খাদ্যশস্য লাইসেন্সের আওতায় আসেনি অধিকাংশ ব্যবসায়ী

প্রজ্ঞাপন জারির ১০ বছর জানা যাচ্ছে না মজুদের পরিমাণ

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২০ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:২৯ পূর্বাহ্ণ

সরকারি প্রজ্ঞাপন জারির প্রায় ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও ফুড গ্রেইন (খাদ্যশস্য) লাইসেন্সের আওতায় আসেনি অধিকাংশ ব্যবসায়ী। ধান ও চালের বাজারে অবৈধ মজুদদারি ঠেকানো এবং মজুদের হিসাবে স্বচ্ছতা আনতে ফুড গ্রেইন লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করে সরকার। এখন লাইসেন্সের আওতায় না আসায় কোন ব্যবসায়ীর কাছে কী পরিমাণ ধান-চালের মজুদ আছে তা জানতে পারছে না জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়।
নিয়ম মতে, সকল ব্যবসায়ী ফুড লাইসেন্স নিয়ে প্রতি মাসে খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে ধান-চালের মজুদের হিসাব দিতে বাধ্য থাকবেন। তবে খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ফুড লাইসেন্স নিতে বিভিন্ন সময় ব্যবসায়ীদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে লাইসেন্স নিতে এখন কোনো ধরনের বলপ্রয়োগ করা হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বড় বড় ব্যবসায়ীরা ফুড গ্রেইন লাইসেন্সের আওতায় এসেছেন। তবে গত এক বছর ধরে খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের নীরবতার সুযোগে অনেকে এখন লাইসেন্স নেয়া কিংবা নবায়ন করছেন না।
খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৫৬ সালের কন্ট্রোল অব এসেনসিয়াল কমোডিটিস অ্যাক্ট অনুসারে ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স নেয়া বাধ্যতামূলক। মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু হওয়ার প্রেক্ষাপটে তৎকালীন সরকার ১৯৮৯ সালে খাদ্যশস্য মজুদের পরিমাণ ও ব্যবসায়ীদের মজুদ সংক্রান্ত এসআরও বাতিল করে। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার খাদ্যশস্যের ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে লাইসেন্সের প্রয়োজন নেই মর্মে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এরপর থেকে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের ওপর সরকার কার্যত নিয়ন্ত্রণ হারায়।
পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম নিজাম উদ্দিন বলেন, অনেক ব্যবসায়ী ফুড গ্রেইন লাইসেন্স নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এক বছর আগে খাদ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স নিতে তাগাদা দেয়া হয়। এরপর করোনা চলে আসে। সরকার বিষয়টিতে খুব বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। না হলে তো এত বছর লাগার কথা না। তবে সবার কাছে এই লাইসেন্সটি থাকলে কার আড়ত ও গুদামে কী পরিমাণ চাল রয়েছে, তার হিসাব সরকারের কাছে থাকত।
চট্টগ্রাম রাইচ মিলস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রফিক উল্লাহ বলেন, আমার জানা মতে, আমাদের সমিতির অধীনে ৬০ শতাংশ ব্যবসায়ী ফুড গ্রেইন লাইসেন্সের আওতায় এসেছে। এছাড়া অনেক চালের আড়তদারের কাছেও এই লাইসেন্স আছে।
চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবু নঈম মোহাম্মদ সফিউল আলম আজাদীকে বলেন, ফুড গ্রেইন লাইসেন্স নেয়ার জন্য আমরা অনেকবার ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করেছি। চিঠি দিয়েছি এবং বৈঠকও করেছি। এই মুহূর্তে হার্ডলাইনে গিয়ে অভিযান চালানোর মতো নির্দেশনা পাইনি। ব্যবসায়ীদের বুঝিয়ে লাইসেন্সের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। হার্ডলাইনে যাওয়ার নির্দেশনা পেলে সেভাবে কাজ করব।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৪ মে গেজেট জারি করে কী পরিমাণ খাদ্যশস্য কতদিন মজুদ রাখা যাবে তা নির্ধারণ করে দেয় খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। গেজেট অনুযায়ী, লাইসেন্স ছাড়া কোনো ব্যবসায়ী এক টনের বেশি খাদ্যশস্য বা খাদ্যসামগ্রী মজুদ রাখতে পারবেন না। এছাড়া আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী এবং চাল কলের মালিকরা সরকার নির্ধারিত হারে ধান ও চাল নির্ধারিত সময়ের জন্য মজুদ করতে পারবেন। অটোমেটিক, হাসকিং ও মেজর চাল কলের মালিকরা তাদের পাক্ষিক ছাঁটাই ক্ষমতার পাঁচ গুণ ধান ৩০ দিনের জন্য মজুদ করতে পারবেন। অটোমেটিক ও মেজর চাল কলের মালিকরা পাক্ষিক ছাঁটাই ক্ষমতার দুই গুণ চাল এবং হাসকিং চাল কলের মালিকরা সর্বোচ্চ ১০০ মেট্রিক টন চাল ১৫ দিন পর্যন্ত মজুদ রাখতে পারবেন। পাইকারি বিক্রেতারা সর্বোচ্চ ৩০০ টন ধান বা চাল ৩০ দিন মজুদ রাখতে পারবেন। অন্যদিকে খুচরা বিক্রেতারা ১৫ দিনের জন্য সর্বোচ্চ ১৫ টন এবং আমদানিকারকরা আমদানিকৃত ধান বা চালের সবটুকু ৩০ দিন পর্যন্ত মজুদ করতে পারবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধবেইলি ব্রিজের তিনটি পাটাতনে ফাটল