খালে দেয়া বাঁধ মে মাসেও কেন অপসারণ হয়নি, প্রশ্ন মেয়রের

মালয়েশিয়া থেকে আজাদীর সঙ্গে একান্ত আলাপ

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৩ মে, ২০২২ at ৫:৩১ পূর্বাহ্ণ

জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের কাজের সুবিধার্থে বিভিন্ন খালে দেয়া বাঁধ অপসারণ না করায় অল্প বৃষ্টিতেও গত শনিবার নগরে জলাবদ্ধতা হয়েছে বলে মনে করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এ সব বাঁধ গত এপ্রিল মাসে অপসারণের কথা ছিল। কিন্তু মে মাসেও কেন অপসারণ করা হয়নি সে প্রশ্ন তুলেন তিনি।

মেয়র বলেন, মেগা প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন কাজের সুবিধার্থে শহরের বিভিন্ন খালে যে সব বাঁধ দেয়া হয়েছে সেগুলো এপ্রিল মাসের শেষে অপসারণ করার কথা ছিল। কিন্তু মে মাস প্রায় শেষ হতে চললেও অনেক খালে বাঁধ রয়ে গেছে। অনেক খালে এখনো মাটি আছে। বাঁধগুলো অপসারণ না করার কারণে পানি যেতে পারেনি। খালে মাটি এবং বাঁধ থাকলে পানি কীভাবে যাবে? স্বাভাবিকভাবেই পানি আটকে ছিল। এতে জলাবদ্ধতা হয়েছে। মানুষের দুর্ভোগ হয়েছে।
মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত সিটি মেয়র গতকাল সন্ধ্যায় মুঠোফোনে দৈনিক আজাদীর সঙ্গে একান্ত আলাপে এ সব কথা বলেন। তিনি বলেন, বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। সামনে আরো ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ অবস্থায় খালে বাঁধ থাকতে পারবে না। সেগুলো কেটে দিতে হবে। মাটি তুলে ফেলতে হবে। পানি চলাচলের পথ করে দিতে হবে। ব্যক্তিগত সফরে ১৫ দিনের জন্য গত ১০ মে মালয়েশিয়া যান রেজাউল করিম চৌধুরী। আগামী ২৫ মে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। দেশে ফিরেই সিডিএসহ সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থাগুলোর সঙ্গে জলাবদ্ধতা ইস্যুতে সমন্বয় সভা আহ্বান করবেন বলেও জানান তিনি। বলেন, এর আগেও সমন্বয় সভা করেছিলাম। সেখানে বাঁধ কেটে দেয়া এবং মাটি তুলে ফেলা হবে বলে জানিয়েছিলেন প্রকল্প পরিচালক। এখন পরবর্তী সমন্বয় সভায় আমরা জানতে চাইবো বাঁধ অপসারণ এবং মাটি উত্তোলনের অগ্রগতি কতটুকু হয়েছে।

তিনি বলেন, আগে যে সমন্বয় সভা হয়েছে সেখানেও আলোচনা হয়েছে, কাজের স্বার্থে খাল ভরাট করে রাস্তা করা হয়। কিন্তু পানি যাওয়ার যে স্পেস রাখা হয়েছে সেটা সংকীর্ণ। অনেক জায়গায় একেবারে ভরাট করা হয়। ফলে পানি যেতে পারে না। এতে জলাবদ্ধতা হচ্ছে। কিন্তু মানুষ সিটি কর্পোরেশনের সমালোচনা করে।
প্রসঙ্গত, গত ৯ জানুয়ারি নগর চসিকের টাইগারপাসস্থ অস্থায়ী কার্যালয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন সংক্রান্ত অগ্রগতি পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। অতিথি ছিলেন সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ। ওই সভায় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী বলেন, ‘অনেক খালের দুই পাশে জায়গা নাই। স্থাপনা হয়েছে। স্কেভেটর নেয়া যায় না। তাই রাস্তা তৈরি করে আমাদের কাজ করতে হয়। এপ্রিলের মধ্যে ১৮-২০ টি খালে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ শেষ হবে। এরপর বাঁধগুলো অপসারণ করে ফেলব। বলতে পারি এপ্রিলের পর খালে মাটি থাকবে না।’

