গ্যাস-বিদ্যুতে ভর্তুকি আর কেন দেব

প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর কর নিয়ে জুলুম নয়, উদ্বুদ্ধ করতে হবে

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:১৬ পূর্বাহ্ণ

ইংল্যান্ডে বিদ্যুতের দাম ১৫০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশেও আর এ খাতে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নবনির্মিত বিনিয়োগ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গ্যাসবিদ্যুতের দাম নিয়ে তার এ মন্তব্য আসে বলে জানিয়েছে বাসস।

বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহারে সকলকে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দেওয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। ইংল্যান্ড দেড়শ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। এটা সবার মনে রাখতে হবে। আমরা কিন্তু সেই পর্যায়ে যাইনি। গ্যাসবিদ্যুৎ দেওয়া যাবে ক্রয়মূল্যে। আর কত ভর্তুকি দেওয়া যায়? আর এ ক্ষেত্রে কেন দেব? আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি কৃষিতে, খাদ্য উৎপাদনে। খবর বিডিনিউজের।

এক কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১২ টাকা খরচ হয় জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, সেখানে আমরা নিচ্ছি মাত্র ৬ টাকা। তাতেই আমরা অনেক চিৎকার শুনি। গ্যাসবিদ্যুৎ সাপ্লাই দেওয়া যাবে যদি সবাই ক্রয়মূল্য যা হবে, সেটা দিতে রাজি থাকে। তাহলে দেওয়া যাবে। তাছাড়া আর কত ভর্তুকি দেয়া যায়? মহামারীর ধাক্কা সামলে উঠতে সরকার যে বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছিল আর তাতেই যে অর্থনীতির গতি সচল রয়েছে, সে কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি। আমাদের লক্ষ্যই ছিল প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার। আমরা পৌঁছে দিয়েছি। জেনারেটরের ওপর যে ট্যাঙ ছিল সেই ট্যাঙ আমি প্রত্যাহার করে নিয়েছি। শিল্পকলকারখানায় যাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে সেই ব্যবস্থাও করে দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানগত সুবিধা কাজে লাগাতে ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ভুটান, নেপাল, ভারত, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার সর্বক্ষেত্রেই চমৎকার একটি যোগাযোগের জায়গা। তাছাড়া এই দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় ৩০০ কোটি মানুষের বাজার, এই সুবিধাটা যে কেউ নিতে পারেন। আমরা কঙবাজারে অন্তর্জাতিক মানের এয়ারপোর্ট করে দিচ্ছি। ঢাকার সঙ্গে সরাসরি রেললাইন করা হয়েছে, আমরা সড়কের উন্নয়ন করেছি। সেক্ষেত্রে আমার মনে হয় যে ইস্ট এবং ওয়েস্টের মধ্যে একটা ব্রিজ হতে পারে বাংলাদেশ। সেভাবেই আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলছি। আমরা মনে করি, আমাদের ভৌগলিক যে অবস্থান, সেটাও অত্যন্ত অনুকূলে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাতারবাড়িতে ইতোমধ্যে ডিপ সি পোর্টের কার্যক্রম শুরু করেছে। পায়রা পোর্টের উন্নতি হচ্ছে, মোংলা পোর্টের উন্নয়ন করা হচ্ছে। বে টার্মিনালসহ আরো অনেক সুবিধা সরকার করে দিচ্ছে।

কর নিয়ে জুলুম নয়, উদ্বুদ্ধ করতে হবে : অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়লেও দেশে আয়করদাতার সংখ্যা যে সেভাবে বাড়েনি, তা মনে করিয়ে দিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দুদিনব্যাপী রাজস্ব সম্মেলন উদ্বোধন করেন তিনি। দেশে রাজস্ব ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে এ ধরনের অনুষ্ঠান এটাই প্রথম।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি, এখানে কোনো জোর জুলুম খাটাবেন না। মানুষকে কোনো ভয়ভীতিকর পরিস্থিতিতে ফেলা যাবে না। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। জনগণকে জানাতে হবে যে, আপনি যে কর দেন, সেটা কিন্তু আপনার কাজেই লাগে। আজকে রাস্তাঘাট, পুল, ব্রিজ বা এই যে পোর্ট, কৃষি, শিক্ষা বা স্বাস্থ্যসব ক্ষেত্রেই যেগুলো সরকার করে দিচ্ছে, সবগুলোর সুফল ভোগ করছে জনগণ। আর যারা এই সুফলটা ভোগ করছে, তাদেরকেও তো কিছু দিতে হবে, রাষ্ট্র তো আর এমনি এমনি সবকিছু দিতে পারে না। আর অন্যের কাছে আমরা হাতও পাতব না।

করের পরিমাণ বাড়ানোর পরিবর্তে করদাতার সংখ্যা সম্প্রসারণে আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এটা শুধু রাজধানীকেন্দ্রিক নয়, সারা দেশেই আমি সকলকে বলব যারা কর দেবার সামর্থ্য রাখেন, আপনারা দয়া করে কর দেবেন। সেটা আপনাদের সেবায়ই সরকার কাজে লাগাবে। কর ফাঁকি রোধে ডিজিটাইজেশনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব বাংলাদেশের উপরও পড়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কাজেই, আমাদের সেগুলোর মোকাবেলা করেই এগিয়ে যেতে হবে। আমরা যত বেশি ট্যাঙ সংগ্রহ করব, ততই এটি অতিক্রম করা সহজ এবং সম্ভব হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, আজকে প্রতিটা জিনিসের দাম বেড়েছে। আজকে তেল, গ্যাস, গম, ভোজ্যতেল, চিনিসহ প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। আমাদের আওয়ামী লীগ সরকার তা সত্ত্বেও এগুলো অধিক মূল্যে কিনে নিয়ে আসছে। সেখানে পরিবহন ব্যয়ও বেড়েছে, ৮০০ ডলারের জাহাজ ভাড়া এখন ৩ হাজার ৮০০ ডলার। আমরা ভর্তুকি দিয়ে অধিক মূল্যে কিনে এনে তা কম মূল্যে দেশের মানুষকে দিচ্ছি। এক কোটি মানুষ টিসিবির কার্ড পেয়েছে, সেখানে ভর্তুকি মূল্যে মানুষকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহ করা হচ্ছে। কৃষিতে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে, করোনাকালীন শিল্প ও কলকারখানা চালু রাখার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দিয়েছে সরকার। এভাবেই সরকার সকলকে দুঃসময়ে ভর্তুকি অব্যাহত রেখেছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদের উন্নয়নের বর্ণনা করতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়ে যদি যান, যে পরিবর্তন হয়েছে গত ১৪ বছরে, সেই পরিবর্তনটা আপনারা দেখতে পাবেন।

প্রান্তিক জনপদেও অর্থনীতির গতির সঞ্চার হয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, সরকার ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছে, যেখানে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমি এটুকু বলতে পারি যে, গত ১৪ বছরে আমূল পরিবর্তন এসেছে। করদানের সক্ষমতা কিন্তু আমাদের উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও রয়েছে। সেখানে আমরা যদি একটু প্রচারপ্রচারণা ভালোভাবে চালাই, তাহলে মানুষ কিন্তু স্বতস্ফূর্তভাবে আসবে, কারণ তারা তো সেবা পাচ্ছে।

তিনি বলেন, টিনধারীদের রিটার্ন প্রদানে উদ্বুদ্ধ করে সক্ষম করদাতাগণকে কর নেটের আনা হয়েছে। করদাতাগণ যাতে ঘরে বসে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারেন, তার জন্য ইফাইলিং ব্যবস্থাও চালু করা হয়েছে। আয়কর, কাস্টমস ও মূসক বিভাগকে অটোমেটেড এবং ডিজিটালাইজড করার মাধ্যমে করদাতা, ব্যবসায়ী এবং জনগণকে সহজ ও নিরবচ্ছিন্নভাবে সেবা প্রদানের জন্য বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রকাশনা শিল্পের হারানো গৌরব ফিরবে?
পরবর্তী নিবন্ধআইসিইউর জন্য আলাদা দশতলা ভবন চায় চমেক হাসপাতাল