খালেদাকে বিদেশ নিতে পরিবারের আবেদন

ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে সরকার : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

আজাদী ডেস্ক | বৃহস্পতিবার , ৬ মে, ২০২১ at ৫:০৪ পূর্বাহ্ণ

অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও শ্বাসকষ্টে ভোগা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে সরকারের কাছে আবেদন করেছে তার পরিবার। এই আবেদন নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমন্ডির বাড়িতে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন। এই সাক্ষাতের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে তার পরিবারের পক্ষ থেকে যে আবেদন করা হয়েছে সেটা খুঁটিয়ে না দেখলেও সরকার ইতিবাচক দৃষ্টিতে তা দেখছে। আবেদনটি পরীক্ষার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।
এর আগে গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে এভার কেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড সর্বশেষ অবস্থা পর্যালোচনা করে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার সুপারিশ করে। এরপরই পরিবারের সদস্যরা একমত হয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এই বিষয়ে লিখিত আবেদন করেন। পরিবারের পক্ষে শামীম এস্কান্দারের স্বাক্ষরে এই আবেদনটি করা হয়।
বিকালে চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন খালেদা জিয়া অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। চিকিৎসকদের মতে, এটি করোনা পরবর্তী জটিলতা। দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার ফুসফুস থেকে তরলজাতীয় পদার্থ (ফ্লুইড) অপসারণ করা হয়েছে। তাঁর ডায়াবেটিস পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। এর মাত্রা ওঠানামা করছে। এছাড়া অঙিজেনের মাত্রাও কিছুটা কমেছে।
সূত্র জানায়, করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা সেরে ওঠার পর এ ধরনের কিছু জটিলতায় ভোগেন। তবে খালেদা জিয়ার বয়স হয়েছে। এ কারণে চিকিৎসকরা বিষয়টি নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। ফুসফুস থেকে যে তিন ব্যাগ ফ্লুইড বের করা হয়েছে, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। সেখানে অন্য কোনো রোগের জীবাণু পাওয়া যায়নি।
ওই সূত্র বলছে, চিকিৎসকরা বলেছেন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে সেরে ওঠা কমবয়সীদের ক্ষেত্রে এই জটিলতাগুলো তেমন কিছু নয়। যেহেতু খালেদা জিয়ার বয়স ৭৬, তাই জটিলতাগুলো দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করছেন চিকিৎসকরা। কিছু নতুন ওষুধও দেওয়া হচ্ছে।
খালেদা জিয়ার এক ব্যক্তিগত চিকিৎসক বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে পরিবারকে জানানো হয়েছে। দলকে জানানো হয়েছে। আপাতত হাসপাতালে রেখেই তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হবে। খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে এই চিকিৎসক বলেন, করোনায় যারা আক্রান্ত হয়েছেন, সেরে ওঠার পর তারা কমবেশি সবাই কিছু না কিছু জটিলতায় ভুগেছেন বা ভোগেন। খালেদা জিয়ারও সেটিই হয়েছে। তাঁর বয়স হয়েছে। আগে থেকেই বেশ কিছু অসুস্থতা রয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, এখন পর্যন্ত শারীরিক যে অবস্থা, তাতে আমরা আশা করছি, তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।
খালেদা জিয়া এখনো কোনো পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ হননি। তাহলে করোনা পরবর্তী জটিলতা কিভাবে? এই প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের এক সদস্য বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে করোনা আক্রান্ত কোনো রোগীর আক্রান্তের ১০ দিন পর যদি কোনো উপসর্গ না থাকে, তাহলে তার শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নেই বলেই ধরে নেওয়া যায়। তিনি বলেন, করোনার দুই ধরনের উপসর্গ আছে। করোনাকালীন উপসর্গ ও করোনা পরবর্তী উপসর্গ। খালেদা জিয়ার এখন যে ধরনের উপসর্গ তা করোনা পরবর্তী উপসর্গ।
গতকাল তাঁর অপর এক চিকিৎসক বলেন, অঙিজেন দেওয়ার পাশাপাশি স্বাভাবিকভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে পারছেন খালেদা জিয়া। তবে সে ক্ষেত্রে অঙিজেনের মাত্রা কখনো কখনো ৯০ বা তার নিচে নেমে যায়। অঙিজেন দিলে এর মাত্রা ৯৯ পর্যন্ত থাকে। দিনে তাঁকে দুই থেকে চার লিটার পর্যন্ত অঙিজেন দেওয়া হচ্ছে। কয়েক দিন যদি এটি অব্যাহত থাকে, সে ক্ষেত্রে অল্প কয়েক দিনের মধ্যে শ্বাসকষ্ট থাকবে না বলেই তাঁরা আশা করছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলেনদেনের সময় বাড়ল আরো এক ঘণ্টা
পরবর্তী নিবন্ধগ্রামে বাসা-বাড়ি করতে অনুমতি নিতে হবে ইউপি থেকে