ঘুমন্ত মায়ের পাশ থেকে ৪ মাসের শিশু অপহরণ

দেড় লাখ টাকায় বিক্রির চেষ্টা, আপন জেঠাসহ তিন অপহরণকারী গ্রেপ্তার

চকরিয়া প্রতিনিধি | শুক্রবার , ১ এপ্রিল, ২০২২ at ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ

দেড় লাখ টাকায় বিক্রির জন্য ঘুমন্ত মায়ের পাশ থেকে চার মাসের শিশুকে অপহরণ করেছে তার জেঠা। অপহরণকারী চক্রের আরো দুইজনের সহায়তায় শিশুটিকে বিক্রির উদ্দেশ্যে গাড়িতে করে চট্টগ্রাম মহানগরীতে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু শিশুটির কান্নায় চলন্ত গাড়ির যাত্রীরা জেঠাকে চ্যালেঞ্জ করেন। এরই মধ্যে শিশুটির মা স্থানীয়দের সহায়তা খবর পৌঁছান চকরিয়া থানা পুলিশের কাছে। পুলিশ সম্ভাব্য বিভিন্নস্থানে বার্তা পাঠায়। অবশেষে বুধবার ভোরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কর্ণফুলী এলাকায় পুলিশের চেকপোস্টে ধরা পড়ে জেঠাসহ অপহরণকারী চক্রের তিন সদস্য। উদ্ধার হয় শিশুটিও। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটির সূত্রপাত হয় কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের ডেইঙ্গাকাটাস্থ আলী হোসেনের ছেলে বাদশা মিয়ার বাড়ি থেকে।
পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় শিশুর মা জোসনা আক্তার বাদী হয়ে ভাসুর আল আমিন সহ অপহরণকারী চক্রের তিনজনের বিরুদ্ধে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চকরিয়া থানায় অপহরণসহ সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করেন। আল আমিন (২৬) বরইতলীর ডেইঙ্গাকাটা গ্রামের আলী হোসেনের ছেলে। মামলার অপর দুই আসামি হলেন, রাঙ্গুনিয়ার পদুয়া ইউনিয়নের খুদুর বিল গ্রামের মো. ফারুকের ছেলে মোহাম্মদ আরিফ (২৪) ও নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার দক্ষিণ হাতিয়াস্থ সাগুরাবাজার এলাকার মোজাম্মেলের ছেলে মো. নুরুন্নবী (২৫)। তিনজনই চট্টগ্রাম মহানগরীতে রিকশা চালানোর পাশাপাশি নানা অপরাধকর্মের সঙ্গে জড়িত বলে পুলিশ জানিয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চকরিয়া থানায় দেখা হয় শিশুর মা জোসনা আক্তার, স্বামী বাদশা মিয়াসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে। এ সময় মা জোসনা আক্তারম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘আমার স্বামীও চট্টগ্রাম শহরে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। বাড়িতে শাশুড়ির সঙ্গে আমি দুগ্ধপোষ্য চার মাসের সন্তান নুরুল কাদেরকে নিয়ে থাকি। গত বুধবার ভোররাত আনুমানিক তিনটার দিকে কৌশলে বাড়ির দরজা খুলে আমার রুমে ঢুকে পড়েন ভাসুর আল আমিন। তখন আমি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলাম। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য ভোর চারটার দিকে আমার ঘুম ভাঙে। তখনই আমি বিছানায় দেখতে পাই আমার কোলের সন্তান নেই। এ সময় চিৎকার দিলে বাড়ির অন্যান্য সদস্য এবং আশপাশ থেকে লোকজন জড়ো হয়।’
চকরিয়া থানার নিয়ন্ত্রণাধীণ হারবাং পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত উপ-পরিদর্শক (এসআই) মানিক কুমার দৈনিক আজাদীকে বলেন, বিছানায় ঘুমন্ত মায়ের পাশ থেকে শিশু অপহরণের তথ্য পাওয়ার পর পরই বিভিন্নস্থানে বার্তা প্রেরণ সহ শিশুটিকে উদ্ধারে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করি। অবশেষে মহাসড়কের কর্ণফুলী থানাধীন পুলিশের চেকপোস্টে ধরা পড়ে তিন অপহরণকারী। এ সময়
উদ্ধার হয় শিশুটিও। পরে সেখান থেকে তাদের চকরিয়া থানায় নিয়ে আসি।
এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তী দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘চার মাসের শিশু নুরুল কাদেরকে অপহরণের ঘটনাটি খুবই চাঞ্চল্যকর। খবর পাওয়া মাত্রই শিশুটিকে উদ্ধারে তৎপরতা চালানো হয়।’
ওসি বলেন, ‘চট্টগ্রামে এক ব্যক্তির কাছে দেড় লাখ টাকায় বিক্রির চুক্তিতে আপন জেঠা আল আমিন ছোট ভাইয়ের শিশুপুত্রকে অপহরণ করেছিল। পুলিশের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা বিষয়টি স্বীকার করেছে। অবশেষে শিশুটিকে উদ্ধার করে মায়ের কোলে ফেরত দিতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।’
ওসি জানান, এই ঘটনায় শিশুর মা জোসনা আক্তার বাদী হয়ে তিনজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা রুজু করেছেন বৃহস্পতিবার দুপুরে। তিন অপহরণকারীকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিক্রির জন্য দুই শিশু চুরির মামলায় নারীর যাবজ্জীবন
পরবর্তী নিবন্ধ‘তোঁয়ারার লাই আঁর পেট পুরে’