খোঁচা দিলে আওয়ামী লীগ জ্বলে উঠবে

শান্তি সমাবেশে বিএনপিকে তথ্যমন্ত্রী

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৫৪ পূর্বাহ্ণ

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি আওয়ামী লীগকে বারবার খোঁচা দিচ্ছে। তাদের জানা উচিত ম্যাচে খোঁচা দিলে আগুন জ্বলে ওঠে। একইভাবে আওয়ামী লীগকে খোঁচা দিলেও আওয়ামী লীগ জ্বলে উঠবে। আওয়ামী লীগ রাজপথের দল। জনগণের শান্তির জন্য এবং তাদের জানমাল রক্ষায় আওয়ামী লীগ রাজপথে নেমেছে এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথেই থাকবে। গতকাল বিকালে নগরীর আন্দরকিল্লা চত্বরে দেশব্যাপী সন্ত্রাস, অরাজকতা ও নাশকতা সৃষ্টির অপচেষ্টার প্রতিবাদে জনগণের জানমাল রক্ষায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, সারা দেশে অরাজকতা সৃষ্টির অংশ হিসেবে বিএনপিজামায়াত ও স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে সাথে নিয়ে আটটি বিভাগীয় শহরে যে কর্মসূচি পালন করছে তার মূল উদ্দেশ্য হলো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা। তারা চায় সংবিধানসম্মতভাবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন না হয়ে তাদের পছন্দ মতো ব্যবস্থা অনুযায়ী নির্বাচন হোক, যাতে তারা ক্ষমতায় যেতে পারে। এর আগে বিএনপি বলেছিল, ১০ ডিসেম্বরের পর আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায় হবে। ওইদিন থেকে খালেদা জিয়ার কথায় দেশ চলবে। তারেক জিয়া ঢাকায় ফিরবেন। কিন্তু কই? আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে। খালেদা জিয়ার নির্দেশে দেশ চলছে না, তারেক জিয়াও দেশে ফিরতে সাহস করছে না। তারা সেদিন ১০ লক্ষ মানুষের সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছিল। আমরা বলেছিলাম ১০ লক্ষ কেন, আরো বেশি মানুষের সমাবেশ করুন। আমরা তাদেরকে বলেছিলাম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার মাঠ বা বিশ্ব ইজতেমা মাঠ, এমনকি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করা হোক। কিন্তু বিএনপি জেদ ধরেছিল নয়াপল্টনে রাস্তার উপর মহাসমাবেশ করবে। নয়াপল্টনে বিএনপি অফিসের সামনে সমাবেশ হলে ৩০ হাজার মানুষের সমাগম সম্ভব। শেষ পর্যন্ত তারা গোলাপবাগের গরুর মাঠে সমাবেশ করল। ওখানে বড়জোর ২৫ হাজার মানুষের সমাগম সম্ভব। তবুও ধরে নিলাম ৪৫ হাজার মানুষের সমাবেশ হয়েছে। এতেই কি তারা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে ধাক্কা দিতে পেরেছে?

হাছান মাহমুদ বলেন, জনগণ জানে, ওইদিন বিএনপির অফিস তল্লাশি করে কয়েকশত বোমা, কয়েক লক্ষ পানির বোতল এবং বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্র পাওয়া গিয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল ১০ ডিসেম্বর ঢাকা নগরীকে অচল করে দিয়ে নাশকতার জোয়ারে ভাসিয়ে দেওয়া। এখন বলতে ইচ্ছে হয়, বিএনপি বড় বড় কর্মসূচি দিয়ে এবং বড় বড় সমাবেশের ঘোষণা দিয়ে আসলে ঘোড়ার ডিম পেড়েছে। বিশৃঙ্খলা করতে গিয়ে তাদের কোমর ভেঙে গেছে। এখন দেখুন, মির্জা ফখরুল ইসলাম ও মির্জা আব্বাস জেল খেটে এসে এখন লাইনে এসেছেন। তারা এখন বলছেন, আওয়ামী লীগকে এখন ধাক্কা দেবেন না, আন্দোলন চালাবেন। তবে কিসের আন্দোলন তাও তারা জানেন না। তারা বলছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা জাতীয় সরকারের অধীন ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাবেন না। পৃথিবীতে শুধু একমাত্র পাকিস্তান ছাড়া আর কোথাও জাতীয় নির্বাচন হয় না। এমনকি আফ্রিকাতেও নয়। বাংলাদেশে নির্বাচন হবে গণতান্ত্রিক বিশ্বের সাংবিধানিক ধারায়। যেভাবে নির্বাচন হয় ঠিক সেভাবেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালে বিএনপি একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু আসন পেয়েছিল মাত্র ২৯টি। ২০১৪ সালে তারা নির্বাচনের ট্রেন মিস করেছে। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ডানবামতালেবানদের সাথে নিয়ে মাত্র ৬টি আসন পেয়েছিল। তাদের অভিজ্ঞতা বলে নির্বাচন বৈতরণী পার হওয়ার মতো ক্ষমতা তাদের নেই। তারা এটাও জানে, বেগম জিয়া ও তারেক জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন না। সুতরাং ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য অবৈধ পথ ছাড়া আর কোনো সোজা পথ নেই।

সভাপতির বক্তব্যে মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী বলেন, যতদিন শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকবেন ততদিন বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে থাকবে। বাংলাদেশ কখনো শ্রীলঙ্কা হবে না, সোমালিয়া হবে না। বাংলাদেশ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার উদিত সূর্য। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অনেক কঠিন সময় অতিক্রম করেছে। ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ ছিল, আছে এবং থাকবে। ক্ষমতা হারিয়ে আওয়ামী লীগ কখনো শেষ হয়ে যায়নি। কারণ আওয়ামী লীগের জন্ম জনগণের অধিকার আদায়ের লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে।

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, বিএনপি একাধিকবার ক্ষমতায় এসেছে। বিএনপির ক্ষমতার উৎস জনগণ নয়, ক্যান্টনমেন্ট। তারা তাদের স্বার্থে সংবিধানকে কাঁটাছেড়া করেছে।

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, দণ্ডিত পলাতক আসামি তারেক জিয়া একজন বেকার হয়েও লন্ডনে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন। তার বৈধ আয়ের কোনো উৎস নেই। চাঁদাবাজিসহ বিভিন্নভাবে অবৈধ উপার্জনের মধ্য দিয়ে তিনি রাজসুখে আছেন এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বুনছেন।

মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনীর সঞ্চালনায় শান্তি সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নঈম উদ্দীন আহমেদ চৌধুরী, অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, খোরশেদ আলম সুজন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বদিউল আলম, আবদুচ ছালাম, নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, চন্দন ধর, মো. হোসেন, আব্দুল আহাদ, মো. আবু তাহের, সাইফুদ্দীন খালেদ বাহার, আব্দুল লতিফ টিপু, রোটারিয়ান মো. ইলিয়াছ প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট সুনীল কুমার সরকার, সফর আলী, শেখ মো. ইসহাক, মশিউর রহমান চৌধুরী ও দিদারুল আলম চৌধুরী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘সংসদ নির্বাচনের তফসিল নভেম্বরে’
পরবর্তী নিবন্ধকাস্টমস কর্মকর্তার কক্ষের তালা ভেঙে নথি চুরির চেষ্টা