গ্রামীণ চিকিৎসা ব্যবস্থা

স.ম জাফর উল্লাহ্‌ | সোমবার , ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:৩২ পূর্বাহ্ণ

গ্রাম প্রধান দেশে ৮০% মানুষের বাস গ্রামে। নগরের উন্নত জীবন ব্যবস্থায় নগরবাসীর স্বাস্থ্য সেবায় যাবতীয় সুযোগ সুবিধা রয়েছে নগরীতে। সে অনুপাতে গ্রামীণ চিকিৎসা ব্যবস্থা বলতে গেলে অনেক অবহেলিত ও অরক্ষিত। সরকারি বেসরকারি প্রাইভেট বিভিন্ন দাতা সংস্থা ব্যক্তিগত সকল প্রকার চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান অবস্থিত নগরে। যেসব কারণে মানুষ নগরমুখী হওয়ার প্রবণতা তার মধ্যে সহজ ও সহজলভ্য চিকিৎসা সেবা অন্যতম। গ্রামীণ স্বাস্থ্য সেবা বলতে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র কমিউনিটি ক্লিনিক ও গ্রামের প্রসিদ্ধ হাট বাজারে অবস্থিত ডাক্তারের চেম্বার। দিনে নির্দিষ্ট সময়ে যে সব চিকিৎসা পাওয়া যায় তা এক প্রকার প্রাথমিক চিকিৎসা বলা যায়। এসব কেন্দ্রে কঠিন ও জটিল বা জরুরি চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। দিনে নির্দিষ্ট সময়ের পর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় এসব কেন্দ্রে কঠিন ও জরুরি চিকিৎসার রোগী গেলে তাদের নগরীতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এসব রোগী পথের দূরত্বের কারণে পথিমধ্যে অনেক সময় মৃত্যু ঘটে। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক কিছু চিকিৎসা ও ওষুধপত্র দেয়া হলেও এখানে সাধারণ ও বিশেষ কোনো রোগের চিকিৎসা সুযোগ নেই। কমিউনিটি ক্লিনিক ও সাইন বোর্ড চেয়ার টেবিল সর্বস্ব ক্লিনিক এখানে ২/১ জন স্বাস্থ্য কর্মী সামান্য নারী স্বাস্থ্য সম্পার্কিত কিছু পরামর্শ ও কিছু ট্যাবলেট জাতীয় ওষুধ প্রদানে সীমাবদ্ধ এখানে কোনো পাশ করা ডাক্তার থাকে না। গ্রামের হাট বাজারে যে সব ডাক্তারের চেম্বার রয়েছে সেখানে সকাল ১০টা ও বিকালে ৫টার মধ্যে ডাক্তারের নির্দিষ্ট ফি’র মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা ও পরামর্শ পাওয়া গেলেও ঐ সময়ের আগে বা পরে গ্রামে কোনো চিকিৎসা সেবা ও পরামর্শ পাওয়া যায় না। গ্রামে অনেক দাতা সংস্থা বা মহৎ ব্যক্তি বিশেষ উদ্যোগে বিনামূল্যে চিকিৎসা কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রান্তীক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবায় অবদান রাখলেও এসব কেন্দ্র গ্রামের প্রত্যন্তঅঞ্চল বা বিক্ষিপ্ত বিছিন্নভাবে অবস্থিত বিধায় এক এলাকার মানুষ অন্য এলাকায় গিয়ে সেবা নেয়া সম্ভব হয় না । ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ও অসম্পূর্ণ যে সব স্বাস্থ্য কেন্দ্র গ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার প্রয়াস চালাচ্ছে তাদেরও অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ গুলো কোনো পরিপূর্ণ চিকিৎসা কেন্দ্র নয়।
বিভিন্ন দাতা গোষ্ঠী সংগঠক ব্যক্তি বিশেষ দ্বারা পরিচালিত এসব চিকিৎসা কেন্দ্র ও উদ্যোক্তাদের সমন্বয় করে গ্রামের মূল কেন্দ্রে একটি পরিপূর্ণ স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন বা রূপান্তর করলে গ্রামীণ চিকিৎসা সেবায় যে অপূর্ণতা রয়েছে তা সার্থকতা পাবে। গ্রামে সুচিকিৎসার অপ্রতুলতায় ও সচেতনতার অভাবে স্থানীয় ফার্মেসীর ওষুধ শরণাপন্ন হলে তারা অনুমান নির্ভর ওষুধ প্রদান করার ফলে মানুষ ভুল ও অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছে। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবায় উন্নয়ন ও সুচিকিৎসা বাস্তবায়নে ২৪ ঘণ্টা আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার বিকল্প নেই। বর্তমান সরকার গ্রামকে শহরের আদলে গড়ে তুলতে যে পরিকল্পনা নিয়েছে এর মধ্যে প্রান্তীক জনগণের চিকিৎসা সেবায় আধুনিকায়নে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
লেখক : প্রাবন্ধিক, শিক্ষক

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধবিয়ে ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উচ্চ শব্দে সাউন্ড বক্স বাজানো পরিহার করুন