গভীর রাতে ছিনতাই বাধা দিলে ছুরিকাঘাত

পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার ১৫

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ

গভীর রাতে কিংবা ভোরে অন্ধকার স্থানে ওত পেতে থাকে ওরা। এরপর রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া লোকজনকে টার্গেট করে। ডাক দিয়ে থামায় টার্গেট ব্যক্তিকে। এরপর কথা বলার ফাঁকে চাকু দেখিয়ে ছিনিয়ে নেয় মূল্যবান জিনিসপত্র। বাধা দিলে করে ছুরিকাঘাত। চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে নগরীতে ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধকর্ম করে আসছে। এ ধরনের দুটি ঘটনার মামলায় গতকাল সোমবার ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। এদিকে পলোগ্রাউন্ড এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে এক চক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এছাড়া নগরীর কাজীর দেউড়িতে ছিনতাইয়ের ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো কোতোয়ালী থানাধীন বয়লার এভিনিউ এলাকার মৃত মো. হৃদয়ের ছেলে মো. হাসান (২০), তার পালক পিতার নাম মো. সাগর। বিআরটিসি চৌদ্দ জামতলা মাজার কলোনির মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে মো. রাকিব হোসেন (২০), ডবলমুরিং থানাধীন কদমতলী মতিয়ার পোল এলাকার মৃত মো. সেলিমের ছেলে আরমান হোসেন তাসিন (২১), কদমতলী ইঞ্জিয়ারিং কলোনির মো. হুমায়ুন কবিরের ছেলে সিরাজুল ইসলাম মুন্না (২০) এবং নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি থানাধীন ঘোষাকান্ত গ্রামের মো. হোসেনের ছেলে মো. ফয়সাল (২০)। তাদের মধ্যে হাসান বাদে অন্য চারজন মহানগর হাকিম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, গত ১৯ ডিসেম্বর নাজিম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি সিএনজি অটোরিকশা করে টাইগারপাস মোড়ে নামেন। এ সময় তিনি পলোগ্রাউন্ড স্কুলের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় আটকিয়ে তার ব্যবহৃত মোবাইলসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়। তিনি বাধা দিলে তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। একই জায়গায় গত রোববার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে আইয়ুব খান নামের আরেক ব্যক্তিকেও ছুরির ভয় দেখিয়ে সবকিছু লুট করে নেয় ছিনতাইকারীরা। বাধা দিলে তাকেও ছুরিকাঘাত করা হয়। ঘটনা দুটিতে ভিকটিমরা থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার তদন্তে নেমে পুলিশ ছিনতাইকারী দলটিকে চিহ্নিত করে।
ওসি মো. নেজাম উদ্দীন জানান, রোববার রাতের ছিনতাইয়ের ঘটনার পর ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। এরপর অভিযান চালিয়ে বয়লার এভিনিউ থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুরাতন রেলস্টেশন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় অন্য চারজনকে। তাদের কাছ থেকে ছিনতাইকৃত মোবাইল ফোনসেট উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী দলের সদস্য।
পলোগ্রাউন্ডে গ্রেপ্তার ৭ : নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন পলোগ্রাউন্ড এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে এক চক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত রোববার দিবাগত রাত সোয়া ১১টার দিকে পলোগ্রাউন্ড মাঠের দক্ষিণ পাশের অন্ধকার খালি জায়গা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে একটি করে টিপ ছোরা উদ্ধার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ছিনতাই ও অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার সকালে মহানগর হাকিম আদালতে উপস্থাপন করা হলে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালী থানার ওসি মো. নেজাম উদ্দীন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানাধীন কোরাল ঈদগাহ গ্রামের কামাল হোসেনের ছেলে মো. শরীফ হোসেন (২১), নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন গোয়ালপাড়া তুলাতুলি বস্তি এলাকার মৃত আবদুর শুক্কুরের ছেলে মো. বাদশা (২২), মৃত আবদুল মান্নানের ছেলে মো. সালাউদ্দিন (১৯), চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানাধীন ভাইছাড়া গ্রামের মো. লিটনের ছেলে মো. হানিফ (১৯), নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন সিআরবি বালুর মাঠ সংলগ্ন বয়লার এভিনিউ এলাকার মৃত আবদুর রশিদের ছেলে মো. ইমরান হোসেন লাবু (৪২), চকবাজার থানাধীন দামপাড়া ১ নং গলির মো. এয়াকুবের ছেলে মো. ওমর ফারুক ইফতি (১৯) এবং চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া থানাধীন মুজাফফরাবাদ মাইজপাড়া গ্রামের মিন্টু বৈঞ্চবের ছেলে জয় বৈঞ্চব (১৯)। তন্মধ্যে শরীফের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে দুইটি, হানিফের বিরুদ্ধে মাদক আইনে একটি, ইমরান লাবুর বিরুদ্ধে মাদক, দ্রুতবিচার ও দন্ডবিধি আইনে ৫টি, এবং ইফতির বিরুদ্ধে দন্ডবিধি ও অস্ত্র আইনে দুইটি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কোতোয়ালী থানার ওসি মো. নেজাম উদ্দীন জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী দলের সদস্য। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেছে, ভোর ও সন্ধ্যার পর থেকে রাতের বেলায় কোতোয়ালী এলাকায় ছিনতাই করে। এ সময় তারা কখনও বাসের যাত্রীদের, কখনও পথচারীদের ছোরার ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে মোবাইল, নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনতাই করে। ছিনতাইকারী দলের আরও দুইজন পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারেও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
কাজীর দেউড়িতে গ্রেপ্তার ৩ : নগরীর কাজীর দেউড়িতে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন মো. মহাব্বত হোসেন নামে এক দোকান কর্মচারী। এ সময় তার সঙ্গে থাকা এক সহকর্মীর চিৎকারে লোকজন ও ঘটনাস্থলের নিকটে থাকা পুলিশ এসে তিন ছিনতাইকারীকে আটক করে। গত রোববার দিবাগত রাত পৌনে ১২টায় কাজীর দেউরি মুক্তমঞ্চের সামনে এ ঘটনা ঘটে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গতকাল সোমবার সকালে তাদের ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো নগরীর ডবলমুরিং থানাধীন মতিয়ারপুল ইউনুছ মাঝির বাড়ির মৃত আমির উদ্দিন খানের ছেলে শাকিব খান (২০), লক্ষ্মীপুর জেলার সদর থানার অলিপুর গ্রামের মো. রফিকুল ইসলামের ছেলে মো. জুয়েল (১৯) এবং চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী থানাধীন কানুনগো পাড়া গ্রামের চন্দন দাশের ছেলে রনি দাশ (২১)।
কোতোয়ালী থানার ওসি মো. নেজাম উদ্দীন দৈনিক আজাদীকে বলেন, স্টেডিয়াম এলাকার রেড চিলি রেস্টুরেন্টের কর্মচারী রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে এক সহকর্মীসহ বাসায় ফিরছিলেন। তারা রাত আনুমানিক ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে কাজীর দেউড়ি এলাকায় এলে ছিনতাইকারীরা তাদের আটকে একজনের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এ সময় তাদের চিৎকারে সন্নিকটে থাকা কোতোয়ালী পুলিশের টহল টিম তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে। অন্য ছিনতাইকারী ছিনতাইকৃত মোবাইল সেট নিয়ে পালিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী মামলা দায়ের করেছে। পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআইন-শৃঙ্খলা সভায় গিয়ে ঘটনার বর্ণনা দিলেন মা-বাবা
পরবর্তী নিবন্ধশাহজাহান চৌধুরীসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন