দীর্ঘ সময় ধরে ১০/১২টি আইসিইউ (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) শয্যায় মুমূর্ষু রোগীদের সেবা দিয়ে আসছিল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল। আরো ৮টি শয্যা যুক্ত করে ২০২০ সালের ২১ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এ নিয়ে আইসিইউ বিভাগে শয্যা সংখ্যা উন্নীত হয় ২০টিতে। যদিও ১৬/১৭টি শয্যায় সংকটাপন্ন রোগীরা নিয়মিত সেবা পেয়ে থাকেন। হাতে গোনা কয়েকটি শয্যা বাড়লেও হাসপাতালের একটি আইসিইউ শয্যার জন্য অসহায় রোগী ও তার স্বজনদের হাহাকার কমেনি। বৃহত্তর চট্টগ্রামে টার্সিয়ারি লেভেলের একমাত্র হাসপাতাল হওয়ায় দূর–দূরান্তের সংকটাপন্ন সব রোগীর ঠিকানা হয় এই হাসপাতাল। আর সংকটাপন্ন রোগীর ক্ষেত্রে লাইফ সাপোর্ট প্রয়োজন হওয়ায় অধিকাংশ রোগীকেই আইসিইউতে স্থানান্তর জরুরি হয়ে পড়ে। কিন্তু শয্যা সংকটে সংকটাপন্ন সব রোগীকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা সম্ভব হয় না। আকাশচুম্বি ফি’র কারণে বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউর কথা চিন্তাও করতে পারেন না গরীব–অসহায় রোগীরা। ফলে আইসিইউ শয্যা সংকটে গরীব–অসহায় রোগীকে অনেকটা ধুঁকে ধুঁকেই মরতে হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে হাসপাতালে ওয়ার্ড সংখ্যা ৪৬টি। এসব ওয়ার্ডে দৈনিক প্রায় তিন হাজার রোগী চিকিৎসাধীন থাকেন। এর মাঝে নিউরোমেডিসিন, নিউরোসার্জারি, মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি ওয়ার্ডসহ উল্লেখযোগ্য বেশ কিছু ওয়ার্ডে প্রতিনিয়তই সংকটাপন্ন রোগী আসে। সবমিলিয়ে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে অন্তত কয়েকশ সংকটাপন্ন রোগী চিকিৎসাধীন থাকেন। যাদের মধ্যে দেড়শ থেকে দুইশ রোগীকে আইসিইউতে স্থানান্তরের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু শয্যার অপ্রতুলতায় সেটি সম্ভবপর হয় না। এতে করে অনেক মুমূর্ষু রোগী আইসিইউ সংকটে ওয়ার্ডেই মারা যান।
হাসপাতালের চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংকটাপন্ন রোগীদের জন্য হাসপাতালে অন্তত শতাধিক আইসিইউ শয্যা জরুরি। অথচ হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা রয়েছে হাতে গোনা ১৭/১৮টি।
তবে আইসিইউ শয্যার এ সংকট ঘুচাতে এবার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কেবল আইসিইউর জন্য দশতলা বিশিষ্ট সম্পূর্ণ আলাদা ভবন চেয়েছে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা এরই মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। হাসপাতাল পরিচালক আজাদীকে বলেন, হাসপাতালে এখন যে কয়টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে, বাস্তবিকই তা খুবই অপ্রতুল। একটি আইসিইউ শয্যার জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাদের কাছে রিকোয়েস্ট আসে। অনেক সময় উচ্চ পর্যায় থেকেও ফোন আসে। কিন্তু শয্যার অপ্রতুলতায় আমরাও যেন অসহায়। আমাদেরও কিছু করার থাকে না। যা পরিস্থিতি, এই হাসপাতালে একশর বেশি আইসিইউ স্থাপন করা জরুরি।
সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে, আইসিইউ সেবার জন্য সম্পূর্ণ আলাদা একটি ভবনের প্রস্তাবনা আমরা দিয়েছি। এতে কেবল আইসিইউ সেবা থাকবে। প্রস্তাবনা অনুসারে দশতলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ হলে অন্তত শতাধিক আইসিইউ শয্যা স্থাপন করা যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দশতলা ভিত বিশিষ্ট আইসিইউ ভবন নির্মাণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব বরাবর চিঠি দেয় চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসানের স্বাক্ষরে গত ৭ ডিসেম্বর (২০২২ সালের) এ চিঠি দেয়া হয়। প্রস্তাবনায় গণপূর্ত বিভাগ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত খসড়া প্রাক্কলনের কপিও সংযুক্ত করা হয়েছে।
আলাদা আইসিইউ ভবন নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে চিঠিতে বলা হয়, হাসপাতালের বিদ্যমান আইসিইউ বিভাগে স্থান সংকটের কারণে নতুন আইসিইউ শয্যা যুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু বৃহত্তর চট্টগ্রামের কয়েক কোটি মানুষের জন্য এই হাসপাতালটি–ই ভরসাস্থল। বিশেষ করে গরীব–অসহায় ও মুমূর্ষু রোগীদের জন্য। গরীব–অসহায় রোগীদের চিকিৎসার স্বার্থে আইসিইউ শয্যা বাড়ানো জরুরি। সার্বিক দিক বিবেচনায় নিয়ে আইসিইউর জন্য আলাদা দশতলা ভবন নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে।