গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রকল্পে জটিলতা

রেলের দীর্ঘসূত্রতা, সিডিএর বারবার আবেদনেও কাজ হয়নি প্রকল্পের সময় ও ব্যয় দুটোই বাড়ছে

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৮ আগস্ট, ২০২২ at ৭:২৩ পূর্বাহ্ণ

রেলওয়ের দীর্ঘসূত্রতার কারণে চট্টগ্রামের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে জটিলতা তৈরি হয়েছে। আউটার রিং রোডের ফিডার রোডের একটি সেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দেওয়ানহাট-টাইগারপাস অংশের কাজ এবং ফৌজদারহাট-বায়েজিদ লিংক রোডের ফৌজদারহাট অংশের ওভারব্রিজের কাজ আটকে আছে দীর্ঘদিন ধরে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) প্রকল্প তিনটি নিয়ে দফায় দফায় ধর্ণা দিয়েও রেলওয়ের জটিলতা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। এতে প্রকল্পের সময় ও ব্যয় দুটোই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জানা যায়, বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর চট্টগ্রামে হলেও যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন হয় ঢাকা থেকে। রেলে জায়গার উপর দিয়ে সিডিএর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প রয়েছে। শুধুমাত্র সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতায় এই তিনটি প্রকল্পে জটিলতা তৈরি হয়েছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ে। ২০১৭ সালের ১১ জুলাই ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকার প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৮ সালের জুলাই নাগাদ প্রকল্পটির মাঠপর্যায়ের কাজ শুরু হয়। সাড়ে ১৬ কিলোমিটার এঙপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল তিন বছরে। কিন্তু কাজ শুরুর পর থেকে নানা প্রতিকূলতায় প্রকল্পটি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বন্দরের আপত্তি, জমি অধিগ্রহণের জন্য অপেক্ষা, ট্রাফিক বিভাগের অনুমতি না পাওয়া, বিদ্যুৎ বিভাগের খুঁটি সরাতে দেরি হওয়া, লালখান বাজার অংশের নকশা নিয়ে আপত্তি ও বিকল্প সড়ক চালু করতে দেরিসহ নানা কারণে প্রকল্পটি বিলম্বিত হয়। তবে বর্তমানে নতুন জটিলতা তৈরি করেছে রেলওয়ের দীর্ঘসূত্রতা।
প্রকল্পটির দেওয়ানহাট থেকে টাইগারপাস পর্যন্ত এলাকায় রেললাইনের উপর দিয়ে আলাদা একটি ব্রিজ র্নির্মিত হবে। বিদ্যমান ওভারব্রিজের পশ্চিম পাশে রেললাইন থেকে প্রায় ৬৫ ফুট উপর দিয়ে ব্রিজটি নির্মিত হবে। এতে রেলওয়ের ৮৬ কাঠা জমি ব্যবহৃত হবে। সিডিএ এই জায়গাটি ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে ছয় মাস আগে রেলওয়ে বরাবরে পত্র দিলেও গতকাল পর্যন্ত অনুমোদন মেলেনি। এতে করে প্রকল্পটির দেওয়ানহাট ও টাইগারপাস অংশে কাজ চললেও মাঝখানে ব্রিজ নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। ৬৫ শতাংশের বেশি কাজ সম্পন্ন হলেও নতুন জটিলতার কারণে সময়মতো প্রকল্পটি চালু করা সম্ভব হবে না।
প্রকল্পটির পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, রেলওয়ের অনুমোদন পাওয়ার জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। অনুমোদন পাওয়ার পর ব্রিজের কাজ শুরু হবে। এই ব্রিজটি নির্মাণের সময় উচ্চতার কোনো সমস্যা হবে না। এটি রেললাইন থেকে ৬৫ ফুট উঁচু করে ডিজাইন করা হয়েছে।
