চট্টগ্রামকে আরো গুরুত্ব দিতে হবে

আপগ্রেড করতে হবে বন্দর পদে লোভ নেই, চেষ্টার ত্রুটি নেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা উদ্বোধনে বাণিজ্যমন্ত্রী

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১ জুন, ২০২২ at ৮:১৯ পূর্বাহ্ণ

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে যদি দাম বাড়ে আমরা কমাতে পারব না। আন্তর্জাতিক বাজারে যদি দাম কমে, দেশেও কমে যাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেটা করছেন, ভর্তুকি মূল্যে সাধারণ মানুষের কাছে পণ্য পৌঁছে দেওয়া, সেটা আমরা করছি। আমরা আশাবাদী যে, তেলের দাম কমতে শুরু করবে। পাম অয়েলের দাম এখন নিম্নমুখী, কিন্তু সয়াবিন তেলের দামটা এখনও কমেনি। তবে বিপদ যখন আসে গ্লোবালি আসে। আমরাও তো মেম্বার অব দ্য গ্লোবাল ফ্যামিলি। সেটা আমাদের সইতেই হবে। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা একটু সাশ্রয়ী হই। গতকাল বিকেলে নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে ২৯তম চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ আয়োজিত মাসব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

এর আগে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, জিনিসপত্রের দাম নিয়ে কথা উঠেছে। তেলের দামের কথা উঠেছে। আমি হিসাব দিইএই মুহূর্তে পাশের দেশ ভারতে তেলের দাম আমাদের চেয়েও ১৫ টাকা বেশি। আর পাকিস্তানে বেশি ৩৬ টাকা। আমাদের ৯০ ভাগ তেল আমদানি করতে হয়। আর্জেন্টিনা, ব্রাজিলে যদি তেলের দাম বাড়ে, তাহলে আমরা কম দামে খাওয়াব কিভাবে? ব্যবসায়ীরা তো সেখান থেকেই তেল কিনে এনে বিক্রি করছেন। সরকার যেটা পারে, ভ্যাটটা উইথড্র করতে পারে এবং সরকার সেটা করেছে। ডাল, গম আমাদের আমদানি করতে হয়। যেসব দেশ থেকে আমদানি করা হয়, সেখানে দাম বাড়ছে। এরপরও আমাদের চেষ্টার ত্রুটি নেই। মানুষকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি, সেই চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি। টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি মানুষকে সাশ্রয়ী মূল্যে খাদ্যপণ্য আমরা দিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে কমিউনিস্ট পার্টি দাবি করেছিলবাণিজ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাই। আমি সব সময় বলিআমার এই পদের প্রতি লোভ নেই। মুহূর্তের মধ্যেই সরে যেতে পারব, কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আমাকে গ্যারান্টি দিতে হবে যে, আমি পদত্যাগ করলে আর্জেন্টিনাব্রাজিল তেলের দাম কমিয়ে দেবে, মালয়েশিয়াইন্দোনেশিয়া পাম অয়েলের দাম কমিয়ে দেবে। আমি তাদের কাছে সেই গ্যারান্টি চেয়েছিলাম। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলাম, আমি পদত্যাগ করব কি না? প্রধানমন্ত্রী বললেন, যারা পদত্যাগ চায় তাদের জিজ্ঞেস কর, তারা এসে দাম কমাতে পারবে কি না? তাহলে তাদের মন্ত্রী বানিয়ে দেবো। পদত্যাগ করতে হবে, এসব কথা শুধু বলার জন্য বলা, কাউকে ছোট করার জন্য বলা।

টিপু মুনশি আরও বলেন, এই চট্টগ্রামের মাটি অনেক বীর, আউলিয়ার দেহ রেখেছে। সাগরের মতো বিশাল মন চট্টগ্রামের মানুষের। ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী। চট্টগ্রাম দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন, গেটওয়ে। চট্টগ্রামের ওপর আমাদের নির্ভর করতে হয়। সেই চট্টগ্রামকে আরো গুরুত্ব দেওয়া দরকার। বন্দরকে আপগ্রেড করতে হবে। আশা করি ৬০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করতে পারব এবার। মহাসড়কে ১৩ টনের বাধা পণ্যের ওপর পড়বে। এক সময় চট্টগ্রাম এলে পাহাড়ের মাঝে শহর দেখতাম। সমুদ্রের হাতছানি দিত। এখন ঢাকা থেকে ট্রেন কক্সবাজার পর্যন্ত যাবে। ১৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে সেই চট্টগ্রাম চাই।