মেগা প্রকল্পের আওতাবহির্ভূত খাল-নালাগুলো সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব উদ্যোগে গত কয়েক মাস ধরে পরিষ্কার করা হচ্ছে বলেও জানান মেয়র। তিনি বলেন, আমাদের অধীনে যে সব খাল-নালা আছে সেগুলোতে আমরা নিয়মিত পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছি। খাল-নালার তালিকা করে আবর্জনা ও মাটি উত্তোলন করছি। প্রতিদিন সাতটি ওয়ার্ডে সাতটি স্কেভেটর দিয়ে কাজ চলছে। এর বাইরে লং বুম দিয়ে মাটি তোলা হচ্ছে। দেশের বাইরে থাকলেও বিষয়গুলো নিয়মিত মনিটরিং করছি। যেমন আজকেও (গতকাল) জালালাবাদ ওয়ার্ডের শেরশাহ গণপূর্ত বিভাগের স্টাফ কোয়ার্টারের পাশে বড় নালা, পাঠানটুলীর লাল মিয়া ছড়া, সুপারিওয়ালাপাড়ার নাসির খাল, শুলকবহরের আবদুল লতিফ রোডের বড় নালা থেকে মাটি ও ময়লা আবর্জনা অপসারণ করা হয়।

মেয়র বলেন, সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে ২ নম্বর ওয়ার্ডে গত তিনদিন ধরে, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ১৫-২০ দিন ধরে, ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে চার দিন ধরে, ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে ১৭দিন ধরে, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে ১৪ দিন ধরে, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ছয়-সাত দিন ধরে, ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ১২ দিন ধরে মেগা প্রকল্পের বাইরে থাকা খাল-নালা পরিষ্কার কাজ করছি। নগরবাসীর দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে অনেক সময় মেগা প্রকল্পভুক্ত খাল থেকেও মাটি তোলা হচ্ছে। ১১ নম্বর ওয়ার্ডে লং বুম দিয়ে এক মাস ধরে মাটি তোলা হচ্ছে। এর আগে বাগমনিরাম, চকবাজার, জামালখান এবং বাকলিয়া ওয়ার্ডেও খাল পরিষ্কার করেছি।

মেয়র বলেন, জলাবদ্ধতা যেন না হয় তার জন্য আমাদের অবস্থান থেকে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখন মেগা প্রকল্পভুক্ত খালগুলো যদি পরিষ্কার থাকে তাহলে পানি দ্রুত নেমে যাবে। মনে রাখতে হবে বর্ষায় পানি উঠবে, কিন্তু নিষ্কাশনের পথ পরিষ্কার রাখতে হবে। তাতেই জলাবদ্ধতা সহনীয় হবে।

জলাবদ্ধতা নিরসনের ক্ষেত্রে নগরবাসীরও সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন মেয়র। তিনি বলেন, অনেক খাল আমরা পরিষ্কার করার কিছুদিন পর আবার ভরাট হয়ে যায়। সেখানে দেখা যায় পলিথিন এবং গৃহস্থলী পণ্য জমে আছে। এক্ষেত্রে মানুষ যদি একটু সচেতন হয়, খালে যদি ময়লা না ফেলে তাহলে খালগুলো তো দ্রুত ভরাট হওয়ার কথা না। ডোর টু ডোর ময়লা সংগ্রহ করা হচ্ছে, নির্দিষ্ট জায়গায় ডাস্টবিন আছে। এরপরও কেন খালে ময়লা ফেলতে হবে।

তিনি বলেন, পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার করে ফেলে দেয়া হয়। এসব পলিথিনের কারণে ড্রেন, নালা-নর্দমা, খাল, ডোবা ইত্যাদি ভরাট হয়ে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। এ জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য পলিথিনের ব্যবহার রোধ করতেই হবে। সে জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি। বাজারে পলিথিনের ব্যবহার রোধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি আমরা। এর আগে ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করে তাদের সচেতন করেছি। তাদের সময়ও দিয়েছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজামিন নয়, নর্থ সাউথের চার ট্রাস্টিকে পুলিশে দিল হাই কোর্ট
পরবর্তী নিবন্ধশিক্ষকের বেত্রাঘাতে শিক্ষার্থী রক্তাক্ত