খোর

সত্যব্রত বড়ুয়া | শুক্রবার , ১৮ জুন, ২০২১ at ৬:৩০ পূর্বাহ্ণ

ছেলেবেলায় প্রাচীনদের কাছ হতে প্রায়ই খোরদের কথা শুনতাম। বেশী শুনেছি আফিং, মদ আর সুদখোরদের কথা। তাঁদের মুখে ঘুষ খাওয়ার কথা শুনলেও ঘুষখোরদের কথা সেভাবে শুনিনি। মনে হয় সেসময় এখনকার মতো এতো বেশী ঘুষখোর মানুষ ছিলোনা। শুনেছি কবি রবীন্দ্রনাথের ঠাকুরদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের ছিলো আফিং-এর ব্যবসা, কিন্তু তিনি নিজে আফিংখোর ছিলেন না। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দেবদাস পড়ে বুঝতে পেরেছিলাম যে, দেবদাস ছিলেন মদখোর। সুদখোর কাবুলিওয়ালা দেখেছি পাকিস্তানি আমলেও। এদের কাছ হতে মানুষ চড়া সুদে টাকা ধার নিতো। চাখোর, পানখোর মানুষ আগে যেমন ছিলো এখনো তেমনি রয়েছে। তবে ‘করোনা’ আতঙ্কে এখন ‘আদা চা’ খোর মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। ইচ্ছে করলে আমরা খোর কথাটা বহু বিচিত্র ভাবে ব্যবহার করতে পারি। যারা সব সময় বই পড়েন তাদের আমরা বলি ‘বুকওয়ার্ম’ বা গ্রন্থকীট। এদের বলা যায় বইখোর। আমি এক সময় বইখোর ছিলাম। ডিটেকটিভ বই পড়বার সময় খাওয়া নাওয়া ভুলে যেতাম। শশধর দত্তের দস্যু মোহন ছিলো আমার প্রিয় বই। বইয়ের দোকানে পাওয়া যেতো মোহনকে নিয়ে আরো অনেক বই। এসব জোগাড় করে আমি পড়তাম। নিজেকে সব সময় দস্যু মোহন ভাবতাম। আমি হয়ে উঠেছিলাম মোহনখোর পাঠক। পরিচিতজনদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন টিভিখোর।
সব খোরদের এখন টেক্কা দিয়ে এগিয়ে চলেছে ফেসবুকখোররা। রয়েছে অনেক ফটোখোরও। এরা সুযোগ পেলেই স্মার্ট ফোনে ফটো তুলে রাখে। বাচ্চারা হচ্ছে গেইমখোর। কেউ আমরা পিছিয়ে নেই। কিছু মানুষ রয়েছেন যারা প্রেমখোর। এরা দেখতে সুন্দর না হলেও সুন্দরীরা এদের প্রেমে পড়ে যায়। কেন পড়ে বুঝতে পারিনা। মনে হয় এদের মধ্যে সুন্দরীদের মন জয় করবার বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। পাকিস্তানি আমলে অনেক সিগারেটখোর মানুষ ছিলেন যারা দিনভর সিগারেট টানতেন। যারা সিগারেট খেতেন না তাদের মনে করা হতো ব্যক্তিত্বহীন মানুষ। সেকালে অভিজাত মানুষরা গড়গড়ি হুঁকোর লম্বা নলে এমন ভাবে হুঁকো টানতেন দেখে মনে হতো এরা নবাব বাদশাহ্‌। হুঁকো হারিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে এই হুঁকোখোররাও হারিয়ে গেছেন। এক সময় আমরা খুব সিনেমা দেখতাম। তখন দেশে অনেক সিনেমাখোর মানুষ ছিলো। একবার এক ভিখেরি আমার কাছ হতে টাকা চেয়েছিলো সিনেমা দেখবার জন্যে। কিন্তু মাদকখোররা করে টাকা ছিনতাই। খোরদের গল্প শুনতে ভালো লাগলেও খোর হওয়া ভালো নয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমেয়রের সাথে মালদ্বীপ হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ
পরবর্তী নিবন্ধসুনীতি ভূষণ কানুনগো’র প্রবজ্যা