চট্টগ্রাম১১ আসনের সংসদ সদস্য এম লতিফ বলেছেন, চট্টগ্রামঢাকা মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দেশের অবকাঠামো উন্নয়নকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন যাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যায়। মেগা প্রকল্পগুলোর কারণে চট্টগ্রামের সাথে সারা পৃথিবীর যোগাযোগ বৃদ্ধিই প্রমাণ করে দেশের উন্নতি। স্থিতিশীল সরকার থাকার কারণে ধারাবাহিক উন্নয়ন হয়েছে। আগামী ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা থাকলে বাংলাদেশ ৮টি উন্নত দেশের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হবে। টিসিবি’র মাধ্যমে সরকার ভর্তুকিমূল্যে সাধারণ জনগণের কাছে ভোগ্যপণ্য বিক্রি করছে। তিনি চট্টগ্রামে মানসম্পন্ন সাইলো নির্মাণের দাবি জানান।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, চট্টগ্রাম ও বন্দরের ইতিহাস হাজার বছরের। চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী করতে হলে বাণিজ্যের সকল উপাদান চট্টগ্রামে থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে চট্টগ্রামের চেহারা বদলাতে শুরু করেছে। কর্ণফুলী টানেল দক্ষিণপূর্ব এশিয়াতে প্রথম। মীরসরাই ইকোনমিক জোনে ১৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। কাজেই চট্টগ্রামের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশ সমৃদ্ধ হবে। তিনি চট্টগ্রামঢাকা মহাসড়কে ১৩টন ওজন নিয়ন্ত্রণের বিষয় বিবেচনা করার জন্য মন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান। একই সাথে সুন্দর চট্টগ্রাম মহানগর গড়ে তুলতে নগরবাসীর সচেতনতা ও সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন।

চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেছেন, গত ২৮ বছর ধরে চেম্বার দেশীয় বিশেষ করে এসএমই উদ্যোক্তাদের পণ্য প্রদর্শন ও পরিচিতির সুবিধার্থে চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা আয়োজন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২৯তম মেলা আয়োজন করা হচ্ছে। তিনি মেলার জন্য একটি স্থায়ী ভেন্যুর দাবি জানান যেখানে সারা বছরব্যাপী সব ব্যবসায়ী সংগঠন মেলা আয়োজন করতে পারেন। চেম্বার সভাপতি অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে ২০২৫ সালের মধ্যে বেটার্মিনাল নির্মাণ সম্পন্ন করা, চট্টগ্রামঢাকা মহাসড়ক ৮ লেনে উন্নীতকরণ, সরকারিবেসরকারি ব্যাংকসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক দপ্তরের ক্ষমতায়ন, মীরসরাই ইকোনমিক জোন দ্রুত বাস্তবায়ন, ব্লুইকোনমি নীতিমালা প্রণয়ন এবং রপ্তানি বৃদ্ধিতে পণ্য বহুমূখীকরণের উপর গুরুত্বারোপ করেন।

চট্টগ্রাম চেম্বার সহসভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় নেতৃত্বে দেশব্যাপী ভ্যাক্সিনেশন প্রোগ্রাম পরিচালনার সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ও তা বাস্তবায়নের ফলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় কোভিড নিয়ন্ত্রণে আমাদের দেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভ করে। ফলে জীবন যাত্রা স্বাভাবিক হওয়ায় চেম্বার চট্টগ্রামবাসীর এই প্রাণের মেলা আয়োজন করছে।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, বাণিজ্যমেলা কমিটির চেয়ারম্যান একেএম আকতার হোসেনসহ প্রমুখ।

উল্লেখ্য, এবারের মেলায় ১৭টি প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, ৩৬টি প্রিমিয়ার স্টল, ৯৯টি গোল্ড স্টল, ৪৮টি মেগাস্টল, ১৪টি ফুড স্টল, ২টি আলাদা লোন নিয়ে ৩৭০টি স্টলে ৩১০ এর বেশি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে। সর্বসাধারণ যাতে ব্যাপক হারে এ মেলা পরিদর্শন করতে পারে, সে লক্ষ্যে দর্শনার্থীর টিকিটের মূল্য গতবারের মতো ১৫ টাকা রাখা হয়েছে। মাসব্যাপী এ মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে এবার এসএসসি পরীক্ষায় বসছে দেড় লাখ পরীক্ষার্থী
পরবর্তী নিবন্ধপাল্টেযাবে জাতিসংঘ পার্ক