বাংলাদেশের মানুষ যতদিন গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার ফিরে পাবে না ততোদিন বিএনপির আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, বিএনপির আন্দোলন ও কর্মসূচি চলমান আছে। কেউ যদি মনে করে জনগণকে নির্বাচন প্রক্রিয়ার বাইরে রেখে ক্যু করে ক্ষমতা দখল করে টিকে থাকতে পারবে এর চেয়ে বড় ভুল আর কিছু নেই। গতকাল দুপুরের নগরের কাজীর দেউরী নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ের মাঠে পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে সেহেরী ও ইফতার সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর। খসরু বলেন, এমন সময়ে এ ইফতার সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে যখন বাংলাদেশের পাঁচ কোটির ওপরে মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। এসময়ে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির ইফতার ও সেহেরী বিতরণের উদ্যোগ কিছু মানুষের জীবনে অন্তত স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে পারবে। অন্তত কয়েক বেলা তারা খেতে পারবে, ইফতার করতে পারবে। বিএনপির কাজ এ রকমই হতে হবে। বিএনপি মানে জনগণ, জনগণ মানে বিএনপি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী ও মুক্তিকামী জনগণ বিগত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এখানে আজ অনেক গরিব মানুষ এসেছেন। আপনাদেরকে বলা হয়েছে, ভোটকেন্দ্রে না যান তাহলে আপনাদের ভাতা কেটে নেওয়া হবে। আপনারা অভাবী মানুষ। আপনাদের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে, কার্ড কেড়ে নেওয়া হয়েছে তবুও আপনারা ভোটকেন্দ্রে যাননি। আপনারা গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির সংগ্রামে ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে অংশগ্রহণ করেছেন। এজন্য বিএনপি ও তারেক রহমানের পক্ষ থেকে আপনাদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
আমীর খসরু বলেন, ভোট কেন্দ্রে না গিয়ে জনগণ গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। অভাব থাকার পরও পুলিশ দিয়ে হুমকি দেওয়া সত্ত্বেও ভোট কেন্দ্রে যাননি। এটা হচ্ছে গণতন্ত্রের বিজয়। এটা আমাদের আন্দোলনের সুফল। যে আন্দোলনে আমাদের শত শত নেতাকর্মী নিহত হয়েছে, লাখ লাখ নেতাকর্মী ঘরছাড়া হয়েছে, জেলে গিয়েছে। এতো সমস্যার মধ্যেও আমাদের নেতাকর্মীরা আন্দোলন করে গেছেন। বাংলাদেশের মানুষ তাদের সঙ্গে ছিলেন। এটাই বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক দেশ হতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে। বাংলাদেশের আত্মা ফিরিয়ে দিতে হবে।
তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী রেজিম যারা আছে তারা ক্যু করেছে। এটা হচ্ছে মিলিটারি ক্যুর মতো। এটাকে আমরা নির্বাচন বলতে পারি না। আমরা বলেছি যাবেন না, জনগণ যায়নি। তারা বলেছে না গেলে ভাতা কেটে নেবে। হুমকি দেওয়া হয়েছে। তারপরও তো জনগণ যায়নি। ৯৫ শতাংশ মানুষ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। এরপরেও কেউ ক্ষমতা দখল করে থাকতে চায়লে সেটা তাদের বড় সমস্যা।
ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিজের যন্ত্র বানিয়ে ক্ষমতায় থাকা যায়, কিন্তু মানুষের মন জয় করা যায় না। বিএনপি নেতাকর্মীরা মানুষের হৃদয়ে। বিএনপি বিগত ১৭ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে। এর উপরে সরকারের দমন, নিপীড়ন ও হামলা, মামলায় জর্জরিত নেতাকর্মীরা এখন নিঃস্ব প্রায়। তারপরও জনগণের দল হিসেবে বিএনপি নেতাকর্মীরা মানুষের পাশে থাকে। আর জনবিরোধী সরকারের জনগণের জন্য কোনো মায়া নেই। কারণ তাদের তো জবাবদিহি করতে হয় না। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে সারাদেশের মানুষের এমনিতেই নাভিশ্বাস উঠে গেছে। এর মধ্যে দফায় দফায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করেছে আওয়মী সরকার।
আবুল হাশেম বক্কর বলেন, বর্তমানে বাজারে চাল, ডাল, তেল, পিয়াজ, মরিচ, গুঁড়ো দুধ, শাকসবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামে সাধারণ মানুষ অসহায়। সবজিসহ প্রত্যেকটি জিনিস এই ভরা মৌসুমে বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই দাম বৃদ্ধি সরকারের গণবিরোধী নীতির প্রকাশ। জনগণের নির্বাচিত সরকার থাকলে এই ধরনের সীমাহীন দাম বৃদ্ধি পেতো না। এই দাম বৃদ্ধির পেছনে আওয়ামী লীগের অনৈতিক সিন্ডিকেট কাজ করছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা এম এ আজিজ, মোহাম্মদ মিয়া ভোলা, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, মো. শাহ আলম, ইসকান্দর মির্জা, আবদুল মান্নান, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এস এম আবুল ফয়েজ, আর ইউ চৌধুরী শাহীন, জাহাঙ্গীর আলম দুলাল, মো. কামরুল ইসলাম, থানা বিএনপির সভাপতি মন্জুর রহমান চৌধুরী, মো. সালাউদ্দীন, মো. সেকান্দর, জাকির হোসেন, মাঈনুউদ্দীন চৌধুরী মাঈনু।