প্রকাশনা শিল্পের হারানো গৌরব ফিরবে?

চট্টগ্রামে বইমেলা শুরু বুধবার

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:১৬ পূর্বাহ্ণ

শুধু বাংলাদেশ নয়, পশ্চিমবঙ্গের খ্যাতিমান অনেক লেখকের বই প্রকাশ করেছে চট্টগ্রামের প্রকাশনা সংস্থাগুলো। তবে সেটা ষাটের দশকের কথা। তখন চট্টগ্রামের প্রকাশনা শিল্পের স্বর্ণযুগ ছিল। সে সমৃদ্ধ গৌরব এখন নেই। নানা সংকটে ম্লান হয়েছে এখানকার প্রকাশনা শিল্পের ঐতিহ্য।

এমন পরিস্থিতিতে আগামী বুধবার চট্টগ্রামে শুরু হচ্ছে ২১ দিনব্যাপী অমর একুশে বইমেলা। নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম মাঠে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) উদ্যোগে সম্মিলিত ব্যবস্থাপনায় এই বইমেলা বাস্তবায়িত হবে। ২০১৯ সালে সম্মিলিত উদ্যোগের এই বইমেলার যাত্রা শুরু হয়। মেলা ঘিরে তখন স্বপ্ন দেখেন প্রকাশকগণ। আশা ছিল মেলাকে ঘিরে ঘুরে দাঁড়াবে চট্টগ্রামের প্রকাশনা শিল্প। ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার হবে হারানো ঐতিহ্য। তবে দুই বছর ধারাবাহিকতা থাকলেও ২০২১ সালে করোনার কারণে বইমেলা আয়োজন করেনি চসিক। ফলে বইমেলা ঘিরে চট্টগ্রামের প্রকাশনা শিল্পের প্রসারে যে যাত্রা তা কিছুটা থমকে যায়। যা স্পষ্ট হয় ২০২২ সালে। ওই বছর পূর্বের চেয়ে বিকিকিনি কমে যায়।

এদিকে চট্টগ্রামের প্রকাশনা শিল্পে ধস নামার কারণ হিসেবে আছে নানা কারণ। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানিয়েছেন, এখানকার হাতেগোনা প্রকাশনা ছাড়া বাকিগুলো ঢাকার প্রকাশনাগুলোর বিপরীতে কিছুই না। চট্টগ্রামের কয়েকটি ছাড়া বাকি প্রকাশনাগুলো থেকে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যাও কম। মানের দিক থেকেও আছে নানা প্রশ্ন। তবে এর মধ্যেও ভালো করছে চট্টগ্রামের এমন অনেকগুলো প্রকাশনা কিন্তু ঢাকা থেকেই বই ছাপছে।

চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত বইয়ের গুণগত মান পিছিয়ে থাকার কারণগুলোর মধ্যে ভালো মানের কাগজ ব্যবহার না করা, দুর্বল বাইন্ডিং এবং প্রকাশনাগুলোর এডিটিং প্যানেল না থাকাকেও দায়ী করা হয়। অভিযোগ আছে, চট্টগ্রামের বেশিরভাগ প্রকাশকই লেখক যে পাণ্ডুলিপি দেন তা ছাপিয়ে দেন। সেক্ষেত্রে বানান ভুলসহ নানা ভুলভ্রান্তি থেকে যায়, যা আস্থাহীন করে তুলেছে পাঠককে। অবশ্য গত কয়েক বছর ধরে নতুন করে প্রকাশনা হচ্ছে এবং এর মধ্য দিয়ে আশার আলো দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

বইমেলাকে ঘিরে চট্টগ্রামে প্রকাশনা শিল্পে আশা জাগলেও বাণিজ্যিক পরিসংখ্যান বলছে ভিন্ন কথা। ২০২২ সালে চট্টগ্রামে ২১ দিনের বইমেলায় বিক্রি হয়েছে ৫ কোটি ১৩ লাখ ৭২৫ টাকার বই। বিপরীতে একই বছর রাজধানীর ৩১ দিনের বইমেলায় বিক্রি হয় ৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকার বই। এর আগে ২০২০ সালে চট্টগ্রামে ২০ দিনে ১৮ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়। ওই বছর ঢাকায় বিক্রি হয় ৮২ কোটি টাকার বই। এছাড়া ২০১৯ সালে চট্টগ্রামে ২১ দিনে ১৩ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়। একই বছর ঢাকায় বিক্রি হয় ৮০ কোটি টাকার বই।

বণিজ্যিক দিক থেকে এবারও প্রকাশকরা আশার আলো দেখছেন না। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, প্রকাশনা শিল্পের যাবতীয় উপকরণের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কাগজ, কালি, পেস্টিং বোর্ড, শ্রমিকের মজুরিসহ সব মিলে প্রোডাকশন খরচ বেড়েছে।

চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সভাপতি মহিউদ্দিন শাহ আলম নিপু আজাদীকে বলেন, প্রতি মাসেই বই বের করেন প্রকাশকরা। ফেব্রুয়ারি মাস এলে বইমেলাকে কেন্দ্র করে বই প্রকাশের জোয়ার আসে। অনেক লেখক আছেন যারা বইমেলাকে কেন্দ্র করেই বই বের করেন। যেমন আমার প্রকাশনা থেকে বই বের হচ্ছে এমন এক লেখক বলেছেন, ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে না হলে বের করে কী হবে।

কালধারা প্রকাশনার এ স্বত্বাধিকারী বলেন, প্রতিটি বইয়ে প্রোডাকশন কস্ট গতবারের চেয়ে ৩২ থেকে ৪০ পার্সেন্ট বেড়েছে। গতবার যে বইয়ের দাম ২৫০ টাকা ছিল এবার তার দাম রাখতে হচ্ছে ৩৫০ টাকা। কারণ প্রকাশনা শিল্পের প্রতিটি খাতে খরচ বেড়ে গেছে। কাগজের দাম তো কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কালি, পেস্টিং বোর্ড, প্রিন্টিং খরচ সবকিছুই বেড়েছে। খরচ বেড়ে যাওয়ায় বইয়ের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। নিজ উদ্যোগে যেসব লেখক বই বের করেন তারা কোয়ান্টিটি কমিয়ে ফেলছেন। আগে ৫০০ কপির নিচে চিন্তা করতেন না। এখন ৩০০ কপি বের করছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার রূপ দেওয়ার চেষ্টা
পরবর্তী নিবন্ধগ্যাস-বিদ্যুতে ভর্তুকি আর কেন দেব