুলো দোহাজারী ও দোহাজারীর বাইরে বিশেষ করে বান্দরবান রাজবাড়ি, সাতকানিয়ার নলুয়া, পটিয়ার চক্রশালায় মঞ্চায়ন করেছিল। এসব নাটকে অভিনয় করেন দোহাজারীর গণেশ চন্দ্র দে (পিতা-ডা. সাধন চন্দ্র দে; চাগাচর), রশীদ মেম্বার (পিতা-হাজি আবদুল ওয়াহেদ), দিলিপ কুমার দত্ত মিন্টু (পিতা-প্রেমানন্দ লাল দত্ত), মিন্টু নাথ (পিতা-সুধাংশু বিমল নাথ), এস এম নাসির উদ্দিন বাবলু, এস. এ. মিন্টু, মৃদুল দে, শাহ্‌ আলম মেম্বার, নবাব মিয়া, শিবুরবি দাশ, দেলোওয়ার হোসেন খান, আবুল কালাম শামসুদ্দিন এবং জামিজুরীর ডা. সুনীল ভট্টাচার্য (পিতা-ডা. বগলা প্রসাদ ভট্টাচার্য), স্বপন কুমার চৌধুরী (পিতা-অশ্বিনি কুমার চৌধুরী), ডা. মৃদুল কান্তি বড়ুয়া (পিতা-প্রফুল্লরঞ্জন বড়ুয়া), বিষ্ণুযশা চক্রবর্তী (পিতা-সুবোধ চন্দ্র চক্রবর্তী) প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের সাহিত্যচর্চা
পরবর্তী নিবন্ধমুয়িন গীতি