পাল্টেযাবে জাতিসংঘ পার্ক

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১ জুন, ২০২২ at ৮:১৯ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘ প্রায় অর্ধযুগ ধরে ‘পরিত্যক্ত’ অবস্থায় থাকা নগরের জাতিসংঘ পার্কের উন্নয়নে গৃহীত একটি প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে পরিকল্পনা কমিশনে। ‘পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় আধুনিক সুযোগসুবিধা সম্পন্ন জাতিসংঘ সবুজ উদ্যান স্থাপন’ শীষর্ক এ প্রকল্পটি ২০১৭ সালে ১২ কোটি ১২ লাখ ১৯ হাজার টাকায় গ্রহণ করে গণপূর্ত অধিদপ্তর। ওই সময় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) আপত্তিতে প্রকল্পটি আটকে যায়। সর্বশেষ সংশোধনের পর প্রকল্পটি গত ১৮ মে পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এর আগে গত বছরের ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভায় প্রকল্পটি নিয়ে একাধিক পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম গণপূর্ত অধিদপ্তর প্রকল্পটি সংশোধন করে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর তা প্রেরণ করা হয় পরিকল্পনা কমিশনে।

জানা গেছে, ৫০ কোটি টাকার বেশি হলে ওই প্রকল্প বাস্তবায়নে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি বা একনেক সভার অনুমোদন প্রয়োজন হয়। ওই হিসেবে জাতিসংঘ পার্ক উন্নয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে একনেক সভার অনুমোদন লাগবে না। অর্থাৎ পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদন হলেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কাজ শুরু করা হবে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পাল্টে যাবে পার্কটি। এটা সবুজে ভরে উঠবে। সংশোধিত প্রকল্পে পার্কে বিদ্যমান সুইমিংপুল ও জিমনেশিয়াম ভাঙার সুপারিশ করা হয়। সুইমিং পুল ও জিমনেশিয়ামের জায়গাসহ পুরো পার্কটির উন্নয়ন করা হবে। চরপাশে দেয়া হবে সীমানা দেয়াল। নির্মাণ করা হবে ওয়াকওয়ে। দর্শনার্থীদের বসার জন্য থাকবে বেঞ্চ। মাঝখানে ঝর্ণা থাকবে। লাইটিং করা হবে। টয়লেট জোন থাকবে। বাউন্ডারি করা হবে গ্রিল দিয়ে। যাতে বাইরে থেকে ভেতরে দেখা যায়। বর্তমানে পার্কটির চারপাশের রাস্তার চেয়ে প্রায় পাঁচ ফুট নিচু। ফলে বৃষ্টি হলে সেখানে পানি জমে যায়। তাই প্রকল্পে পাঁচ ফুট উচ্চতা ধরে প্রকল্পে ভূমি উন্নয়ন ব্যয় প্রস্তাব করা হয়।

এদিকে চসিকের পক্ষ থেকেও পার্কটি নিয়ে প্রস্তাব দেয়া হয় গণপূর্ত অধিদপ্তরকে। প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে রয়েছে, পার্কে সাইকেল লেন করা, মুক্ত মঞ্চ করা, দর্শনার্থীদের জন্য বসার জায়গা করা এবং বিদ্যমান কোনো গাছ না কাটা। এছাড়া পার্কটি রাস্তা থেকে কমপক্ষে দুই ফুট উঁচু করতে বলা হয়।

এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তর চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের পর প্রকল্পটি ১৮ মে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। তিনি বলেন, পার্কটির মূল সুবিধাভোগী পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার লোকজন সেখানে সুইমিং পুল ও জিমনেশিয়াম চান না। পরিকল্পনা কমিশনের নির্দেশে গঠিত পর্যালোচনা কমিটিও এ বিষয়ে একমত হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের আরো কিছু অবজার্ভেশন ছিল, সে আলোকে সংশোধন করেছি। চসিকের প্রস্তাবনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চূড়ান্ত নকশা করার সময় সেগুলো যুক্ত করা হবে।

জানা গেছে, পুরো পার্কটি দুই দশমিক ২৭ একর জায়গার উপর অবস্থিত। চসিক ২০০২ সালে জাতিসংঘ পার্ক নামকরণ করে। শিশু কিশোরসহ বিনোদন প্রেমী মানুষের কাছে এ পার্কটি সে সময় দর্শনীয় স্থান হিসাবে মন জয় করে নেয়। কিন্তু দিনে দিনে পার্কটির প্রতি অবহেলা আর অযত্নের চাপ পড়তে থাকে। এতে পার্কটি জৌলুস হারায়। এটি প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পৌঁছে যায়। ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে পার্কের পুকুরটিও।

পরে ২০১৫ সালের জুন মাসে তিন কোটি ৯৪ লাখ টাকায় পার্কে দুইটি সুইমিংপুল ও জিমনেশিয়াম নির্মাণ করে চসিক। অবশ্য ২০১২ সালে যার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম। এরপর ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ সুইমিং পুল এবং জাতিসংঘ পার্ককে ঘিরে বাণিজ্যিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় চসিক। বিষয়টি নিয়ে দৈনিক আজাদীতে প্রতিবেদন প্রকাশের পর পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা কল্যাণ সমিতির পক্ষে উচ্চ আদালতে রিট করা হয়। এতে আটকে যায় চসিকের প্রকল্প।

পরবর্তীতে ২০১৭ সালে গণপূর্ত অধিদপ্তর তাদের প্রকল্প নেয় পার্কের উন্নয়নে। তবে একই বছরের ৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় চসিক গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পটির বিরুদ্ধে আপত্তি জানান। এতে স্থগিত করা হয় গণপূর্তের প্রকল্পটি। তবে ২০২০ সালের শেষের দিকে চসিক তাদের আপত্তি প্রত্যাহার করে নেয়। এতে গতি পায় গণপূর্তের প্রকল্পটি। এরপর ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত পিইসি সভায় গণপূর্তের প্রকল্পটি নিয়ে একাধিক পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়। এতে জিমনেসিয়াম এবং সুইমিংপুলের বিদ্যমান অবস্থা পর্যালোচনা এবং এগুলো ভেঙে পুননির্মাণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে যচাইয়ের সিদ্ধান্ত হয়। এ লক্ষ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, সিএমপি, চসিক এবং গণপূর্ত অধিদপ্তর চট্টগ্রামের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি কমিটি করা হয়। ওই কমিটি সুইমিংপুল ও জিমনেশিয়াম ভাঙার বিষয়ে একমত হয়।

চসিকের নগরপরিকল্পনাবিদ আবদুল্লাহ আল ওমর দৈনিক আজাদীকে বলেন, সুইমিংপুল নিয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে কোনো চিঠি পাইনি। আমরা বলেছি, তারা যদি সুইমিং পুল ভাঙার প্রস্তাব দেয় সেক্ষেত্রে আমরা ভেঙে ফেলব।

এদিকে গতকাল সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, সীমানা দেয়ালহীন পার্কটি পরে আছে অরক্ষিত অবস্থায়। পার্কের মাঝখানে জমে আছে পানি। শহীদ নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, পার্কে কেউ আসে না। মাঝেমধ্যে সন্ধ্যার পর মাদকসেবীদের দেখা যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামকে আরো গুরুত্ব দিতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধএবার চট্টগ্রাম উপকূলের দিকে এগোচ্ছে বর্ষা