রেলওয়ের অনুমোদন না পাওয়ায় আরো দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ঝুলে রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার ফৌজদারহাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত আউটার রিং রোড নির্মাণ করেছে সিডিএ। পতেঙ্গা সৈকতেরও উন্নয়ন ঘটানো হয়েছে। অপরদিকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, জ্বালানি তেলের প্রধান ডিপোসহ সন্নিহিত অঞ্চলের শিল্প কারখানায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। শহরের প্রধান সড়ক হিসেবে বিবেচিত বিমানবন্দর সড়কের বেহাল দশার কারণে বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রথম পছন্দ হচ্ছে আউটার রিং রোড। কিন্তু এই রোডের ছোট্ট একটি সেতুর নির্মাণ ঝুলে থাকায় শহরের অধিকাংশ মানুষ আউটার রিং রোডের সুফল পাচ্ছে না। তাদেরকে বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোড ঘুরে পতেঙ্গায় যেতে হচ্ছে। এতে জ্বালানি ও সময় দুটোরই অপচয় হচ্ছে।
ফৌজদারহাট-পতেঙ্গা আউটার রিং রোড থেকে সাগরিকা এলাকা হয়ে অলংকার মোড়ে একটি ফিডার রোড নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। এই রাস্তায় সাগরিকা জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের কাছে রেললাইনের উপর একটি ব্রিজ রয়েছে। ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে রাস্তাটি চালু হবে। শহরের মানুষ এই রাস্তা ব্যবহার করে অল্প সময়ে রিং রোডে যেতে পারবে। কিন্তু উচ্চতা সংক্রান্ত জটিলতায় মাসের পর মাস ব্রিজটির কাজ ঝুলে রয়েছে। এই প্রকল্প যখন গ্রহণ করা হয় তখন রেল লাইনের উপর ব্রিজ নির্মাণের সময় ৭.৫ মিটার উচ্চতা নিশ্চিত করার আইন ছিল। সিডিএ ওই সময় ৭.৬ মিটার উঁচু করে ব্রিজ নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করে। ব্র্রিজের কাজ শেষ হওয়ার আগে এক বছরের ব্যবধানে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ব্রিজের উচ্চতা ৮.৫ মিটার করার নির্দেশনা জারি করে। ৭.৬ মিটার উচ্চতার ডিজাইনের অর্ধনির্মিত একটি ব্রিজকে ৮.৫ মিটার করা সম্ভব না হওয়ায় সংকট তৈরি হয়।
সিডিএর পক্ষ থেকে রেলওয়ের কাছে ব্রিজের উচ্চতার ব্যাপারে ছাড় দেয়ার আবেদন জানালেও সিদ্ধান্তহীনতায় প্রকল্পটি ঝুলে রয়েছে। সিডিএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আপাতত ব্রিজটি নির্মাণ করে রাস্তাটি চালু করে দেয়ার সুযোগ দেয়া হোক, ভবিষ্যতে প্রয়োজনে ব্রিজটি ভেঙে নতুন উচ্চতা নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু রেলের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত আসেনি।
একইভাবে ফৌজদারহাট-বায়েজিদ লিংক রোডের ফৌজদারহাট অংশের ওভারব্রিজটিও গ্যাড়াকলে পড়েছে। ২০১৮ সালে যখন ব্রিজটি নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয় তখন রেলওয়ের ব্রিজের উচ্চতা নির্দিষ্ট ছিল ৭.৫ মিটার। তখন ব্রিজটি নির্মাণে ৭.৬ মিটার উচ্চতা নিশ্চিত করে প্রকল্প গ্রহণ ও কাজ শুরু করা হয়। এখন ব্রিজ নির্মাণের শেষ পর্যায়ে এসে রেলওয়ে ৮.৫ মিটার উচ্চতা নিশ্চিত করতে বলছে। এতে করে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ ঝুলে গেছে। ঝুলে গেছে পুরো প্রকল্পের কাজ। প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ করেও ব্রিজটির কাজ শেষ না হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি পুরোদমে চালু করা যাচ্ছে না। সিডিএর পক্ষ থেকে ব্রিজটি ৭.৬ মিটার উচ্চতা রেখে নির্মাণ শেষ করার অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়েছে, আপাতত হলেও ব্রিজটি চালু করার অনুমোদন দেয়া হোক। ১০ বছর পর ব্রিজটি ভেঙে নতুন উচ্চতায় ব্রিজ নির্মাণ করে দেয়া হবে। কিন্তু প্রায় দুই বছর ধরে নানাভাবে চেষ্টা করেও ব্রিজটির অনুমোদন মেলেনি। এতে করে প্রকল্পটি কবে পুরোদমে চালু হবে তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে গতকাল রেলওয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা আজাদীকে জানান, সিডিএর আবেদনগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে। এই ধরনের সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা মাঠ পর্যায়ে নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমুরগি এখন কেজি ১৭০ টাকা
পরবর্তী নিবন্ধচবির সেই কর্মচারী সাময়িক বরখাস্ত