গোপন কথা

সত্যব্রত বড়ুয়া | শুক্রবার , ১৬ জুন, ২০২৩ at ৫:৩৫ পূর্বাহ্ণ

প্রাচীনকালের গুরুরা তাঁদের ‘গুরু গৃহে’ শিষ্যদের মুখে মুখেই পড়া শেখাতেন। তাঁরা নিজেরাও পন্ডিত হয়েছেন শুনে শুনেই। মুখের কথার উপর আমাদের অগাধ বিশ্বাস ছিলো। রয়েছে এখনো। আমরা মুখর হয়ে উঠি তো মুখের কথাতেই। ছেলেবেলায় আমি একবার গুরু লিখতে গরু লিখে ফেলেছিলাম। বাবা গরু দেখে বলেছিলেন তুই নিজে একটা আস্ত গরু বলেই তোর গুরুকে তুই গরু বানিয়েছিস। বাবাকে শুধু বলেছিলাম, গরু উপকারী প্রাণী। রোজ দুধ দেয়। বাবা গম্ভীর হয়ে রইলেন। তাঁকে দেখে আমিও গম্ভীর হয়ে রইলাম। বড় হয়ে বিষয়টি বুঝে আমি খুব হেসেছি। এখন গম্ভীর না থেকে হাসিমুখে একথাটি সবাইকে বলি। আমার খুব ইচ্ছে করে একটা ‘কোচিং সেন্টার’ খুলতে। সেখানে মুখে মুখে পড়ানো হবে। নোট করতে দেওয়া হবে না। মুখের কথার গুরুত্ব রয়েছে বলেই এখনো ‘ভাইভা’ নেওয়া হয়। সেকালের প্রেমিক প্রেমিকারা প্রেম নিবেদন করেছে মুখে মুখেই। ‘মহুয়ামলুয়া’ কখনো প্রেমপত্র লিখেছিলো না।

একালের প্রেমিক প্রেমিকারা লিখতে জানলেও কখনো লিখেনা। সবকিছু হয় ‘স্মার্ট ফোনে’। স্বামী প্রবাসে থাকলে এখন আর বিরহ বেদনায় ভুগতে হয় না। আজকাল ‘স্মার্ট ফোনের’ বদৌলতে শুধু যে কথা বলা যাচ্ছে তা নয়। দেখা যাচ্ছে চেহারাও। মনে হচ্ছে একে অপরকে স্পর্শ করবার প্রযুক্তিও কিছুদিন পর উদ্ভাবন হয়ে যাবে। তরুণ বয়সে আমি অনেক প্রেমপত্র লিখেছি। তবে তা নিজের জন্যে নয়। লিখেছি বন্ধুদের জন্যে। আমি এমন কাব্যিক ভাষায় প্রেমপত্র লিখতাম যে মেয়েটি প্রেমে পড়তই। এমনকি আমার এক বন্ধুর তার প্রেমিকার সাথে বিয়ে পর্যন্ত হয়েছিলো। আমি একবার দুষ্টুমি করে এক চুলপাকা বুড়িকে প্রেমপত্র লিখেছিলাম। সেসময় আমার বয়স ছিলো ২৫। বুড়ির বয়স ছিলো আনুমানিক ৭০। ভদ্রমহিলা চুলে কলপ দিয়ে পার্কে আমার সাথে দেখা করতে এসেছিলেন। বেশ কয়েকবার তাঁর সাথে আমার দেখা হয়েছে। সবটাই ছিলো আমার অভিনয়। হঠাৎ দেখলাম বুড়ি আর পার্কে আসছে না। একদিন দেখলাম একটি ছেলে আমার বাসায় একটি চিঠি দিয়ে গেলো। যাবার সময় বললো কয়েকদিন আগে ভদ্রমহিলা মারা গেছেন। তিনি ছিলেন ক্যান্সারে আক্রান্ত। ছেলেটির পাড়াতেই থাকতেন। চিঠিতে লেখা ছিলো, “আমি প্রথমেই বুঝতে পেরেছিলাম যে তুমি আমার সাথে প্রেমের অভিনয় করছো। এর পরেও আমি খুশী ছিলাম এ জন্যে যে তুমি ছাড়া জীবনে অন্য কেউ আমাকে অভিনয় করেও প্রেম নিবেদন করেনি।” এসব একান্ত গোপন কথা। প্রকাশ করতে নেই। তবু করলাম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগাছের চারা পরিবেশ রক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রাখবে : জেলা প্রাশাসক
পরবর্তী নিবন্ধমায়াবী ঘুম