গৃহহীনদের ঘর বরাদ্দে টাকা নেওয়ার অভিযোগ কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ৩ জুন, ২০২১ at ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারি অর্থায়নে নির্মিত হলেও হতদরিদ্রদের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা থেকে আরও বেশি অঙ্কের অর্থ আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তাদের দাবি, ঘরের জন্য নিজের লোকের মাধ্যমে মহালছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রতন কুমার শীল এই অর্থ নিয়েছেন। তিনি মহালছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২য় পর্যায়ে গৃহহীনদের ঘর নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় সরকারি অর্থায়নে ৭৫টি গৃহ নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করেছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তবে অভিযোগ রয়েছে গৃহহীনদের ঘর দিতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে অর্থ আদায় করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান রতন। বেআইনিভাবে অর্থ আদায় ছাড়াও নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে গৃহনির্মাণের অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
মহালছড়ি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চৌংড়াছড়ি হেডম্যান পাড়া এলাকায় ঘর বরাদ্দ পান ৮০ বছর বয়সী পাইয়াপ্রু মারমা। তার স্বজন অংসু মারমা অভিযোগ করে বলেন, এখানে ঘর বরাদ্দ পেতে হলে ইউনিয়ন পরিষদে ৩০ হাজার টাকা জমা দিতে হয়। চেয়ারম্যান রতন শীলের লোকের কাছে টাকা জমা দেওয়ার পর ঘরটা আসে। পাইয়াপ্রু মারমার ভাই ঘরের জন্য খুশি হয়ে ত্রিশ হাজার টাকা দিয়েছে বলে জানান। তবে টাকা দেওয়ার পরও ঘর নির্মাণে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগও করেছেন অনেকে। ইউনিয়নের বাসিন্দা মংসাই মারমা বলেন, এলাকায় যারা প্রকৃত গরীব তারা ঘর পাচ্ছে না। যারা টাকা দিতে পারছে তারাই পাচ্ছে ঘর। একেকটি ঘরের জন্য ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জমা দিতে হয়েছে। এসব টাকা নিয়েছেন চেয়ারম্যান। এমন অভিযোগের ভিডিও রেকর্ড এই প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। চৌংড়াছড়ি এলাকার বাসিন্দা প্রতিবন্ধী আব্দুল কাইয়ুমও এই প্রকল্পের আওতায় ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন। তবে নির্মাণ কাজ নিয়ে তিনি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নে পুরো ঘরে লিনটার দেয়া হয়েছে অথচ আমার ঘরে দেয়া হয়েছে কাটা লিনটার। ঘরের নির্মাণ কাজে মাত্র ২৯ বস্তা সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। এত কম সিমেন্ট দিয়ে ঘর হয়? পিলারে হাত দিয়ে স্পর্শ করলেই ভেঙে পড়ছে। নিম্নমানের কাজ নিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেও সমাধান পাইনি। অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান রতন কুমার শীল জানান, সামনে ইউপি নির্বাচন, তাই আমার ক্লিন ইমেজ ধ্বংস করার জন্য অনেকেই চক্রান্ত করেছে। ঘর নির্মাণের জন্য কারো কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়নি। টাকা নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। তিনি বলেন, যদি কাজের মান খারাপ হয়ে থাকে তাহলে ঠিক করে দেয়া হবে।
মহালছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জোবাইদা আক্তার জানান, আমি একমাস আগে ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছি। এর আগে নির্মাণাধীন ঘরের অনুমোদন করা হয়। ঘরের জন্য কেউ টাকা নিয়েছেন কিনা আমার জানা নেই। তবে কেউ যদি লিখিত অভিযোগ করে তাহলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবসতঘরে হামলা ও ভাঙচুর, সাতকানিয়ায় গ্রেপ্তার ১
পরবর্তী নিবন্ধএভারগ্রিন ফ্রেন্ডস অ্যাসো’র সভা