গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর উদ্যোগ সময়োপযোগী পদক্ষেপ

| বুধবার , ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৬:২৮ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বিদ্যুৎ ও জ্বালানির বর্তমান সঙ্কটকালীন পরিস্থিতি মেনে নিয়ে সবাইকে ত্যাগের মানসিকতা নিয়ে তা মোকাবিলার আহ্বান জানিয়েছিলেন কিছুদিন আগে। দেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় সরকার গত ১০ বছরে সম্ভাব্য সবকিছু করেছে জানিয়ে তিনি বলেছেন, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত ভূ-রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত। সেকারণে অনেক সময় জ্বালানি খাত নিয়ে দেশের বাইরে থেকে ভুল নির্দেশনা ও বিশ্লেষণ আসছে। দেশের স্বার্থে এবিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার তাগিদ দেন তিনি। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা’ বিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, যেই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য সরকার বা দেশের কোনো ঘটনা দায়ী নয়। বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে, ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে এটা সৃষ্টি হয়েছে। যুদ্ধের কারণে বিশ্বে জ্বালানির অস্বাভাবিক মূল্য বেড়ে যাওয়ার ধাক্কা লেগেছে বাংলাদেশেও। স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা বন্ধ রাখায় দেশে একই সঙ্গে গ্যাস ও বিদ্যুতের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় ডলার সাশ্রয়ে ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ রেখেছে সরকার। ফলে একদিকে গ্যাসের সঙ্কট, অন্যদিকে ঘনঘন লোডশেডিং হচ্ছে। এমন পরিস্থিতির প্রসঙ্গ তুলে ধরে তৌফিক ইলাহী বলেন, যাই হোক সরকার অনেক চেষ্টা করেছে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন বাড়াতে। এখনও নতুন গ্যাস পাওয়ার কিছু সম্ভাবনা আছে। কিন্তু দেশ ও শিল্প তো থেমে থাকতে পারে না।
তাঁর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, সরকার গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে তৎপর। দৈনিক আজাদীতে গত ১২ সেপ্টেম্বর ‘দৈনিক গ্যাস উৎপাদন বাড়বে ৬ কোটি ঘনফুট/ ছয়টি কূপ খননের পরিকল্পনা, তিন মাসেই লক্ষ্য অর্জন করতে চায় পেট্রোবাংলা’ শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, দৈনিক ৬ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে পেট্রোবাংলা। ছয়টি কূপ খননের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানোর এই পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে এই লক্ষ্য অর্জন করতে চায় সংস্থাটি। এদিকে আগামী বছরের মধ্যে ১৫টি কূপে দৈনিক ২১.৭ কোটি ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধসহ বৈশ্বিক অস্থিরতায় জ্বালানি নিয়ে সংকট এবং দেশের ঘাটতি মোকাবেলায় অভ্যন্তরীণ খাত থেকে গ্যাস উত্তোলনে মনোযোগ দিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি। কূপ খনন ও গ্যাস উত্তোলন বৃদ্ধি পেলে শত শত কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের পাশাপাশি জ্বালানি নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি দেশে গ্যাস সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। এলএনজি আমদানি করে গ্যাস সেক্টর টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে। স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা এবং আমদানি বন্ধ হওয়ায় পরিস্থিতি ক্রমে নাজুক হয়ে ওঠে। বর্তমানে দৈনিক ৫৮ কোটি ঘনফুট এলএনজি আমদানি করে ন্যাশনাল গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। কোনো কারণে আমদানি ব্যাহত হলে জ্বালানি সেক্টরে সংকট সৃষ্টি হবে জানিয়ে পেট্রোবাংলার শীর্ষ একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশে বর্তমানে ২১টি গ্যাসফিল্ড থেকে প্রতিদিন ২৩২ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করে সরবরাহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে দেশীয় তিনটি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণাধীন ১৭টি গ্যাসফিল্ড থেকে ৮৩ কোটি ঘনফুট এবং বিদেশি দুটি কোম্পানি (শেভরণ ও তালোর) মালিকানাধীন ৪টি গ্যাসক্ষেত্র থেকে উত্তোলন করা হয় ১৪৯ কোটি ঘনফুট গ্যাস। এই গ্যাস দিয়ে দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব না হওয়ায় আমদানিনির্ভরতা বাড়ছে। কিন্তু যুদ্ধ পরিস্থিতি, ডলার সংকটসহ নানা প্রতিকূলতায় আমদানি প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় পেট্রোবাংলা দেশের গ্যাস ক্ষেত্রগুলোতে নতুন করে কূপ খননের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিবিসি বাংলা গ্যাস সংকট বিষয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে অব্যাহত জ্বালানি সংকটের মাঝে অভ্যন্তরীণ গ্যাস অনুসন্ধান বা উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কী করা হচ্ছে – সেদিকে নূতন করে সবার নজর পড়ছে। জানা গেছে, ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে গ্যাস অনুসন্ধানে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলেছেন, গ্যাস উৎপাদন না বাড়ানোর ফলে এই খাত আমদানি-নির্ভর হয়ে পড়েছে, আর এখন বিশ্ববাজারে গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় তৈরি হয়েছে তীব্র সংকট। ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে বিশ্ববাজারে চড়া দামের কারণে বাংলাদেশ সরকার এখন খোলাবাজার থেকে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি আমদানি বন্ধ রেখে গ্যাস রেশনিং এবং বিদ্যুতের লোডশেডিং করাসহ ব্যয় সাশ্রয়ের বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। তাই গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর পরিকল্পনাটি অবশ্যই সময়োপযোগী পদক্ষেপ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে